ভিসির সাথে সেদিনের ঘটনার ব্যাখ্যা দিলেন ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ভিসির মধ্যে সাম্প্রতিক এক বাক্য-বিনিময়কে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বিষয় নিয়ে অনেক নৈতিবাচক আলোচনা -সমালোচনা হয়েছে। এর প্রাসঙ্গিক বিষয়ে ছাত্রদল নেতা মুখ খুলেন যেখানে তিনি বলেন-
মাননীয় শিক্ষকগণ একটি জাতির মেরুদণ্ড তৈরির প্রধান কারিগর। এজন্য যুগে যুগে শিক্ষকগণ সর্বোজন শ্রদ্ধেয় ও সম্মানের। ব্যক্তিগত ভাবে অবনত চিত্তে সব সময় আমি আমার শিক্ষকগণকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করে এসেছি। আমি কখনো কোনোদিন সচেতন মনে কোনো শিক্ষককে অশ্রদ্ধা করে কথা বলিনি। আমি এতটুকুই বলবো কিছু কিছু সময় শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায় করতে গিয়ে অনেক সময় অনেক ভাষায় আমরা শিক্ষকদের সাথে কথা বলেছি। আপনি জানেন প্রতিবাদের ভাষা স্থান কাল পাত্র বেধে আলাদা হয়ে থাকে।
তিনি আরো বলেন,
৯ই সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাননীয় ভিসি মহাদয়ের সাথে আমাদের যে বাক্য বিনিময় হয়েছে তা ছিলো একটি উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে, একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে এবং একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে। আমরা বলবো যে, সে অস্বাভাবিক বা উত্তপ্ত পরিস্থিতি কেনো তৈরি হলো? সেই দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসন কর্মকর্তা হিসাবে মাননীয় ভিসি মহাদয় এড়াতে পারেন না। তারপরও আমি এতটুকুই বলবো, সেই বাক্য বিনিময় করার সময় মাননীয় ভিসি মহাদয়ের প্রতি আমার যে সম্মান ছিলো তা বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আমি বিশ্বাস করতে চাই আগামীতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হিসাবে মাননীয় ভিসি মহাদয় তার অতীতের সব ব্যর্থতা নির্মূল করে ভবিষ্যতে একটি সুন্দর আধুনিক গবেষনা মূলক ক্যাম্পাস বিনির্মানে অগ্রণী ভুমিকা পালন করবেন। আমরা তাঁকে সব সময় আমাদের জায়গায় থেকে সহযোগিতা করবো।
ছাত্রদল সভাপতি বলেন,
৫ই আগষ্ট পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আমাদের যে প্রশাসন রয়েছে, সে প্রশাসন প্রতি তো অবশ্যই আস্থার জায়গায় ছিলো। ৫ই আগষ্টের পরবর্তী ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। আমরা ৫ই আগষ্টের পরবর্তী সময়ে সেই ঘটনার যেগুলোর বিষয়ে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছিলাম বিভিন্ন অভিযোগ করেছিলাম সেই অভিযোগ গুলো দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ দেখতে পারিনি। ডাকসুকে কেন্দ্র করে আমরা বিভিন্ন অভিযোগ দিয়েছি। ডাকসুকে অধিকতর ফলপ্রসূ করার জন্য একটু প্রকৃত ডাকসু নির্বাচন জন্য আমরা বার বার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে আমাদের দাবি দেওয়া জানিয়ে এসেছিলাম। এমনকি নির্বাচনের দিনেও আমরা কিছু অনিয়ম ও অনেক অভিযোগ আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বরাবর নির্বাচন কমিশন বরাবর দিয়ে এসেছি। কিন্তু দৃশ্যমান প্রদক্ষেপ না নেওয়ার কারনে আমরা মাননীয় ভিসি মহাদয়ের কাছে গিয়েছিলামযে, কেন এসব ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? তখন ভিসি মহাদয়ের সাথে আমাদের একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এটা তো ছিলো ভোটের মাঠ। আর সেদিন তো আসলে কোনো শ্রেণীকক্ষ ছিলো না। পাঠদান কক্ষ ছিলো না। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহাদয় যেমন নির্বাচন পরিচালনা করার কাজে লিপ্ত ছিলেন, ঠিক একই সাথে আমরা নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছি। নির্বাচনে যখন আমরা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দেখেছি, আমাদের জায়গায় থেকে আমরা তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি। তিনি তাঁর জায়গা থেকে কথা বলার চেষ্টা করেছে। দুই পক্ষের মধ্যে কথা বলার এক পর্যায়ে যেমন উত্তেজিত ভাবে কথা বলেছেন এবং অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেছেন, আমরাও আমাদের জায়গায় থেকে প্রাসঙ্গিক কথা বলার চেষ্টা করেছি।
এখন বিষয়টা হলো, তিনি তাঁর জায়গায় ঠিক বলে মনে করেন। আমরাও আমাদের জায়গায় ঠিক মনে করি। এটাই হচ্ছে গনতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে হ্যাঁ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহাদয়ের সাথে যে বাক্য বিনিময় হয়েছে সেটা অবশ্যই আমরা সেই পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের দায় রয়েছে। যদি প্রকৃতি ডাকসু নির্বাচনের জন্য প্রথম থেকেই তাঁরা কাজ করতো, হয়তো আমরা তাঁর সাথে এভাবে বাক্য বিনিময়ে জড়াতাম না। আমি সকল পক্ষকে বলবো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনসহ আমরা যারা শিক্ষার্থী আছি, যারা রাজনীতি করি ভবিষ্যতে একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণে একটি সুন্দর আধুনিক ক্যাম্পাস বিনির্মানে সবার ঐকান্তিক চেষ্টা, সবার সহিষ্ণুতা আচরন ছাড়া ভালো গবেষণামূলক বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মান করা সম্ভব নয়। আমি বিশ্বাস করি যে, শিক্ষকদের সাথে আপনি বাক্য বিতন্ডায় ঝড়াবেন না,বিষয়টা ওরইরকম না। বিষয়টা হলো ওই পরিবেশ সৃষ্টি কেনো হলো? কোয়শ্চনটা ওই জায়গায়। শিক্ষক হিসাবে আমরা অবশ্যই মাননীয় ভিসি মহাদয়সহ প্রশাসনে যারা আছেন, তাদের আমরা অবশ্যই শিক্ষক হিসাবে সম্মান করি। একই সাথে তারা যেহেতু প্রসশাসন হিসাবে ছিলেন, সেই প্রশাসনে যদি তাদের কোন ব্যর্থতা থাকে, আমরা ছাত্র সংগঠন হিসাবে অবশ্যই তাদের ব্যর্থতাগুলো আমরা তুলে ধরবো। সেটা একেক সময় একেক ভাষায় ও প্রতিবাদের ভাষা আপনিও জানেন। আমি আগেও বলেছিলাম, স্থান-কাল-পাত্র বেদে আলাদা হয়। একেক জনের কাছে একেক রকম মনে হয়। তারপরও বলছি আমরা সমস্ত ধরণের আলোচনা সমালোচনা গ্রহন করি। সেই আলোচনা সমালোচনা সমন্বয় করে আমরা আমাদের কথা বলার চেষ্টা করি।
তিনি শেষ পর্যায়ে বলেন,
আমি আমার স্কুল ও কলেজ জীবনের সকল শিক্ষকগণকে আমি শ্রদ্ধা ভরে স্বরণ করছি। একই সাথে সারা বাংলাদেশে নীতিবান শিক্ষকদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছি অবনত চিত্তে, তারা যেন আমার জন্য দোয়া করে আশির্বাদ করেন। আমি যাতে ভবিষ্যতে ভালোভাবে সামাজিকভাবে রাজনৈতিক ভাবে অর্থনৈতিক ভাবে সচেতন থেকে বাংলাদেশ বিনির্মানে সামনের থেকে নেতৃত্ব দিতে পারি।
ছাত্রদল নেতা প্রত্যাশা করেন যে, একত্র ভাবে কাজ করলে সুন্দর ও গবেষণা মূলক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।