ক্ষমতাহীন আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কী
একসময়ের প্রতাপশালী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বর্তমানে এক কঠিন রাজনৈতিক বাস্তবতার মুখোমুখি। জনপ্রিয়তার পারদ নিম্নে, নেতৃত্ব সংকটে এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে বিরাজ করছে ঘোর অনিশ্চয়তা। এক দীর্ঘ রাজনৈতিক বিশ্লেষণ থেকে উঠে এসেছে দলটির বর্তমান অবস্থা, ঐতিহাসিক ভুলভ্রান্তি এবং সম্ভাব্য আগামীর চালচিত্র।
আওয়ামী লীগ যতবারই ক্ষমতায় এসেছে, তার পেছনে কোনো না কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বা রাজনৈতিক কৌশল কাজ করেছে। ১৯৭০-এর নির্বাচন, মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৩-এর একতরফা নির্বাচন, এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনের মাধ্যমে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে দলটি ক্ষমতায় এসেছে। বিশেষ করে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলো দলীয় সরকারের অধীনে হওয়ায় এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
দলটির প্রধান দুর্বলতা হিসেবে একক কর্তৃত্ব, স্বেচ্ছাচারী নেতৃত্ব এবং পরিবারতন্ত্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক চর্চার অভাবে দলে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়নি। যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, একদল সুবিধাভোগী দুর্নীতি এবং লুটপাটে জড়িয়ে পড়েছে, যা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। নেত্রী শেখ হাসিনার আবেগনির্ভর সিদ্ধান্ত এবং তাকে চ্যালেঞ্জ করার মতো নেতা না থাকায় দলে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে দলটি ক্ষমতাচ্যুত এবং এর শীর্ষ নেতারা অনেকেই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে দলে ভাঙনের আশঙ্কা করা হচ্ছে, কারণ তার পরিবারের সদস্যরা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এবং তাদের পক্ষে দলের ঐক্য ধরে রাখা অসম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারত বা অন্য কোনো দেশের সহায়তায় সহিংস বা অস্বাভাবিক পন্থায় ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা সফল হবে না। নেতাদের পলাতক মনোভাব এবং দেশে ফিরে আইনি ঝামেলা এড়ানোর প্রবণতা দলকে আরও দুর্বল করছে।
আওয়ামী লীগের উচিত বর্তমান বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে নতুন উদ্যমে দলকে পুনর্গঠিত করা। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে, অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে একটি নতুন রূপরেখা তৈরি করা আবশ্যক। ভারতে বসে হুংকার না দিয়ে, দেশের মাটিতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে হবে। তা না হলে দলটির ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে পারে।
