সর্বশেষ আন্তর্জাতিক রাজনীতি অর্থনীতি দেশ ভিডিওচিত্র ২

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তার সমর্থকরা। মঙ্গলবার টানা ষষ্ঠ দিনের মতো নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা।

বিক্ষোভকারীরা নগর ভবনের প্রধান গেটে তালা লাগিয়ে দেন এবং সেখানে মঞ্চ নির্মাণ করে দিনভর অবস্থান করেন। তাদের এই কর্মসূচির ফলে ডিএসসিসির স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। বঙ্গবাজার থেকে গোলাপ শাহ মাজার পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন।

এ আন্দোলনের মধ্যে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগের দাবিও তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা। এ বিষয়ে এক অনুষ্ঠানে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে উপদেষ্টা আসিফ বলেন, “একদিকে মামলাটি বিচারাধীন, অন্যদিকে আইনগত কিছু জটিলতাও সামনে এসেছে। বিষয়গুলো সমাধান না হলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাওয়া যাচ্ছে না।”

আদালতে শুনানি, আদেশের অপেক্ষায় পক্ষগণ

মঙ্গলবার হাইকোর্টে নির্বাচন কমিশনের জারি করা গেজেট স্থগিত চেয়ে দায়ের করা রিটের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ আদেশের জন্য আগামীকাল (২১ মে) দিন ধার্য করেছেন।

রিটকারী পক্ষের আইনজীবীর দাবি, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের আরজি সংশোধন আইনি সময়সীমার বাইরে গিয়ে করা হয়েছে। বিপরীতে, ইশরাকের পক্ষে থাকা আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন অভিযোগ করেন, রিটকারী পক্ষ মূলত আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস ও উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছেন।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বিতর্ক

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বিজয়ী হন। পরবর্তীতে অনিয়মের অভিযোগ এনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। চলতি বছরের ২৭ মার্চ ট্রাইব্যুনাল রায়ে তাপসের বিজয় বাতিল করে ইশরাককে বিজয়ী ঘোষণা করে। নির্বাচন কমিশন ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করলেও এখন পর্যন্ত স্থানীয় সরকার বিভাগ তার শপথের কোনো দিনক্ষণ নির্ধারণ করেনি।

সামাজিক মাধ্যমে ইশরাক হোসেন অভিযোগ করেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু ব্যক্তি নিরপেক্ষতার তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক পক্ষপাত করছেন। এরা যেন অবিলম্বে পদত্যাগ করেন।”
জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, “গায়ের জোরে দাবি আদায়ের জন্যই নগর ভবন দখল করে রাখা হয়েছে।”

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে পরিস্থিতি

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করাই বিএনপির কৌশল হতে পারে। তবে এতে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত দ্রুত পরিবর্তন হবে, এমন সম্ভাবনা কম।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, “এই আন্দোলনের মাধ্যমে শপথ আদায় সম্ভব হবে না। আইন ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া না মেনে এতে সমাধান আসবে না।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা সারজিস আলম মন্তব্য করেন, “যারা ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে, তারাই যদি পক্ষপাতিত্বে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে তা ঐতিহাসিক দায় হয়ে থাকবে।”

সামনে কী?

হাইকোর্টের আদেশ ও সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপই নির্ধারণ করবে সংকটের ভবিষ্যৎ দিক। তবে আন্দোলনকারীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইশরাক হোসেন মেয়র হিসেবে শপথ না নেওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না।

আরও পড়ুন...

জনপ্রিয়

সর্বশেষ খবর