ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ: তুরস্কের মধ্যস্থতায় জেলেনস্কি-এরদোগান বৈঠক, শান্তি আলোচনার ইঙ্গিত
আঙ্কারা, তুরস্ক (আনাদোলু এজেন্সি): ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগানের মধ্যে আঙ্কারায় অনুষ্ঠিত তিন ঘণ্টাব্যাপী এক কূটনৈতিক বৈঠকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধান ও সম্ভাব্য আলোচনার রূপরেখা নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। গতকালের এই বৈঠকের পর জেলেনস্কি জানিয়েছেন, "অদূর ভবিষ্যতে ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনার অবস্থান প্রকাশ করবে।" বিশ্লেষকরা এটিকে যুদ্ধবিরতি বা শর্তভিত্তিক সমঝোতার পূর্বসংকেত হিসেবে দেখছেন।
মূল আলোচ্য বিষয়:
যুদ্ধবিরতির পথে অগ্রগতি: ইউক্রেনের পক্ষ থেকে আলোচনার ঘোষণাকে যুদ্ধবিরতির দিকে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তবে রাশিয়া কর্তৃক দখলকৃত ডনবাস ও ক্রিমিয়া ছাড়ার প্রশ্নে অটল থাকলে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
তুরস্কের মধ্যস্থতা: রাশিয়া ও ইউক্রেন—উভয় পক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে তুরস্ক "সেতুবন্ধনী" ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এরদোগান পূর্বে গ্যাস রপ্তানি, আযোভ স্টিল প্ল্যান্ট চুক্তি এবং যুদ্ধবন্দী বিনিময়ে সফল মধ্যস্থতা করেছিলেন।
সৌদি প্রভাব: জেলেনস্কির তুরস্ক সফরের আগে রিয়াদে মার্কিন-রাশিয়ান কূটনীতিকদের বৈঠক আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছে। ২০২২ সালের পর এটি প্রথম উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ।
তুরস্কের কৌশলগত লক্ষ্য:
রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিমুখী সম্পর্ক: ন্যাটো সদস্য হয়েও তুরস্ক রাশিয়ার কাছ থেকে S-400 ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম কিনেছে এবং গ্যাস সরবরাহের উপর নির্ভরশীল।
ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা: TB2 ড্রোন সরবরাহ ও যৌথ অস্ত্র কারখানা নির্মাণের মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বের অর্জন
কৃষ্ণসাগরে আধিপত্য: ইউক্রেনের সঙ্গে জোট গড়ে অঞ্চলে নৌশক্তি বাড়ানো।
শান্তি আলোচনার চ্যালেঞ্জ: রাশিয়া ইউক্রেনের ২০% ভূমি দখল করে রেখেছে। কিয়েভ যদি অঞ্চল ছাড়ার শর্তে আলোচনায় বসে, তা স্থানীয় জনগণের প্রতিরোধের মুখে পড়তে পারে।আঙ্কারার লাভ: তুরস্কের মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা এরদোগানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে "শান্তির নেতা" হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে, যা তুরস্কের আঞ্চলিক প্রভাব বৃদ্ধিতে সহায়ক।
পশ্চিমা চাপ: NATO সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও সৌদি আরব ও তুরস্কের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে রাশিয়াকে চাপ দিচ্ছে।
এই বৈঠক ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জটিলতার মধ্যে একটি নতুন কূটনৈতিক সম্ভাবনার দরজা খুলেছে। তবে শান্তি চুক্তির জন্য রাশিয়ার দখলকৃত অঞ্চল ফেরত, নিরাপত্তা গ্যারান্টি, এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের মতো ইস্যুগুলো এখনও অমীমাংসিত। তুরস্কের সক্রিয়তা আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে এর ভূমিকা জোরদার করলেও, আলোচনার সাফল্য নির্ভর করবে মস্কো ও কিয়েভের নমনীয়তা এবং পশ্চিমা সহযোগিতার উপর।
২০২২ সালে তুরস্ক-ইউক্রেন সামরিক সহযোগিতা চুক্তি অনুযায়ী, TB2 ড্রোনের ৫০টি ইউনিট সরবরাহ করা হয়েছে।
আল-উদেইদ বিমানঘাঁটির পর তুরস্কের কাছে অবস্থানরত রাশিয়ার S-400 সিস্টেম পশ্চিমা ন্যাটো জোটের জন্য বড় চাপের কারণ।