বিশ্বের সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট’ হোসে মুহিকা আর নেই
মন্টেভিডিও, ১৩ মে ২০২৫:
উরুগুয়ের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিশ্বজুড়ে প্রভাবশালী এক মানবিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে খ্যাত হোসে পেপে মুহিকা আর নেই। স্থানীয় সময় সোমবার মন্টেভিডিওতে ৮৯ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে খাদ্যনালীর ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি। তবে তার মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। তার মৃত্যুসংবাদ জানিয়ে উরুগুয়ের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইয়ামান্দু ওরসি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লেখেন, “আপনি আমাদের যা কিছু দিয়েছেন, জনগণের প্রতি আপনার অগাধ ভালোবাসার জন্য ধন্যবাদ।”
সাধারণ জীবনের অসাধারণ নেতা
মাত্র ৩৪ লাখ জনসংখ্যার দেশ উরুগুয়ের একজন রাষ্ট্রপতি হয়েও মুহিকা বিখ্যাত ছিলেন তার অতিসাধারণ জীবনযাপনের জন্য। রাষ্ট্রপতির বেতনের ৯০ শতাংশ দান করতেন, থাকতেন রাজধানীর বাইরে একটি ছোট খামারবাড়িতে, চালাতেন নিজের পুরোনো ভক্সওয়াগন গাড়ি। এই অনাড়ম্বর জীবনের কারণেই তিনি পরিচিতি পেয়েছিলেন “বিশ্বের সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট” হিসেবে।
গেরিলা থেকে গণনেতা
যুবক বয়সে মুহিকা জড়িয়ে পড়েন বিপ্লবী তৎপরতায়। ষাটের দশকে তিনি ছিলেন ‘তুপামারোস ন্যাশনাল লিবারেশন মুভমেন্ট’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। এই গেরিলা সংগঠনটি কিউবার বিপ্লব ও আন্তর্জাতিক সমাজতন্ত্র দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল এবং সে সময় উরুগুয়ের তথাকথিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
এই পথচলায় মুহিকা অন্তত চারবার গ্রেফতার হন, একাধিকবার গুলিবিদ্ধ হন, এবং মোট ১৪ বছরের বেশি সময় কাটান কারাগারে—এর একটি বড় অংশ তাকে একক কক্ষে রাখা হয় যেখানে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারানোর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছান। মুক্তির পর তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং ২০১০ সালে উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
সমাজ সংস্কারে অগ্রণী ভূমিকা
রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন মুহিকার নেতৃত্বে উরুগুয়ে বিশ্বে প্রথমবারের মতো গাঁজা সেবনের বৈধতা দেয়। একইসঙ্গে দেশে বৈধ হয় গর্ভপাত ও সমলিঙ্গের বিয়ে। এসব সংস্কারের কারণে তিনি লাতিন আমেরিকা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী নন্দিত নেতা হিসেবে পরিচিতি পান।
২০১৮ সালে তার জীবন অবলম্বনে নির্মিত হয় নেটফ্লিক্স ডকুমেন্টারি “El Pepe: A Supreme Life”, যেখানে ফুটে ওঠে তার সংগ্রাম, জীবনদর্শন ও গভীর মানবতাবোধ।
বিদায়ের ক্ষণে শ্রদ্ধা
তার মৃত্যুতে লাতিন আমেরিকার নানা দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিশ্বনেতারা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট লুইস আর্সে, কলম্বিয়ার গুস্তাভো পেত্রো এবং মেক্সিকোর ক্লাউদিয়া শেইনবাউম তাঁকে ‘সত্যিকারের নেতা’ আখ্যা দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
হোসে মুহিকা একবার বলেছিলেন,
“আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন ছিল যেদিন আমি কারাগার থেকে মুক্তি পাই। রাষ্ট্রপতি হওয়ার দিনকেও তার সঙ্গে তুলনা করা যায় না।”
তাঁর এই বক্তব্যেই যেন ফুটে ওঠে এক জীবন্ত কিংবদন্তির প্রকৃত স্বরূপ।