ধর্মীয় উগ্রতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এনসিপি: অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যয় নাহিদ ইসলামের
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, তাঁর দল ধর্মীয় উগ্রতা বা চরমপন্থাকে কোনোভাবেই সমর্থন করে না। ইসলামবিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেও দলটির অবস্থান কঠোর ও সুস্পষ্ট। তিনি জানান, এনসিপি সেক্যুলারিস্ট কিংবা ধর্মতান্ত্রিক (Theocratic) মতবাদকে আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করে না; বরং ধর্মীয় সহাবস্থান, সম্প্রীতি ও মানবিক দায়বোধের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়াই দলের লক্ষ্য।
সোমবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘কয়েকটি বিষয়ে এনসিপি’র দৃষ্টিভঙ্গি’ শিরোনামে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন। এতে দলের রাজনৈতিক দর্শন, সামাজিক নীতিমালা এবং ভবিষ্যৎ ভিশন স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন নাহিদ ইসলাম।
পোস্টে তিনি বলেন, এনসিপি তার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাম্য, ইনসাফ ও মানবিক মর্যাদার আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে ভিত্তি করে। দলটি উপনিবেশ ও ব্রাহ্মণ্যবাদবিরোধী ঐতিহাসিক সংগ্রাম—বিশেষ করে হিন্দু, মুসলমান ও দলিত জনগোষ্ঠীর আন্দোলনের ধারাবাহিকতাকেও রাজনৈতিক ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে।
এনসিপি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্ম ইসলাম—তার নৈতিকতা, মানবিকতা এবং বাঙালি মুসলমানের ভাষা ও সংস্কৃতিকে সম্মান জানায়। পাশাপাশি সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ও নাগরিক অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে দলটি।
জাতি, ধর্ম বা গোত্রভিত্তিক পরিচয়ের পরিবর্তে এনসিপি সভ্যতাগত জাতীয় পরিচয় ধারণের পক্ষপাতী। বাঙালির বহুভাষিক ও বহুসাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রত্যয়ও দলটির রয়েছে।
নারীর মর্যাদা ও ক্ষমতায়নকে এনসিপি তার অন্যতম প্রধান নীতিগত অগ্রাধিকার হিসেবে দেখছে। নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, নেতৃত্ব ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। একইসঙ্গে পারিবারিক আইনের আওতায় সম্পত্তিতে নারীর ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করার কথাও জানিয়েছেন দলের আহ্বায়ক।
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদকে বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক ও ভূরাজনৈতিক হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে এনসিপি। এ প্রসঙ্গে দলটি একটি কঠোর রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে।
অর্থনৈতিক খাত নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে একটি নতুন অর্থনৈতিক জোন গঠনের ভিশন রয়েছে এনসিপির। দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন একটি কল্যাণমুখী আর্থ-সামাজিক কাঠামো গড়ার লক্ষ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, জলবায়ু, শ্রম অধিকার ও কর্মসংস্থানের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি।
সবশেষে নাহিদ ইসলাম বলেন, “একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো পুনর্গঠন ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন জরুরি। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠাই এনসিপির প্রধান কর্তব্য।”