সর্বশেষ আন্তর্জাতিক রাজনীতি অর্থনীতি দেশ

প্রবাসচিত্র ।। হামিদুল নাসির

লেখালেখির নৈতিক ভিত ও সামাজিক দায়িত্ব

আবাই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে লেখালেখির রাজনীতি নতুন মাত্রা পেয়েছে। এই সময়ে আমাদের সবার এক জায়গায় একমত হওয়া উচিত: লেখালেখির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণাত্মক আচরণ না করা। সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে, আমাদের লেখনী শুধু স্থানীয় পর্যায়েই নয়, বৈশ্বিক পরিমণ্ডলেও আমাদের দেশের ভাবমূর্তি নির্ধারণ করে। আমাদের জ্ঞান-চিন্তা, আচার-আচরণ, সংস্কৃতি, সবই বিশ্ব দরবারে প্রকাশ পায়।

সম্প্রতি, নমিনেশন দাখিলের ঠিক আগে একটি লেখা আমার নজরে আসে। লেখাটিতে একটি অবাস্তব নাম ব্যবহার করে একজন মৃত ব্যক্তির ছবি দিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। এটি কতটা নৈতিকতাবর্জিত কাজ। তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একজন মৃত মানুষকে হাতিয়ার করে একজন সজ্জন ব্যক্তিকে অপদস্ত করার চেষ্টা এটি! লেখাটি শুরু হয়েছিল ড. মিলনের প্রশংসা দিয়ে। তাকে একটি বিশেষ "এলিট শ্রেণি"-এর প্রতিনিধি বানিয়ে। সাধারণ মানুষের কাজকে হেয় প্রতিপন্ন করে শ্রেণি বিভেদ তৈরির অপচেষ্টার ছিল। এভাবে সূক্ষ্ম কৌশলে ড. মিলনকে সাধারণ মানুষের চোখে ভিলেন বানানোর চক্রান্ত করা হয়েছে।

ড. মিলন এই লেখাটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফেসবুক ও অন্যান্য মিডিয়ায় তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আর এ ধরনের লেখালেখি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট গ্রুপের এডমিনও লেখাটি সরিয়ে দিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন যে, এমন লেখা আর পোস্ট করা হবে না। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহল ইতোমধ্যে লেখাটি সংরক্ষণ করে রেখেছে এবং এখনো সেটিকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এটি সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

গতকাল সাংবাদিক জুয়েল ভাই যথার্থই লিখেছেন, "সবার হাতে কলম আছে।" কিন্তু কলম থাকলেই যে যা ইচ্ছা লেখা যাবে, তা নয়। লেখারও একটি নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। যা ইচ্ছা লিখে দেওয়া, যা ইচ্ছা বলে দেওয়া—এভাবে সমাজের কোনো মঙ্গল হবে না। পক্ষ-বিপক্ষের নামে মিথ্যা ও আক্রমণাত্মক লেখা সমাজকে শুধু বিভ্রান্তই করে না। বরং বিভক্তও করে।

যা ইচ্ছা বলে দেওয়া—এভাবে সমাজের কোনো মঙ্গল হবে না। পক্ষ-বিপক্ষের নামে মিথ্যা ও আক্রমণাত্মক লেখা সমাজকে শুধু বিভ্রান্তই করে না। বরং বিভক্তও করে

এবারের নির্বাচনে তিনজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী আছেন। সবাই আমাদের কাছের ও আপনজন। আমরা হয়তো ভিন্ন ভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেব, কিন্তু তা বলে কেউ মারাত্মক অভিযোগ ও অপমান করে তাদের অসম্মান করবেন, এটি কোনো সচেতন মানুষ মেনে নেবেন না।

দীর্ঘদিন ধরে এই সমাজে বাস করতে গিয়ে আমরা অনেক অপমান, আক্রমণ, গালাগালি, দলাদলি এবং সম্মানিত মানুষদের প্রকাশ্যে আক্রান্ত হতে দেখেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে আর এসব দেখতে চাই না। সমাজের অনেক মানুষই এই উগ্রতা ও অসুস্থ লেখালেখি থেকে মুক্তি চান। কারও উপর আক্রমণ ছাড়াও তো লেখা যায়, সুস্থ, গঠনমূলক ও শান্তিপূর্ণ আলোচনা তো সম্ভব। আসুন আমরা সেদিকেই এগোই। অগ্রসর হই। দেখবেন, সমাজ আপনা থেকেই সুন্দর হয়ে উঠবে, প্রতিযোগিতা হবে সুমধুর।

আমি নিজেও বহুবার সাইবার বুলিং-এর শিকার হয়েছি। নিজের ক্ষেত্রে আমি উদাসীন, কিন্তু যখন অন্য কেউ এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, তখন প্রতিবাদ করতে মন চায়।

আমরা যেন ভুলে না যাই, কেউই নিষ্পাপ নই। সবারই ভুল হয়, ভবিষ্যতেও হবে। তাই সচেতন থাকা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা সবার জন্যই মঙ্গলজনক।

ড. মিলন আজ আবারও সেই লেখার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তার এই সক্রিয়তা আমাকে এই লেখা লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছে। ধন্যবাদ।

লেখক : রাজনীতিক ও আয়ারল্যান্ডপ্রবাসী

আরও পড়ুন...

জনপ্রিয়

সর্বশেষ খবর