ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে একাট্টা সারাদেশ
একদিকে খুন, অন্যদিকে গুম আর ইসকনীয় ষড়যন্ত্রের নাগপাশ থেকে দেশকে সুরক্ষার দাবিতে শুক্রবার বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল দেশের তৌহিদী জনতা। কোথাও মিছিল, কোথাও বিক্ষোভ সমাবেশ আবার কোথাও বিবৃতি দিয়ে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে আলেম সমাজ।
শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররমসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদ থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানান তারা।
বায়তুল মোকাররমে ইসকন নিষিদ্ধসহ ৬ দফা দাবিতে বিক্ষোভ
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) নিষিদ্ধসহ ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ইন্তিফাদা বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) জুমার নামাজের পর অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে সংগঠনটির নেতারা সাম্প্রতিক ধর্ষণ, গুম, এবং ইসলামবিদ্বেষমূলক আচরণের প্রতিবাদ জানান।
সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মেহেদী হাসান, সদস্য আহমেদ রফিক এবং ইসলামি বক্তা মুহাম্মদ জসীমউদ্দিন রহমানী। তারা ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে টঙ্গীর ইমাম গুমের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার, গাজীপুরে মাদরাসাছাত্রী ধর্ষণ মামলার দ্রুত বিচার এবং রাষ্ট্রীয় নীরবতার তীব্র নিন্দা জানান।
বক্তারা সমাবেশ থেকে ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করেন—দাবি গুলো হলো- ১। গাজীপুর ধর্ষণের ঘটনা ঘিরে পরিস্থিতির জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ বিভাগকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে এবং ভিকটিমের প্রতি দোষারোপ বন্ধ করে পুলিশ ও প্রশাসনের আচরণের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের সম্মুখে এনে দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; ২। টঙ্গী এলাকার অপহরণ-হত্যা ও এ বিষয়ে দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত চালিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলকভাবে দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে; ৩। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ‘কাঠামোগত ইসলাম বিদ্বেষ’ ও ইসলামবিদ্বেষী আচরণ রোধে একটি জাতীয় নীতি ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে; ৪। মুসলিম নারীর সম্মান ও নিরাপত্তা রক্ষায় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও রক্ষা ব্যবস্থাসহ আইনি গঠন করতে হবে; ৫। ইসলামবিদ্বেষ-বিরোধী কর্মকাণ্ডে অগ্রণী যে ইমাম, সক্রিয় নাগরিক ও সংগঠনগুলো লড়াই করছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
আহমেদ রফিক বলেন, “ইসকনের বিরুদ্ধে কথা বলায় এক খতিবকে অপহরণ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় রাষ্ট্র চুপ, প্রশাসন অপরাধীদের রক্ষা করছে।”
মুহাম্মদ জসীমউদ্দিন রহমানী অভিযোগ করেন, “ইসকন কোনো ধর্মীয় সংগঠন নয়, এটি ইহুদি প্রভাবিত উগ্রবাদী গোষ্ঠী, যারা একের পর এক অপরাধ করছে।”
ডা. মেহেদী হাসান বলেন, “আমরা ন্যায়বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছি। কিন্তু বিচার নয়, এখন চলছে প্রহসন। এমন গুরুতর ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।”
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভকারীরা শাপলা চত্বরের দিকে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হন।
ময়মনসিংহে ইত্তেফাকুল উলামার প্রতিবাদ সমাবেশ
উগ্র হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিশেষত গাজীপুরের টঙ্গী টিএন্ডটি এলাকার বিটিসিএল জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মুফতি মুহিব্বুল্লাহ মাদানীকে অপহরণের প্রতিবাদ, হিন্দুত্ববাদের আগ্রাসন বন্ধ ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের হোতা ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ময়মনসিংহ জেলা শাখা ইত্তেফাকুল উলামা নেতৃবৃন্দ বলেন, চলমান ইস্যুতে হি#ন্দুত্ববাদি ইসকন নিষিদ্ধ চায় দেশের ইসলামপ্রিয় জনগণ।
ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়ায় বাদ আসর এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে সাভারে ইত্তিহাদুল উলামার বিক্ষোভ
উগ্র হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে সাভারের হেমায়েতপুরে ঢাকা আরিচা মহাসড়কে ইত্তিহাদুল উলামা তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ২৪ অক্টোবর শুক্রবার বাদ জুমা অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভে দলমত নির্বিশেষে হাজারো ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করেন।
ইত্তিহাদুল উলামা তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের সভাপতি মাওলানা আব্দুল হাইয়ের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রবীণ আলেমেদ্বীন ও যাদুরচর মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ মাওলানা আলী আকবর কাসেমী। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মুফতি আব্দুল কুদ্দুস এবং মুফতি ইলিয়াস হোসাইন ও মুফতি মাহমুদ হাসান হাবিবীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন হারুনিয়া মাদরাসার মুহতামিম মুফতি আলী আশরাফ তৈয়ব, ভূঁইয়াবাড়ি জামে মসজিদের খতীব মাওলানা আবু সাঈদ, মুফতি কেফায়াতুল্লাহ আনসারী, মুফতি সিদ্দীকুর রহমান, মুফতি মাহমুদুল হাসান মুরতাজা, মাওলানা আব্দুর রহীম, মুফতি হোসাইন আহমাদ, খালিদ সাইফুল্লাহ রাজ প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাফেজ মাওলানা আলী আকবর কাসেমী বলেন, উগ্র হিন্দুত্ববাদী ইসকন ইন্ডিয়ার এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানা অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতায় লিপ্ত। সর্বশেষ টঙ্গী মরকুনের বিটিসিএল টিএন্ডটি কলোনি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মহিবুল্লাহ মিয়াজীকে জুমার খুতবায় সত্যোচ্চারণের কারণে পরপর ১২টি চিঠি পাঠিয়ে হুমকি দেয়ার একপর্যায়ে ইসকন সন্ত্রাসীরা তাকে গাজীপুর থেকে গুম করে। অবশেষে ওই ইমামকে সীমান্তবর্তী পঞ্চগড়ে শিকলে হাত-পা বাঁধা ও অচেতন অবস্থায় পাওয়া গেছে। আমরা এই গুমের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের হাইকমিশনের প্রভাব খাটিয়ে ইসকন এদেশের প্রশাসন, আমলা ও গোয়েন্দা বাহিনীর একটি অংশকে ম্যানেজ করে তাদের উগ্র হিন্দুত্ববাদী তৎপরতা জারি রেখেছে। মুসলিম কিশোরী ও তরুণীদের টার্গেট করে তারা ভাগওয়া লাভ ট্রাপের মাধ্যমে ধর্ষণ সহ জঘন্য অপরাধ করছে। গাজীপুরের শিশু আশামনির উপর বর্বর যৌন নির্যাতন করেছে। ইতিপূর্বে ইসকন প্রকাশ্য দিবালোকে এডভোকেট আলিফকে হত্যা করেছে।
এদেশের মুসলমানরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত কোনো অপরাধীর জুলুমের শিকার হলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বিবৃতি আসে না। বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার মুসলমানদের নিরাপত্তা ও ধর্মীয় পবিত্রতা রক্ষার প্রশ্নে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বারবার নীরব থেকেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধের দাবি জানাই।
বাদ জুমা তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের মসজিদগুলো থেকে খতীবগণ মুসল্লীদের নিয়ে মিছিল সহকারে সমাবেশে যোগ দেন। সমাবেশ শেষে বিশাল একটি মিছিল হাফেজ মাওলানা আলী আকবর কাসেমীহর নেতৃত্বে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে এবং ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়।
ধর্ষণ ও গুমের ঘটনায় উদ্বিঘ্ন আলেম সমাজ : মাধবপুর উলামা পরিষদ
মাধবপুর উপজেলা উলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা শাহ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মুফতী ওয়াজেদ আলী বলেছেন, গাজীপুরে মাদরাসা শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও টঙ্গী টিএনটি বাজার জামে মসজিদের সামনে থেকে মুফতি মহিবুল্লাহ মাদানীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় দেশের আলেম সমাজ উদ্বিঘ্ন। আজ নিরাপত্তা বলতে কিছু নেই। ঢাকা থেকে একজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, অথচ পথে পথে নিরাপত্তা চৌকির কোনো কর্মী তাকে ধরতে পারলো না। নাগরিক হিসেবে আমরা কেউই নিরাপদ নই।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর ২০২৫) সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো যৌথ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে মাধবপুর উপজেলা উলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা শাহ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মুফতী ওয়াজেদ আলী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে ইসকনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে মাধবপুর উপজেলা উলামা পরিষদ নেতৃবৃন্দ বলেন, ইসলাম শান্তি চায়। মানুষের কল্যাণ চায়। কিন্তু অপরাধীদের শাস্তিও চায়। ইমামকে গুমের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে দেশের আলেম সমাজ বসে থাকবে না। মাঠে নেমে আসবে। তখন এর দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।
ধর্ষক যেই হোক তার শাস্তি দিতে হবে মন্তব্য করে মাধবপুর উপজেলা উলামা পরিষদের এই দুই নেতা বলেন, ধর্ষক ধর্ম পরিচয় বড় নয়। অপরাধ করলে তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সংখ্যালঘু দাবি করে তাকে বাঁচানোর পায়তারা জঘন্য অপরাধ। এতে করে দেশের ভাব-আদর্শ ভুলুণ্ঠতি হয়।
ইসকন নিষিদ্ধ ও খতিব মুহিব্বুল্লাহ গুমকারীর গ্রেফতার চায় গাজীপুরবাসী
ইসকন নিষিদ্ধ এবং মুফতি মহিবুল্লাহকে গুমকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে গাজীপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে
আলেম ওলামা ও তৌহিদ জনতা।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) জুমার নামাজের শহরের জয়দেবপুর কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে মিছিল বের জেলা এসপি অফিস পদক্ষিন করে ৩৬ই জুলাই চত্বর এসে শেষ হয়। সেখানে সমাবেশ করেন তারা।
সমাবেশে গাজীপুর জেলা হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান এ-র সভাপতিত্বে মাওলানা মুখলেসুর রহমান এ-র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, মাওলানা হাবিবুর রহমান মিয়াজি, মাওলানা আতাউর রহমান বিক্রমপুরী, মুফতি আবদুল মান্নান, মাওলানা কামরুল ইসলাম নোমানী, মাওলানা হোসাইন আহমেদ, কাজী নিজাম উদ্দিন, ছাত্রজনতার মুখপাত্র মাওলানা মিনহাজুর রহমান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্রনেতা মুবাশ্বির হোসাইন প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, মৌচাকে ১৩ বছরের মুসলিম শিশু আশামনির ধর্ষনের সার্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং ইসকন পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে দিল্লি এবং হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। তারা মুফতি মহিবুল্লাহকে গুম করে ঢাকা থেকে পঞ্চগড় দিয়ে দিল্লীতে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ইন্টিরিম সরকার এবং প্রশাসনের কিছু সদস্য বিগত স্বৈরাচার এ-র দালাল তাদের নিষিদ্ধ না করে লায় দিচ্ছে। অবিলম্বে ইসকনকে নিষিদ্ধ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী এই চক্রকে আইনের আওতায় আনা না হলে সারাদেশে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে তৌহিদি মুসলিম জনতা।
ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল উত্তরা
গাজীপুরের আশামনি ধর্ষণ, গাজীপুরে খতিব মাও. মুহিব্বুল্লাহ গুমের পর নির্যাতন, বুয়েটের আত্মস্বীকৃত ধর্ষক শ্রীশান্ত রায়সহ সকল খুনি ধর্ষকদের দ্রুত বিচার ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে
বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৃহত্তর উত্তরা উলামা পরিষদ। এ সময় ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধের দাবি জানান আলেমরা।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) জুমার পর উত্তরা বাইতুল হুদা জামে মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে উত্তরার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সের সামনে এসে শেষ হয়।
মিছিলের নেতৃত্ব দেন বৃহত্তর উত্তরা উলামা পরিষদের সেক্রেটারি মুফতি নেয়ামতুল্লাহ আমিন।
এ সময় ‘জঙ্গি জঙ্গি, ইসকন জঙ্গি’, ‘এক দুই তিন চার, ইসকন তুই দেশ ছাড়’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘আমার সোনার বাংলায়, উগ্রবাদের ঠাঁই নাই’, ‘ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এসময় বক্তারা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে হিন্দু-মুসলমানসহ সকল ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে আন্দোলন করেছিলেন ছাত্র-জনতা। কিন্তু পতিত সরকারের দোসর ও দিল্লির ষড়যন্ত্রে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর ষড়যন্ত্র চলছে। সেই উদ্দেশ্যেই একেরপর এক ষড়যন্ত্র তারা করছে বলেও মন্তব্য করা হয়।
আন্দোলনকারীরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গুম ও ধর্ষণে জড়িতদের গ্রেফতার, ইসকন নিষিদ্ধ করা, ইসকনের অর্থের উৎস অনুসন্ধান ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টির জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
বক্তারা আরও বলেন, ইসকন একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। সন্ত্রাসী এ সংগঠনটির লক্ষ্যই হলো দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা। বিগত ১৬ বছর ধরে তারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারে ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করেছে। এখন দেশকে তারা হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা সৃষ্টি করে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। আমরা অবিলম্বে এ সংগঠনকে নিষিদ্ধের দাবি জানাই। সেইসাথে আইনজীবীকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা ফজলুল হক সিদ্দিকী, মুফতি আল আমিন সিরাজী, মুফতি সুলাইমান সাদ প্রমুখ।
ইসকন বাংলাদেশের জন্য অশনিসংকেত: ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ
সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন বাংলাদেশের জন্য অশনিসংকেত। সম্প্রতি দেশে ইসলামবিদ্বেষী কার্যকলাপ, মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ানোর মতো কর্মকাণ্ডের কারণে দেশজুড়ে চরম ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ মনে করে,ইসকন নামের সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মুসলমানদের বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। তাদের কার্যক্রম দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আজ শুক্রবার(২৪ অক্টোবর)বাদ জুমা বায়তুল মোকাররমে ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন কর্তৃক হিন্দু যুবকদের মাধ্যমে পরিকল্পিত মুসলিম কিশোরী ধর্ষণ ও গুম খুনের বিরুদ্ধে এবং ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে ছাত্র জমিয়ত সভাপতি রিদওয়ান মাযহারী এসব কথা বলেন।
নেতারা আরো বলেন,আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ইসকনের এই অপতৎপরতা আর সহ্য করা হবে না। সরকার যদি অবিলম্বে ইসকনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা না করে, তবে দেশ ও জাতিকে এর ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। মুসলমানদের ঈমানি চেতনায় আঘাত দিয়ে কেউ পার পাবে না।এটা ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে।
শুক্রবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে
ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ মনে করে, বাংলাদেশের সংবিধান ধর্মীয় অনুভূতি ও চেতনা রক্ষার নিশ্চয়তা দেয়। অথচ একটি সংগঠন সেই অনুভূতির প্রতি অবমাননা করে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাচ্ছে, যা দেশের আইন, সামাজিক শান্তি ও জনমনের বিরুদ্ধে। আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি,ইসকনের সকল কার্যক্রম তদন্ত করে দ্রুত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক, তাদের বিদেশি অর্থায়ন ও প্রচারণা কার্যক্রম বন্ধ করা হোক, এবং ধর্মীয় শান্তি বিনষ্টের দায়ে দায়ীদের আইনের আওতায় আনা হোক।
তারা দেশের সব শান্তিপ্রিয় মানুষ, আলেমসমাজ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও যুবসমাজকে আহ্বান জানিয়ে বলেন,ধর্ম ও দেশের মর্যাদা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করুন। আমরা সবসময় শান্তিপূর্ণ ও সাংবিধানিক উপায়ে ইসলামের মর্যাদা ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় মাঠে থাকব ইনশাআল্লাহ।
ইসকন নিষিদ্ধসহ সাত দফা দাবীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন
শহীদ আলিফ হত্যার বিচার দ্রুত কার্যকর, গাজীপুরে মসজিদের খতিবকে গুম করে হত্যা চেষ্টা এবং সারাদেশে মুসলিম মেয়েদের টার্গেট করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের সাথে সংশ্লিষ্ট উগ্র হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী সংগঠন “ইসকন” নিষিদ্ধের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর ২০২৫) দুপুর দুইটায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জিরো পয়েন্টে চবিয়ান দ্বীনি পরিবারের ব্যানারে ইসকন নিষিদ্ধের দাবীতে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আদনান রাশাদ বলেন, “সম্প্রতি ঘটে যাওয়া গাজীপুরের আশা মনি ধর্ষণ ও ধর্ষণের প্রতিবাদ করায় ইমামকে গুম ও হত্যার চেষ্টা ঘটনায় যে নাম উঠে আসে তা হলো ইসকন। ভারতের মদের পুষ্ট উগ্র হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী সংগঠন এই ইসকনের ১৯৬৬ সালের নিউইয়র্কে প্রতিষ্ঠার পরপরই নিউইয়র্কের শিশু নির্যাতনের মামলা দায়ের করা হয় ইসকনের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশে এসেই তারা ভিন্ন মতাদর্শের হিন্দুদের মন্দির জোরপূর্বক দখল করে। ২০১৪ সালে তারাবির নামাজে বাধা, ২০১৬ সালে ইসকন মন্দির থেকে মুসলিমদের উপর গুলি বর্ষণ করে। ভাগাওয়া লাভ ট্র্যাপের মাধ্যমে মুসলিম মেয়েদের চরিত্র হননসহ নানা দেশবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত হয় এই ইসকন। এমনকী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডেও ইসকনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। সরকারকে বলতে চাই অনতিবিলম্বে ইসকনকে নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদের দাঁত ভেঙে দিতে হবে”
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিত তালুকদার বলেন, “আলোচিত গাজীপুরের কালিয়াকুরে মাদ্রাসার ছাত্রী ১৩ বছরের শিশু আশা মনিকে ধর্ষনের মাধ্যমে তারা সাথে হওয়া জঘন্যতম জুলুম, মসজিদের খতিবকে গুম করে হত্যাচেষ্টা। এসবের সাথে ইসকনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ এসেছে। চট্টগ্রামে এ্যাডভোকেট আলিফকে হত্যা, টঙ্গীতে ইমামকে গুম করে হত্যাচেষ্টা এবং সারাদেশে অসংখ্য মুসলিম মেয়েদের ধর্ষণের ঘটনার আমরা দ্রুত বিচার দাবী করছি।”
মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও চবিয়ান দ্বীনি পরিবারের জিম্মাদার আবরার জাওয়াদ হাসান সাত দফা দাবি পেশ করে বলেন,
১️. শিশু আশামনি ধর্ষণের বিবৃতিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার কর্তৃক প্রকাশিত মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ফেসবুক স্ট্যাটাস উইথড্র করতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে এবং ইস্কন ও পতিত আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সাথে জড়িত এবং দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাওয়া ভারতের মদদপুষ্ট পুলিশদেরকে তদন্ত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে
২️. শিশু আশা মনির ধর্ষণকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে।
৩️. শহীদ আলিফ হত্যার সুষ্ঠু বিচার করতে হবে,তার সাথে জড়িত কুলাঙ্গার চিন্ময় এবং তাদের চক্রকে দেশবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
৪️. জঙ্গী সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে, নির্মুল করতে হবে এবং ভবিষ্যতে তারা যেনো কোন কার্যক্রম করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫️. বুয়েটের ধর্ষক শ্রীশ্রান্ত রায় এবং এ যাবতকালের অন্যান্য ইসকনী হিন্দুত্ববাদী ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করতে হবে।
৬. টঙ্গীর ইমাম কে অপহরণ, তার বাড়ির সম্মানিতা মহিলাদের ধর্ষণের হুমকিদাতা এবং তাকে ভারতে পাচার করতে যারা উদ্যত হয়েছে,কাজ করেছে এদের সবাইকে তদন্ত কমিশন গঠন পূর্বক শনাক্ত করা এবং শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে যেন পরবর্তীতে তারা দেশবিরোধী এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করতে না পারে।
৭. ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে ন্যারেটিভ দাড় করানো আকাশ দাসকে চাকসু থেকে পদত্যাগ করতে হবে এবং এখনো তার বিষয়ে চাকসু ও নির্বাচন কমিশন কেন সিদ্ধান্তে আসেনি তার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।”
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা “ইসকন তুই জঙ্গি, ফ্যাসিবাদের সঙ্গী”, “কত আলিফের গেলে প্রাণ? ইসকনের হবে অবসান”, “আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই”, “নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর”, “আলিফ হত্যার বিচার চাই, জঙ্গি ইসকন নিষিদ্ধ চাই”, শাহজালালের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার”, “ইসকন আর স্বৈরাচার, মিলেমিশে একাকার” প্রভৃতি স্লোগান দেন।
ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে খেলাফত যুব মজলিসের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত
আজ ২৪ অক্টোবর ২০২৫ ইং (শুক্রবার) বাদ জুমা, বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি রাজধানীর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইট থেকে শুরু হয়ে পল্টন নাইট এঙ্গেল মোড়ে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান এবং পরিচালনা করেন সহ-সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুক মাতুব্বর।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা অ্যাডভোকেট শাহিনুর পাশা চৌধুরী বলেন, “ইসকন নামধারী একটি সংগঠন দেশে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতমূলক কর্মকাণ্ড এবং মূর্তিপূজার নামে মুসলিম সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। অবিলম্বে ইসকন নিষিদ্ধ করে তাদের অপতৎপরতা রোধ করতে হবে।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় বায়তুল মাল সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান বলেন, “দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্টের জন্য ইসকন দায়ী। তাদের বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সরকার যদি এখনই পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে দেশজুড়ে তৌহিদী জনতা আন্দোলনে নামবে।”
আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি পরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল্লাহ আশরাফ এবং প্রশিক্ষণ বিভাগের সম্পাদক মাওলানা আল আবিদ শাকের।
তাঁরা বলেন,ইসকনের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড রুখে দিতে হবে। দেশের সংবিধান অনুযায়ী কোনো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার সুযোগ নেই। সরকারকে দ্রুত ইসকন নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।”
বিক্ষোভ শেষে নেতৃবৃন্দ বলেন, মুসলমানদের ঈমান-আকীদা রক্ষায় প্রয়োজনে রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
কুমিল্লায় ইসকন নিষিদ্ধ ও গুম-ধর্ষণ ঘটনার বিচার দাবিতে হেফাজতের বিক্ষোভ
হিন্দুত্ববাদী উগ্র সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধসহ ছয় দফা দাবিতে কুমিল্লায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ কুমিল্লা মহানগর শাখা। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) জুমার নামাজের পর কুমিল্লা টাউন হল ময়দান থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিলটি রাজগঞ্জ মোড়, মোগলটুলি ও কেন্দ্রীয় ঈদগাহ এলাকা অতিক্রম করে পূবালী চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুমিল্লা মহানগর সভাপতি মুফতি শামসুল ইসলাম জিলানী। তিনি মিছিল সফল করার জন্য ওলামায়ে কেরাম, সাংবাদিক, প্রশাসন ও তৌহিদি জনতাকে ধন্যবাদ জানান।
বিক্ষোভ-পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ, মাওলানা তৈয়্যব, মহানগর সেক্রেটারি মাওলানা মনিরুল ইসলাম কাসেমী, বুড়িচং সভাপতি মাওলানা জহিরুল ইসলাম, যুগ্ম সেক্রেটারি মাওলানা আনিসুর রহমান আশরাফী, মুফতি ইয়াকুব, মাওলানা জামিল আশরাফী, মুফতি মোজাম্মেল হোসেন, মুফতি নাইমুল ইসলাম, মাওলানা সোলায়মান, মাওলানা আব্দুল কাদের জামাল, মাওলানা আমান উল্লাহ মুন্সী, মাওলানা খলীলুর রহমান কাসেমী, মুফতি ওমর ফারুক, মাওলানা সাখাওয়াত রাহাত প্রমুখ।
ছয় দফা দাবি
সভায় হেফাজতের পক্ষ থেকে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন মুফতি শামসুল ইসলাম জিলানী। দাবিগুলো হলো—
রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের দায়ে বাংলাদেশেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ইসকনকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তাদের সব কার্যক্রম বন্ধ করা।
টঙ্গীর খতিব মুফতি মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজীকে হুমকি ও গুম করে নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা।
গাজীপুরে মাদরাসাছাত্রী আশা মনির ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া।
বুয়েটের ছাত্র তৃষান্ত রায়কে ধর্ষণের দায়ে ফাঁসি দেওয়া।
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা।ইসকনের বিরুদ্ধে মামলা নিতে অজুহাত দেখানো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া।
বক্তারা অভিযোগ করেন, ইসকন দেশের শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্টে সক্রিয় এবং “ভারতের মদদে” বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে। তারা বলেন, ইসকনের উগ্র কর্মকাণ্ড ইতোমধ্যে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, রাশিয়া ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ করা হয়েছে; বাংলাদেশেও একই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
সাভারে ইত্তিহাদুল উলামার বিশাল বিক্ষোভ
বক্তারা আরও বলেন, টঙ্গীর খতিব মুফতি মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজীকে ইসকন সদস্যরা অপহরণ করে নির্যাতন করেছে—যা ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘন। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে সারাদেশে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে তৌহিদি জনতা। দোয়ার মাধ্যমে সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করেন হেফাজতের সহ-সভাপতি হাফেজ মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ।
নির্বাহী আদেশে উগ্র হিন্দুত্ববাদী ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি
উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকনকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন উদ্বিগ্ন নাগরিকসমাজ। গুম-খুনসহ নানা অপরাধে যুক্ত থাকায় এই দাবি জানিয়েছেন তারা। শুক্রবার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এই দাবি তোলা হয়।
বাংলাদেশ পলিটিক্যাল থিংকারসের (বিপিটি) ব্যানারো আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিপিটির কো-অর্ডিনেটর প্রকৌশলী মো. নুর নবী। সংগঠনের সদস্য প্রকৌশলী আলমগীর হোসেনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুইবার গুম হওয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান বীরপ্রতীক। আরও বক্তব্য দেন বিপিটির সদস্য ও গুমবিরোধী অ্যাক্টিভিস্ট রায়হান চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাসিনুর রহমান বলেন, ‘দেশে গুমের পুনরাবৃতি দুঃখজনক। ইস্কনের প্রতি নানা উস্কানীমূলক কর্মকাণ্ডের কথা শোনা গেলেও এবার গুমের অভিযোগ উঠেছে, যা খুবই আপত্তিকর। এই দেশে আর গুমের ঘটনা চলতে দেওয়া যাবে না। তদন্তে ইস্কন যদি দোষী প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের পুলিশ প্রশিক্ষিত। তারা অপরাধ তদন্ত করে বের করবে। আমি মনে করি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাহী আদেশে এই দলটাকে নিষিদ্ধ করে দেবেন। যারা যারা জড়িত আছে, তিনি তাদের সবগুলো আইনের ধারায় আনবেন। আমি এটা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) অ্যাক্টের অধীনে আনব। কারণ, এটাকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে কুমিল্লায় হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ
গুমের ভুক্তভোগী সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলতে চাই, আপনি দেশের নাগরিকদের গুম বন্ধে কী উদ্যোগ নিয়েছেন? আগস্ট বিপ্লবের পর গুমের ঘটনায় আপনার পদত্যাগ করা উচিত।
লিখিত বক্তব্যে প্রকৌশলী মো. নুর নবী বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় গুমের সংস্কৃতি বছর না ঘুরতেই আবার চালু হয়ে গেছে। বিশেষ করে সম্প্রতি দুটি ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। একটি হচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের তুরাগ থানার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কে এম মামুনুর রশিদ এবং চলতি সপ্তাহে গাজীপুরের টঙ্গী টিঅ্যান্ডটি এলাকার বিটিসিএল জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মুফতি মুহিবুল্লাহ মাদানীর গুমের ঘটনা। তিনি বলেন, আগের মতো গুমের সংস্কৃতি ফেরত আসার ঘটনায় দেশের নাগরিকদের মাঝে উৎকণ্ঠা দেখা গেছে। ২৪-এর জুলাই বিপ্লবের পর দেশে গুমের ঘটনা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। স্বাধীন দেশে কোন মানুষ গুমের শিকার হবে না এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
একই দাবিতে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনগুলো নিচে তুলে ধরা হলো-
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে বাহাদুর শাহ পার্ক ঘুরে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন— ‘ইসকন তুই জঙ্গি, স্বৈরাচারের সঙ্গী’, ‘জঙ্গিবাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ ইত্যাদি।
সমাবেশে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, “ইসকনের কাজ হওয়া উচিত ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখা। কিন্তু তারা হিন্দুত্ববাদী কার্ড খেলে দেশ অশান্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরও তারা বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর চেষ্টা করেছে। বিশ্বের অনেক দেশেই ইসকন নিষিদ্ধ— বাংলাদেশে কেন নয়? ইসকন শুধু মুসলমানদের নয়, হিন্দুদেরও শত্রু— তারা মানবতার শত্রু। তাই অবিলম্বে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়: ইসকন কর্তৃক দেশব্যাপী মুসলিম নারী ধর্ষণ ও ইমাম গুমের প্রতিবাদে ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার জুমা নামাজ শেষে থেকে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, কে আর মার্কেট প্রদক্ষিণ করে জব্বারের মোড়ে এসে শেষে হয়। সেখানে একটি সমাবেশ আয়োজন করে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা। এসময় মিছিলে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: ইসকনের সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, হিন্দুত্ববাদী চক্র কর্তৃক মুসলিম নারীদের সম্ভ্রম নষ্ট, গাজীপুরে আশামনি ধর্ষণ, খতিব মুহিব্বুল্লাহকে অপহরণ এবং ইসকন নিষিদ্ধের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বাদ জুম্মা ইবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আগের স্থানে এসে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ইসলামের শত্রুরা, হুশিয়ার সাবধান; ইসকনের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও; ইসকনের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না; ইসকনের ঠিকানা, এই জমিনে হবে না; দে দে দে কবর দে, ইসকনের কবর দে; ইসকন তুই জঙ্গি, স্বৈরাচারের সঙ্গী,নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার; জিহাদ জিহাদ জিহাদ চাই, জিহাদ করে বাঁচতে চাইসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: শহীদ আলিফ হত্যার বিচার দ্রুত কার্যকর, গাজীপুরে মসজিদের খতিবকে গুম করে হত্যাচেষ্টা ও সারাদেশে মুসলিম মেয়েদের টার্গেট করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের সাথে সংশ্লিষ্ট ইসকনের নিষিদ্ধের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন হয়েছে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ‘চবিয়ান দ্বীনি পরিবার’ নামের একটি সংগঠন এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ১৩ বছরের শিশু আশা মনিকে ধর্ষণ ও মসজিদের খতিবকে গুম করে হত্যাচেষ্টা–এসবের সাথে ইসকনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ এসেছে। চট্টগ্রামে এ্যাডভোকেট আলিফকে হত্যা, টঙ্গীতে ইমামকে গুম করে হত্যাচেষ্টা এবং সারাদেশে অসংখ্য মুসলিম মেয়েদের ধর্ষণের ঘটনার আমরা দ্রুত বিচার দাবী করছি।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী কর্তৃক দেশব্যাপী মুসলিম নারী ধর্ষণ ও ইমাম গুমের প্রতিবাদে এবং ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা। রুয়েটের মুসলিম ছাত্রসমাজ বিক্ষোভ মিছিলটি আয়োজন করে।
শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে রুয়েটের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে মিছিল নিয়ে বের হন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি হয়ে তালাইমারী ঘুরে প্রধান ফটকে শেষ হয়। বিক্ষোভের শেষে অংশগ্রহণকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সমসাময়িক বিষয়ে সচেতনতা বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং সরকার ও প্রশাসনের কাছে তাদের দাবিসমূহ তুলে ধরেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: দেশব্যাপী মুসলিম নারীদের ধর্ষণ, সম্মানিত আলেমদের গুম, উগ্র হিন্দুত্ববাদী ইসকনের অপতৎপরতা ও প্রশাসনের নির্লিপ্ততার প্রতিবাদ এবং ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বাদ জুমা ‘সচেতন মুসলিম শিক্ষার্থীবৃন্দ, রাবি’-এর ব্যানারে এ বিক্ষোভ করেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জোহা চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, ‘আবু সাঈদের বাংলায়, ইসকনের ঠাঁই নাই’, ‘ব্যান ব্যান, ইসকন’, ‘ইসকনের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’, ‘ধরি ধরি ধরি না, ধরলে কিন্তু ছাড়ি না’, ‘ইসকনের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ইসকনের চামড়া, তুলে নেব আমরা’ ইত্যাদি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
দেশের অন্যান্য স্থানে বিক্ষোভ
গাজীপুর: ভারতের হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন, গাজীপুরের শিশু আশা মনিসহ সকল নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং মসজিদের খতিব হাবিবুল্লাহ মিয়া হত্যার চেষ্টা প্রতিবাদ এবং উগ্রবাদী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতা। শুক্রবার দুপুরে জুম্মার নামাজের পর গাজীপুর কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে গাজীপুরের প্রধান প্রদান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ৩৬ এর চত্বর এলাকায় গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
কাপাসিয়া: গাজীপুরের কাপাসিয়ায় তাওহিদী জনতার উদ্যোগে হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৪ অক্টোবর শুক্রবার বাদ আছর ফকির মজনু শাহ্ সেতু’র পশ্চিম প্রান্ত থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি উপজেলা সদর প্রদক্ষিণ করে।
রংপুর: ইসকন নিষিদ্ধ এবং মুফতি মহিবুল্লাহকে গুমকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে রংপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে সর্বস্তরের সচেতন মুসলিম সমাজ। শুক্রবার জুমা নামাজের পর সদর উপজেলা মসজিদের সামন থেকে বিক্ষোভটি শুরু হয়ে নগরীর সুপার মার্কেটেোড়, পায়রা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, প্রেসক্লাব চত্ত্বর হয়ে এসে শেষ হয়। সেখানে সমাবেশ করে তারা।
এ সময় বক্তারা বলেন, ইসকন পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে দিল্লি এবং হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। তারা মুফতি মহিবুল্লাহকে গুম করে ঢাকা থেকে পঞ্চগড় দিয়ে দিল্লীতে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ইন্টিরিম সরকার তাদের নিষিদ্ধ না করে লায় দিচ্ছে। অবিলম্বে ইসকনকে নিষিদ্ধ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনস্টকারী এই চক্রকে আইনের আওতায় আনা না হলে সারাদেশে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে তৌহিদি মুসলিম জনতা।
কিশোরগঞ্জ: আলিফ হত্যা, মুহিবুল্লাহ গুম, গাজীপুরে আশামনি ধর্ষণ এবং ডুয়েটের ছাত্র ধর্ষক শ্রীশান্ত রায়সহ ইস্কনের জড়িত খুনি ও ধর্ষকদের দ্রুত বিচার ও ফাঁসির দাবিতে কিশোরগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুরে শহরের ঐতিহাসিক শহীদি মসজিদের সামনে থেকে সর্বস্তরের তৌহিদী জনতার ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেষে শহীদি মসজিদ চত্বরে এসে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতির নামে ইস্কন বারবার সহিংসতা, হত্যা ও নারী নির্যাতনের মতো অপরাধ করছে। এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ না করলে দেশে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
ফরিদপুর: শহীদ আলিফ হত্যার বিচার দাবি ও গাজীপুর মসজিদের খতিবকে গুম করে হত্যার অপচেষ্টার প্রতিবাদে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার তৌহিদী জনতা ও দেশ প্রেমিক যুব সমাজ হিন্দু উগ্রবাদ সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধকরণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করেছে।
মুসলিম মেয়েদের টার্গেট করে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ সংশ্লিষ্ট ইসকনের সকল কার্যক্রম আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে জুম্মার নামাজ শেষে ঈদগাঁ মাদরাসা মসজিদ মাঠে সমবেত হয়ে শত শত ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে যোগদান করেন।
মিছিলটি ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদসহ দুটি পাড়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনঃরায় ঈদগাঁ মাদরাসা মাঠে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন, আকাশ, লিওন, বায়জীদ, হুসাইন, মুকিম, মাসরুল, জামিল, মেহেদি, সাব্বির, মাজহারুল ইসলাম মোল্লা, মিনহাজ প্রমুখ।
টঙ্গী: গাজীপুরের টঙ্গীর বিটিসিএল টিএন্ডটি কলোনি জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা মুফতি মুহিবুল্লাহ মাদানির অপহরণ ও গাজীপুরে ১৩ বছর বয়সী মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবীতে টঙ্গীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে তৌহিদী জনতা ও আলেম সমাজ। এসময় প্রায় দেড় ঘন্টা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। প্রতিবাদ সভা শেষে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পুনরায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর টঙ্গীর বিভিন্ন মসজিদ থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে স্টেশন রোড এলাকায় অবস্থান নেন তারা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও টঙ্গী-কালীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় নারায়ে তকবির আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে চারপাশ।
নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম): দেশব্যাপী ধর্মীয় বিদ্বেষ উসকে দেওয়া ইসকন নামের সন্ত্রাসী সংগঠনকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা, টঙ্গী ইমাম গুমের দায়ীদের দ্রুত গ্রেফতার, গাজীপুরে মাদ্রাসাছাত্রী ধর্ষণ ও বুয়েটে মুসলিম নারীদের কটূক্তিকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সমাবেশে উত্তাল হয়ে ওঠে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী।
শুক্রবার বিকেল ৫টায় নাগেশ্বরী বাসস্ট্যান্ডের দারুন নাজাত জামে মসজিদ চত্বরে সর্বস্তরের ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতার ব্যানারে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বক্তারা বলেন, টঙ্গীর ইমাম শুধুমাত্র সত্য উচ্চারণ করেছিলেন, তাই তাকে গুম করা হলো! এই নীরব রাষ্ট্রব্যবস্থার দায় কে নেবে? তারা আরও বলেন, ইসকনের নামে দেশে ধর্মীয় সন্ত্রাস চলছে। সরকার যদি এখনই তাদের নিষিদ্ধ না করে, তাহলে জনগণ নিজেরাই জবাব দেবে।
তালামীযে ইসলামিয়া সিলেট : মানবতাবিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে তালামীযে ইসলামিয়া সিলেট জেলা ও মহানগরীর উদ্যোগে পুণ্যভূমি সিলেট নগরীতে শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বাদ জুমআ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তারা বলেন, গাজীপুরের টঙ্গীতে একজন ইমামকে অপহরণ করে পাচার করার চেষ্টা করেছে মানবতাবিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন। কয়েক মাস আগে আদালত প্রাঙ্গণে একজন আইনজীবীকে প্রকাশ্যে হত্যা করেছে ইসকন।
তারা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের আনাচে-কানাচে এই সন্ত্রাসী সংগঠনের কর্মীরা ধর্ষণের মতো নিকৃষ্ট অপরাধের সাথেও জড়িত। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে এই সংগঠন এতো দুঃসাহস পায় কোথা থেকে, ল তাদেরকে মদত দেয়? আমরা জানতে চাই।
বক্তারা আরো বলেন, আমরা দেখেছি মানবতাবিরোধী অপরাধে সেনা কর্মকর্তারা সহ সকল অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে, অথচ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে ইসকন এর জড়িত থাকার সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরেও ইসকনকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না, আমরা এর জবাব চাই। যদি অনতিবিলম্বে ইসকনকে নিষিদ্ধ করা না হয় তাহলে আমাদের পরবর্তী কার্যক্রমগুলো আরও কঠিন হবে।
পটিয়া (চট্টগ্রাম): ইস্কন নিষিদ্ধের দাবিতে চট্টগ্রামের পটিয়ায় উলামা জনতার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে পটিয়ার ডাকবাংলো মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় ডাকবাংলো মোড়ে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ‘‘ইসকন নিষিদ্ধ করো”, “নারী নিপীড়নের বিচার চাই”, “গেরুয়া প্রেমের ফাঁদ থেকে তরুণীদের রক্ষা করো”— এমন বিভিন্ন স্লোগান এলাকা মুখর করে তোলেন।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ইসকনের সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে দেশজুড়ে একের পর এক ধর্মীয় উসকানি, নারী নিপীড়ন ও তরুণদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তারা বলেন, মুসলিম নারীদের “লাভ ট্র্যাপ” বা “গেরুয়া প্রেমের ফাঁদে” ফেলার মাধ্যমে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে।ৎ
মানিকছড়ির (খাগড়াছড়ি): দেশে চলমান ধর্ষণকাণ্ডে প্রশাসনের উদাসীনতা, ধর্ষকের দ্রুত বিচার ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বাদ আসর সর্বস্তরের তৌহিদি জনতার আয়োজনে উপজেলার প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে আমতল মোড়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলে তৌহিদী জনতা, ছাত্র ও যুব সংগঠনের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রতিবেদনটি ৩৬নিউজ, আওয়ার ইসলাম ও ঢাকা মেইল থেকে তথ্য সংগৃহীত
স্বাধীনতার বার্তা/মায়া
