সর্বশেষ আন্তর্জাতিক রাজনীতি অর্থনীতি দেশ ভিডিওচিত্র ২

হিজরি ৯ জিলহজ। সৌদি আরবের পবিত্র ভূমিতে হাজিদের পা চলে যাচ্ছে হজের মূল স্তম্ভের দিকে—আরাফাতের ময়দানে। ফজরের নামাজের পর থেকেই সাদা ইহরামে মোড়ানো আল্লাহর মেহমানেরা মিনার তাঁবু থেকে রওনা হচ্ছেন আরাফাতের দিকে। তাঁদের মুখে ধ্বনিত হচ্ছে তাওহিদের ঘোষণা:
লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারিকা লাক।
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই; সমস্ত প্রশংসা, নেয়ামত ও সার্বভৌমত্ব শুধু তোমারই, তোমার কোনো শরিক নেই।

আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজের তিনটি ফরজের অন্যতম। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
হজ হলো আরাফাতে অবস্থান। (মুসনাদে আহমাদ)

এই আরাফাতের ময়দানেই প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ ﷺ তাঁর বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন—যেখানে মানবতার জন্য অমূল্য দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন তিনি।

আল-কুলুবু তাকশা‘র, কম্পমান হৃদয়ের আরাফাত

সারা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা, বর্ণ ও অঞ্চলের প্রায় ১৫ লাখ মুসলিম হাজি আজ এই পবিত্র প্রান্তরে উপস্থিত হয়েছেন। বাংলাদেশের প্রায় ৮৭ হাজার হাজি তাঁদের মধ্যে রয়েছেন। এই দিন হাজিরা জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন, খুতবা শুনবেন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর জিকির, তাওবা, কোরআন তিলাওয়াত ও দোয়া-মুনাজাতে লিপ্ত থাকবেন।

এবারের আরাফাতের খুতবা দেবেন শায়খ সালেহ বিন হুমাইদ, যিনি মসজিদুল হারামের খতিব ও শুরা কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান। এ খুতবা ৩৪টি ভাষায় সম্প্রচারিত হবে, যার মধ্যে বাংলা ভাষাও অন্তর্ভুক্ত। বাংলায় লাইভ অনুবাদ করবেন মুহাম্মদ খলিলুর রহমান মাক্কি।

আরাফাতের আধুনিক ব্যবস্থাপনা

প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে হাজিদের আরামের জন্য সৌদি সরকার আরাফাতের ময়দানকে নতুন রূপে সাজিয়েছে। বসানো হয়েছে ১০০টি সৌরচালিত কুলিং ইউনিট, ৬০ হাজার বর্গমিটারে অস্থায়ী তাঁবু, ৫০০ চিকিৎসকসহ আধুনিক মেডিকেল ক্যাম্প। রয়েছে মোবাইল ক্লিনিক, নিরাপত্তা বাহিনী, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও ৯১১ নম্বর জরুরি সহায়তার জন্য।

হাজিদের জন্য দেওয়া হয়েছে বিনা মূল্যে ইন্টারনেট সুবিধাও। সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তাঁবুতে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

মুজদালিফা, মিনার জামারা এবং তাওয়াফের শেষ অধ্যায়

আরাফাতে সূর্যাস্তের পর হাজিরা রওনা হবেন মুজদালিফার উদ্দেশে। সেখানে রাত কাটানো ওয়াজিব। ফজরের নামাজের পর সাতটি পাথর সংগ্রহ করে হাজিরা ফিরে যাবেন মিনায়। মিনায় তিন জামারায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, কোরবানি, মাথা মুণ্ডন, তাওয়াফে জিয়ারত এবং বিদায়ী তাওয়াফের মধ্য দিয়ে হজ সম্পন্ন করবেন।

মিনা: আত্মশুদ্ধির তাঁবু নগরী

হজের সূচনা হয় ৮ জিলহজ মক্কা থেকে মিনায় আগমনের মাধ্যমে। পাহাড়বেষ্টিত মিনা উপত্যকা সাদা তাঁবুতে সাজানো এক অস্থায়ী নগরী—‘তাঁবুর শহর’। এখানে জামাতে নামাজ, তসবিহ, জিকির, কোরআন তিলাওয়াত আর চোখের জলের মাধ্যমে হাজিরা তাঁদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেন।

আবহাওয়ার চ্যালেঞ্জে প্রস্তুত হাজিরা

চলতি বছর সৌদি আরবে প্রবল তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এজন্য হাজিদের ছাতা ব্যবহার, প্রচুর পানি পান ও তাঁবুর বাইরে কম যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হাজিদের সুবিধার্থে তাঁবুর নম্বর, মানচিত্র এবং হাতবন্ধনীতে বারকোড ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।



হজ একটি আত্মিক বিপ্লব—যেখানে মানুষ জাতি, ভাষা, বর্ণভেদ ভুলে এক কাতারে দাঁড়িয়ে আল্লাহর দরবারে নিজেদের সমর্পণ করে। আরাফাতের ময়দানে সেই সমর্পণের সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটে। হোক এ দিন আমাদের জন্য ক্ষমাপ্রাপ্তির, আত্মশুদ্ধির ও জান্নাতের প্রভাতী সূচনা।

আরও পড়ুন...

জনপ্রিয়

সর্বশেষ খবর