নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আবেদনের সময়সীমা শেষ আজ: ইসিতে জমা পড়েছে ৭০টির বেশি আবেদন
নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করার সময়সীমা আজ, ২২ জুন ২০২৫, রোববার শেষ হচ্ছে। এর আগে, গত ১০ মার্চ ইসি প্রথমবারের মতো নতুন দল নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যেখানে আবেদনের শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০ এপ্রিল। তবে বিভিন্ন দলের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সেই সময়সীমা বাড়িয়ে ২২ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই ৬৫টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। আরও ৪৬টি দল সময় বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছিল। সময় বাড়ানোর পর নতুন করে অনেক দল আবেদন করলেও এখনো পর্যন্ত মোট কতটি আবেদন জমা পড়েছে, তার চূড়ান্ত হিসাব নির্ধারণ করা যায়নি। তবে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৭০টিরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে।
নিবন্ধনের জন্য শর্তাবলি
নিবন্ধিত না হলে কোনো দল দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। এ কারণে নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ করতে হয়। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে—
কার্যালয় সংক্রান্ত শর্ত:
দলের একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে।
অন্তত এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কার্যালয় থাকতে হবে।
ন্যূনতম ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন থানায় অফিস থাকতে হবে।
প্রতিটি অফিসে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে।
গঠনতন্ত্র সংক্রান্ত শর্ত:
কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ে কমিটি নির্বাচনের বিধান থাকতে হবে।
প্রত্যেক কমিটিতে কমপক্ষে ৩৩% নারী সদস্য রাখার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন পরিকল্পনা থাকতে হবে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শ্রমিক বা অন্য পেশাজীবীদের নিয়ে কোনো অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন থাকতে পারবে না।
উল্লেখ্য, গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন এই শর্তাবলি কিছুটা সহজ করার সুপারিশ করলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে পুরনো আইন অনুযায়ীই এই নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চলছে।
আবেদনকারী উল্লেখযোগ্য দলসমূহ
নিবন্ধনের জন্য ইতিমধ্যে যে দলগুলো আবেদন করেছে কিংবা আজ করার কথা রয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামগুলো হলো—
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জনতার কথা বলে, বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি, বাংলাদেশ শান্তির দল, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন, জাতীয় ভূমিহীন পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ, বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি, সংরক্ষণশীল দল (বিসিপি), বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণময় পার্টি, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি (বাজাপা), বাংলাদেশ মুক্তি ঐক্য দল, বাংলাদেশ জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ নাগরিক আন্দোলন পার্টি, বাংলাদেশ জেনারেল পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-শাহজাহান সিরাজ), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি), ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন, বাংলাদেশ জনগণের দল (বাজদ), ফরোয়ার্ড পার্টি, স্বাধীন জনতা পার্টি, আমজনতার দল এবং অহিংস গণআন্দোলন।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আজ ইসিতে আবেদন জমা দেবে বলে জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, দলটি জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের দ্বারা গঠিত।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ
আবেদনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর ইসি কয়েকটি ধাপে নিবন্ধনের কার্যক্রম সম্পন্ন করবে—
প্রাথমিক যাচাই-বাছাই:
জমা পড়া আবেদনপত্রগুলো প্রাথমিকভাবে যাচাই করা হবে। কোনো আবেদন নির্ধারিত শর্তপূরণ না করলে তা বাতিল করা হবে।মাঠপর্যায়ে তদন্ত:
প্রাথমিকভাবে গৃহীত দলগুলোর মাঠপর্যায়ে তদন্ত করা হবে। কার্যালয় বাস্তবেই আছে কি না, সেটি সরেজমিনে যাচাই করা হবে।প্রতিবেদন তৈরি:
মাঠপর্যায়ের যাচাই শেষে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রস্তুত করে নির্বাচন কমিশনের সামনে উপস্থাপন করা হবে।চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও অনুমোদন:
সব ধাপ শেষ হলে যোগ্য দলগুলোর নিবন্ধন চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেবে কমিশন।
পূর্বের রেকর্ড ও বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে ইসির তালিকাভুক্ত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫০টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ৯৩টি দল নিবন্ধনের আবেদন করেছিল, কিন্তু প্রাথমিক যাচাইতেই ৮১টি দল বাদ পড়ে। শেষ পর্যন্ত মাত্র দুটি দল নিবন্ধন পেয়েছিল, যেগুলোও ছিল নামসর্বস্ব।
নির্বাচন কমিশনের সার্বিক প্রস্তুতি
ইসি বর্তমানে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে—
ভোটার তালিকা হালনাগাদ
নির্বাচনী সীমানা পুনর্নির্ধারণ
ভোটকেন্দ্র সংস্কার
নির্বাচনী সামগ্রী সংগ্রহ
দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন
নির্বাচনী আইন সংশোধন
নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ
ইসি সূত্র জানিয়েছে, ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং এটি সম্পন্ন করতে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় রয়েছে কমিশনের হাতে।