সর্বশেষ আন্তর্জাতিক রাজনীতি অর্থনীতি দেশ

দেশী ফল কী? দেশ তো একটাই। বাংলাদেশ। আমরা দেশী বলতে বুঝি-গ্রামীণ ফলফলাদী। অনেকটা এমন যে, তা অর্গানিক হবে। আদতে না-ও হতে পারে। তবে এটা সত্য যে, এখনও অর্গানিক ফল সাধারণ ক্রেতাদের টানে। দোকানিও নানা কায়দায় নিজের মাছ, ফল, মাংস দেশী বুঝাতে যুদ্ধ করেন। রাজধানীর ব্যস্ত মোড়, রাস্তার পাশে কিংবা ফুটপাতে এখন চোখে পড়ছে দেশি ফলের বাহারি রঙের সমারোহ। শীতের আগমনী হাওয়ায় শহরের বিক্রেতারা সাজিয়ে তুলেছেন নানা জাতের ফলের পসরা।

শরতের এই সময়ে বাজারে এসেছে পেয়ারা, জামরুল, কলা, পেঁপে, নারকেল, তেঁতুল, আমলকি, আমড়া, জলপাই, দেশি মল্টা, কমলা, ড্রাগন, আনারস, চালতাসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল। দেশি ফলের এমন প্রাচুর্যে রাজধানীর ক্রেতারা যেমন আনন্দিত, তেমনি স্বাস্থ্যসচেতন মানুষও ঝুঁকছেন স্থানীয় ফলের দিকে।

শুক্রবার যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, পল্টন, রামপুরা থেকে শুরু করে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় ছোট-বড় ফলের দোকান ও অস্থায়ী স্টলে চলছে দেশি ফল বিক্রির ধুম। বিক্রেতাদের বাঁশের টোকরি বা ভ্যানে সাজানো থাকে তাজা ফল।

বাজারে প্রতি কেজি পেঁপে ৭০ থেকে ৯০ টাকা, পেয়ারা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, জলপাই ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ড্রাগন আকার ভেদে ১০০ থেকে ২০০ টাকা, আমড়া ৪০ থেকে ৬০ টাকা, দেশি মাল্টা ৮০ থেকে ১২০ টাকা, দেশি কমলা ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া প্রতিপিস জামরুল ৪০ থেকে ৬০ টাকা, চালতা ১০ থেকে ২০ টাকা, নারকেল ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

গুলিস্তানের ফল বিক্রেতা কালাম হোসেন জানালেন, এখন দেশি ফলের সময়। গ্রামের আত্মীয়রা ফল পাঠায়, আমি শহরে এনে বিক্রি করি। কলা, পেয়ারা, আমলকি—সবকিছুরই ভালো চাহিদা।

বিক্রেতাদের পাশাপাশি ক্রেতারাও সন্তুষ্ট। রমনার বাসিন্দা রেবেকা আক্তার বললেন, বিদেশি ফলের দাম এখন অনেক বেশি, আর দেশি ফল তাজা, পুষ্টিকর ও সস্তা। তাই এখন নিয়মিত দেশি ফলই কিনছি।

ফল ব্যবসায়ীরা জানান, বিদেশি ফলের আমদানিতে খরচ বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষ এখন দেশি ফলের দিকেই ঝুঁকছে। দেশি ফল শুধু দামে কম নয়, এতে রাসায়নিক ব্যবহারের আশঙ্কাও তুলনামূলক কম। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মৌসুমি দেশি ফলে রয়েছে ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফাইবার ও খনিজ পদার্থ, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং মৌসুমি রোগ থেকে রক্ষা করে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে প্রায় ৭০ ধরনের দেশি ফল উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে ২০-২৫ প্রজাতির ফল এখন বাজারে সহজলভ্য। রাজধানীতে সরবরাহ বাড়ায় ফলের দামও ক্রেতার নাগালের মধ্যে রয়েছে।

তবে বিক্রেতারা বলছেন, পরিবহন খরচ ও শহরে স্টল বসানোর জন্য জায়গা ভাড়ার কারণে লাভ তেমন বেশি নয়। তবু দেশি ফল বিক্রি করে সংসারের খরচ চালাতেই তারা খুশি।

ফল বিক্রেতা সেলিম মিয়া বলেন, এই সময়টায় মানুষ দেশি ফল বেশি খায়। বিক্রি ভালো, তাই আমরা সবাই নতুন করে দোকান সাজিয়েছি।

রামপুরা বাজারের ফল বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম স্বাধীনতার বার্তাকে বলেন, মানুষ দেশী ফলকে গুরুত্ব দেয়। একবার বুঝতে পারলে দেশী ফল নেবেই।

শহরের মোড়ে মোড়ে দেশি ফলের এমন রঙিন উপস্থিতি শুধু বাজারের রূপই বদলায়নি, বদল এনেছে নাগরিকদের খাদ্যাভ্যাসেও। বিদেশি ফলের মোহ ছাড়িয়ে এখন ক্রেতারা ফিরে যাচ্ছেন দেশীয় ঐতিহ্যে—স্থানীয় মাটির ফলের গন্ধে, স্বাদে ও পুষ্টিতে।

স্বাধীনতার বার্তা/মায়া

আরও পড়ুন...

জনপ্রিয়

সর্বশেষ খবর