সর্বশেষ আন্তর্জাতিক রাজনীতি অর্থনীতি দেশ

শুনুন, তাহলে গল্পটা বলেই ফেলি। সেসময় মাত্র আইপিএল খেলা শুরু হয়। মাদ্রাসায় আমি তখন বেশ জনপ্রিয় একটা জায়গা থেকে সেবার উদ্যোগ নেই টুর্নামেন্টের। সেটাও টি-১০ ই ছিলো। আমাদের খেলার নিয়মের সাথে তো আন্তর্জাতিক মিলে না তবে পরে টি-১০ ও যুক্ত হলো খেলায়।

আইপিএল এর আদলে এপিএল। আল আজীজ প্রিমিয়ার লীগ। তখনও মাদ্রাসায় ছাত্র কাফেলা বা ছাত্র সংসদ হয় নাই। ছাত্রদের উপর একটা অঘোষিত খেলা কেন্দ্রিক নিষেধাজ্ঞা ছিলো। আমরা সকাল সকাল খেলতে যাইতাম ফুটবল নিয়ে। একবারের ঘটনায় ফুটবল অক্কা পায়।

যাইহোক একভাবে টুর্ণামেন্ট ছাড়লাম। বঙ্গবাজার থেকে পাইকারীতে টি-শার্ট কিনলাম নানান কালারের। আকাশি, হলুদ, সাদা ইত্যাদি। লালবাগ গিয়ে টি-শার্টকে জার্সি বানায়ে আনলাম প্রিন্ট করে। তারপর শুরু হলো খেলা। ট্রফি কিনলাম মিরপুর থেকে। ম্যান অব দ্য ম্যাচ থেকে সিরিজ সবই দিলাম। হুবহু নকল করেই বড় একটা কলমের কভার বানালাম গাড়ির চাবির আদলে সেখানে কলম দিলাম বাজেটের মধ্যে। আরও কত কী! সে এক অদ্ভুত আনন্দ!

বিকেল বেলায় একেক দল একেক কালার জার্সিতে খেললো। হুজুররা অনেকে ব্যাপারটা নোটিশ করলেন। যাইহোক একটা পর্যায়ে মনে আছে মাদ্রাসার ছুটির দিন ম্যাচ হলো-

আমাদের বিজ্ঞ উস্তাদগনসহ ছাত্রদের খেলা হলো। সে এক ভিন্ন দৃশ্য ছিলো। যখন খেলার জন্য বিভিন্ন জায়গায় শাস্তি হইতো। সেই খেলা একটা নতুন সূচনাও ছিলো। এক অন্যরকম জেতার গল্প। ছাত্ররা নাম দিয়েছিল- নানক ভাই কেউ কেউ। তখন প্রথম ক্ষমতায় আসে ওয়ান ইলেভেনের পর।

আমি এই ধারাবাহিকতায় একবার উস্তাদে মুহতারাম মুফতি মাহফুজুল হক সাহেবের সাথে ভালো আলাপে নামলাম। এখন তো হুজুর বেফাকের মহাসচিব। আমার সাথে হুজুরের অনেক গল্প হইতো। কেন বিকেলে খেলতে দেওয়া হবে না এ নিয়ে অনেক কথা। হুজুর আমাকে আজও মোহাব্বত করেন আলহামদুলিল্লাহ।

সেকালে সাইবার ক্যাফে ছিলো সব জায়গায়। আর সেখানে নানান কিসিমের নরম গরম অনেক কিছু দেখা যাইতো শোনা যাইতো আর পড়া যাইতো। সেখানে বিকেলে হিড়িক পড়তো। সেই ব্যাপারটা আমি ওপেনলি হুজুরকে বলতে পেরেছিলাম যে রেশিও কিন্তু মাদ্রাসার ছাত্রদের দিকে বেশী যায়। কীভাবে থামাবেন বিকেলে খেলতে না দিলে এই নরমের প্রতি গরম যাত্রা?

মানুষের স্বাভাবিক জীবনের জন্য খেলা দরকার। নইলে অঘটন অনেকভাবেই ঘটে। আপনি বলেন মাদ্রাসায় এতো খারাপ জিনিস কীভাবে ঘটে? আপনি আপনার প্রচণ্ড ক্রেভিং এর সময় তার জন্য মন কাদলে কতক্ষন কসরত করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেন। মাদ্রাসার মানুষরা কি অন্য গ্রহের? তাদের শারীরিক চাহিদার জন্য আয়োজন কি সারাদিন পড়াশোনা? আগে তো জিহাদ ছিল অন্তত ঘোড় সওয়ার করেছেন প্রাচীন উলামারা।

আপনি খেলাইবেন না ঠিক আছে। মাদ্রাসায় জিমের ব্যবস্থা রাখেন অন্তত। শরীরের হক আদায় হোক কিছু!

অনেক কথা খোলাখুলি বলতে না পারায় সরি তবে পেইন এটাই আসলে মাদ্রাসার মানুষরা বাস্তবতা বিবেচনা না করে পালায়ে বাচতে চায় যাতে সমাধান নাই বরং আরও প্যাচ লাগায়।

খেলা দেখার আলাপ আরেকদিন করবো ইনশাআল্লাহ। আপাতত বিসিবিকে এই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার আয়োজনকে স্বাগত জানাই।

মানুষ মনে করতেছে এটা করে তো নষ্ট হইলো। আসলে ১০ অভারে কেউ খেইলা আন্তর্জাতিক কেউ হয়ে উঠবে হবে না এটা পাগলেও বুঝে। আর যার হওয়ার আমার বন্ধু হুসাইনের মতো হবে। পালায়ে আবাহনীতে গিয়ে প্র‍্যাকটিস করতো মিডিয়াম পেস বোলারের। টাকা ধার নিয়ে। সুতরাং আটকাইতে পারবেন না।

আসল কথা হলো - এই ২৪ এর অভ্যুত্থানে মাদ্রাসা ছাত্রদের অবদান অনস্বীকার্য তাই জাতীয় সব জায়গায় তারা এখন প্রাসঙ্গিক। এইটাকে সেলিব্রেট করেন আউল ফাউল আলাপ বাদ দিয়ে।

লেখক : সমাজ গবেষক

আরও পড়ুন...

জনপ্রিয়

সর্বশেষ খবর