কবি সাহিত্যিকদের স্মৃতিতে ভাস্বর হাসানুল কাদির
স্বপ্নচারী মানুষ ছিলেন সাংবাদিক হাসানুল কাদির। এ প্রজন্ম তাকে হয়তো চিনবে না। কিন্তু শূন্যদশকের তারুণ্যের কাছে এ হাসানুল কাদির একজন হিরো ছিলেন। আজ তিনি নেই। চলে গেছেন পরপারে। অনেকে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন। এখানে কয়েকজনের স্মৃতিপাঠ উল্লেখ করা হলো-
রুহুর আমীন সাদী : কথাসাহিত্যিক ও রাজনীতিক রুহুর আমীন সাদী লিখেছেন, প্রিয় ভাই ও বন্ধু সাংবাদিক হাসানুল কাদির ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আমি মিশর যাওয়ার আগের দিন সম্ভবত সর্বশেষ আমার সাথে কথা হয়েছিলো ফোনে। বলেছিলেন ফোনে। বলেছিলেন, খুবই অসুস্থ । ঢাকায় এসেছিলেন, কিন্তু ফিরে যেতে চান বাড়িতে। আমি বললাম, চলে যান।
হাসানুল কাদির অসুস্থ ছিলেন দীর্ঘদিন। মানসিক অসুস্থতা ছিলো সবচেয়ে বেশি। শীতকালে সেটা বেড়ে যেত।
ক বছর আগে একদিন পল্টনে তার ছেলেকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, মারা গেলে আমার ছেলেটির দিকে নজর রাইখেন।
বেচারা ঢাকায় এলে আমাকে কল করতেন। মাঝেমধ্যে প্রথম আলোর সাংবাদিক সেলিম জাহিদ ভাইয়ের ফোন নাম্বার চাইতেন আমার কাছে। আমি দিতাম।তারপর ভুলে যেতেন। আবার চাইতেন।
হাসানুল কাদির ভাইয়ের লাইফস্টাইলই ছিলো ভিন্নরকম। অনেক বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন- যা আদৌ অসম্ভব। আল্লাহ আমাদের হাসানুল কাদির ভাইকে ক্ষমা করুন এবং জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।
হুমায়ুন আইয়ুব : আমরা তখন শীলন বাংলাদেশ করি। শিল্প সাহিত্যের আন্দোলন সময় কাটে। সাহিত্য সভা, পাঠচক্র ইত্যাদি আয়োজনে নিয়মিত অংশ নিই। রামপুরার আল কাওসার হলে শীলনের সাহিত্য সভা চলছে। গুণীজন এসেছেন। কথা বলছেন। মাসউদুল কাদির ভাই বলেলেন- তুমি গেইটে যাও। সাংবাদিক হাসানুল কাদির আসবেন। আমি অপেক্ষা করছি। হাসানুল কাদিরের নাম নানা কারণেই শুনেছি। দেখা হয়নি কখনো। তিনি আসলেন। দেখলাম। এটাই তার সঙ্গে আমার প্রথম লেখা।
জামাকাপড় আর পোশাক -আশাক দেখে আমি তো অবাক। এর পরে আরো বহুবার দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে। একই এলাকা কিশোরগঞ্জের মানুষ আমরা।
গতকাল তার চলে যাওয়ায় আমি শোকাহত। আল্লাহ তায়ালা তাকে মাফ করে দিন। আমিন
আলী হাসান তৈয়ব : আননোন নাম্বার থেকে ফোন : আলী হাসান আঙ্কেল বলছেন?
বললাম, হ্যাঁ।
ওপাশ থেকে বলল, আমি হাসানুল কাদিরের ছেলে যাকওয়ান বলছি, আব্বু গতকাল মারা গেছেন!
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। এইটুকু উচ্চারণ করে নির্বাক হয়ে গেলাম।
কালের কণ্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক এবং আমাদের লেখালেখির সেই উচ্ছ্বল তারুণ্যে কওমি অঙ্গনে লেখালেখির একজন উল্লেখযোগ্য উদ্যমী সংগঠক ও তরুণদের পৃষ্ঠপোষক মাওলানা আব্দুল কাদির আল-হাসান প্রকাশ হাসানুল কাদির দীর্ঘদিন মানসিক রোগে ভুগে গতকাল মঙ্গলবার হবিগঞ্জে নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন।
তিনি তিন ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। ভাবী অসম্ভব ধৈর্য নিয়ে দীর্ঘ দেড় যুগ স্বামীর চিকিৎসা করছিলেন। স্বামীর চিকিৎসায় নিজেদের সহায়-সম্বল সব ব্যয় করেছেন। বড় ছেলেটি বাবাকে বাঁচাতে গ্রাজুয়েশন শেষ না করেই চাকরিতে ঢুকে গেছে।
আল্লাহ সুবহানাহু ভাইকে মাগফিরাত দান করুন এবং তার পরিবারের উত্তম অভিভাবক হয়ে যান।
আবদুল গাফফার : 'আবদুল গাফফার ভাই পল্টনে আসলে একটু ফোন দিয়েন'। শেষ এক মাসের মধ্যে এটাই ছিল শেষ কথা। বলছিল, আমার সাথে কিছু কথা আছে, কিন্তু সে কথা আর হলো না।
চলে গেলেন হাসানুর কাদির। সাংবাদিক হাসানুল কাদির।
গেল কয়েক বছর প্রায়ই দেখা হত, কথা হত, নতুন নতুন স্বপ্নের কথা শুনাতেন। তার ইন্তিকালে একটি অধ্যায়ের
পরিসমাপ্তি। আল্লাহ তার ভুলগুলো ক্ষমা করুক।
তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।
মামুন চৌধুরী : না ফেরার দেশে তিনি। নীরবেই চলে গেলেন অসম্ভব প্রতিভাবান লেখক ও সাংবাদিক মাওলানা হাসানুল কাদির ভাই
আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন আমিন
শহীদুল ইসলাম কবির : সাংবাদিক হাসানুল কাদির এর ইন্তেকাল। আলেম সাংবাদিক হাসানুল কাদির গতকাল হবিগঞ্জ এ ঘুমের মধ্যে ইন্তেকাল করেছেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
যানাযায় আজ জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়েছে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার ভুলত্রুটি ক্ষমা করে তাকে
জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।
রিদওয়ানুল বারী সিরাজী : হাসানুল কাদির একজন ভাল লেখক,আলেম বড় মাপের সাংবাদিক ছিল। দেশ নিয়ে খুব ভাবতেন বেকার উলামায়ে কেরাম এর স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করতেন। উলামায়ে কেরামদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন একটি মাল্টিপারপাস কোম্পানি কিছূ দুষ্ট লোকের কারনে সর্বষ শেষ করে ছিলেন।পরে মাথায় সমস্যা হয়েছিল। ফেইসবুকে দেখলা সে আজ মারা গেছে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না লিল্লাহি রাজিউন, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে জান্নাতের আশা মাকাম দান করুন।
এনামুল করীম ইমাম : ভালো থাকবেন হাসানুল কাদির ভাই। সাংবাদিক হাসানুল কাদির কালের কণ্ঠ পত্রিকায় অসাধারণ কিছু অনুসন্ধানী রিপোর্ট করেছিলেন। যা তার অসাধারণ মেধা ও প্রখর স্মৃতিশক্তির প্রমাণ বহন করে। কিন্তু কিছুদিন পরেই হাসানুল কাদির ভাই একটি এনজিও খুলে বসেন। অনেক টাকা মার খেয়ে এক পর্যায়ে পাগল বেশে ঘুরে বেড়াতে থাকেন। শুনেছি, এটা ছিল তার ছদ্মবেশ। কিন্তু এই ছদ্মবেশ থেকে ভাই আর কখনো বেরিয়ে আসতে পারেননি।
আমার লেখা একটি বই কামালুদ্দীন ফারুকী ভাই তাকে হাদিয়া দিয়েছিলেন। একদিন দারুর রাশাদে এসে আমাকে খুঁজে বের করে বললেন, 'এনাম ভাই দু হাতে লিখতে থাকেন। আমি মানুষের প্রশংসা করি না, কিন্তু আপনার প্রশংসা না করে পারলাম না।'
শুনলাম আজ হাসানুল কাদির ভাই ইন্তেকাল করেছেন। কিছু ভুল ত্রুটির মাঝে হাসানুল কাদির ভাইয়ের অনেক ভালো গুণ ছিল। আল্লাহ সেগুলো কবুল করুন। ভালো থাকবেন ভাই। দোয়া রইল।
কাসেম ফারুক : ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। হাসানুল কাদির। আলেম সাংবাদিক। মারা গেছেন। তিনি আমার শিক্ষক। তখন কালের কণ্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক। ফাঁকে সময় পেলে আমাদের ক্লাস নিতেন। খুব কম সময়র জন্য পেয়েছিলাম। তবে তার ক্লাসগুলো এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, স্মৃতিচারণে যদি কখনো আদবের বছরের কথা মনে করি, তবে ভেসে ওঠে হাসানুল কাদির স্যারের মুখখানি।
আস্তে কথা বলার ভেতরেও যে এতো শক্তি থাকে তা জেনেছি স্যারের কাছ থেকেই। স্যার অনেক আগে থেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতেন মাঝেমাঝেই। অনেককেই ভুলে যেতেন। কিন্তু কেন যেন আমাকে ভুলেন নি।
স্যারের ক্লাস করেছি '১১ সালে। এর পরে একাধিকবার দেখা হয়েছে। সর্বশেষ দেখা হয়েছিল গত মাস দুইতিনেক আগে। বাংলাবাজারে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বললেন। আস্তে আস্তে কথা বলেন। আন্তরিকভাবে কথা বলেন।
তিনি এখন বাংলাবাজার নিয়মিত বসেন। আর আমাকে তার ওখানে যাওয়ার কথা বললেন। আমিও যাবো বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। যাওয়া হলো না আর। দুনিয়া থেকে ফেরার এই এক আজব নিয়ম। কোনো বার্তা নেই। নেই আনুষ্ঠানিকতা।
আল্লাহ এই লোকটির যাবতীয় দোষ-ত্রুটি মার্জনা করেন। জান্নাত দান করেন। স্যারের স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ পরিবারের সকলকে সবরে জামিল দান করেন।
সালাহউদ্দিন মাসউদ : ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। দৈনিক যায়যায়দিন, এরপর কালের কণ্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক এবং আমাদের লেখালেখির সেই উচ্ছ্বল তারুণ্যে কওমি অঙ্গনে লেখালেখির একজন উল্লেখযোগ্য উদ্যমী সংগঠক ও তরুণদের পৃষ্ঠপোষক মাওলানা আব্দুল কাদির আল-হাসান প্রকাশ হাসানুল কাদির দীর্ঘদিন মানসিক রোগে ভুগে গতকাল মঙ্গলবার হবিগঞ্জে নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন।
বিগত কয়েকদিন যাবত কেন জানি বারবার মনে মনে তাকে খুঁজছিলাম।
কতদিন এমন গেছে, আমরা বায়তুল মোকাররম মসজিদের সিঁড়িতে বসে গল্প করছি আর এর মাঝেই তিনি একটি রিপোর্টের খসড়া তৈরি করে ফেলছেন।
কত কথা কত স্মৃতি, সব আজ অতীত।
আল্লাহ সুবহানাহু ভাইকে মাগফিরাত দান করুন এবং তার পরিবারের উত্তম অভিভাবক হয়ে যান।
মিসবাহ মনজুর : সাংবাদিক হাসানুল কাদির ভাই ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
অনেক স্মৃতি, অনেক প্রীতি সঞ্চিত আছে হৃদয় ক্যানভাসে।
২০০৮-২০১২ সালের দিকে সিলেটে আসলে আমার বাসায় নির্দ্বিধায় তিনি চলে আসতেন।
সারা রাত জেগে সাহিত্য-সাংবাদিকতা নিয়ে আলোচনা করতাম।
তিনি স্বপ্ন দেখতেন এবং স্বপ্ন দেখাতে জানতেন।
তাঁর সবচে' বড় গুণ ছিলো- অসম্ভব কিছু সম্ভব করার জন্য সামনে অগ্রসর হওয়া।
হাসানুল কাদির ভাই সবচে' বেশি যার সাথে হৃদ খুলে কথা বলতেন; যার কথা সুহৃদের ন্যায় মেনে চলতেন- তিনি হলেন Harun Izhar ভাই।
হাসানুল কাদির ভাইকে নিয়ে বিস্তারিত লেখবো।
আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।
আমিন।
