মার্কিন হামলা: ট্রাম্পের ‘দুই সপ্তাহ’ সময়সীমা কেন দুই দিনেই ভাঙলো?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধে আলোচনার জন্য দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছিলেন। তবে আশ্চর্যজনকভাবে মাত্র দুই দিন পরেই, শনিবার রাতে, ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় আকস্মিকভাবে হামলা চালান তিনি। এই ঘটনার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন — ট্রাম্প কি ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিমূলক সময়সীমা দিয়েছিলেন, নাকি পর্দার আড়ালের আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন?
হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের ফর্দো, নাতাঞ্জ এবং ইস্পাহান অঞ্চলের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্র। যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান ফর্দো স্থাপনায় ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা নিক্ষেপ করে, যা গভীর মাটির নিচে অবস্থিত স্থাপনাও ধ্বংস করতে সক্ষম। একইসঙ্গে নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান লক্ষ্য করে নৌবাহিনীর সাবমেরিন থেকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, হামলার পেছনে তিনটি সম্ভাব্য কারণ রয়েছে। প্রথমত, ট্রাম্প সম্ভবত ইরানকে বিভ্রান্ত করতে দুই সপ্তাহের সময়সীমা ঘোষণা করেছিলেন, যাতে তারা প্রস্তুতির সুযোগ না পায়। দ্বিতীয়ত, গোপনে কোনো আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা ব্যর্থ হয়ে থাকতে পারে। জানা গেছে, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা স্টিভ উইটকফ মধ্যস্থতায় ছিলেন। তৃতীয়ত, নতুন কোনো গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হঠাৎ হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকতে পারে। যদিও ট্রাম্প এর আগে ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম সংক্রান্ত রিপোর্টকে “অতিরঞ্জিত” বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
হামলার পর ট্রাম্প দাবি করেন, “ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।” তবে ইরান এই দাবিকে অস্বীকার করে জানায়, তারা আগে থেকেই পারমাণবিক উপকরণ অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছিল। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করে যুক্তরাষ্ট্রকে কঠিন পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন।
এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। রিপাবলিকানদের একটি অংশ এই পদক্ষেপকে সমর্থন করলেও, ডেমোক্র্যাটরা একে অসাংবিধানিক বলে নিন্দা জানিয়েছেন। এমনকি ট্রাম্পের নিজ দলের কয়েকজন সিনেটরও হঠাৎ করে নেওয়া এই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
হামলার পর ট্রাম্প আবারও ইরানকে শান্তির পথে ফিরতে আহ্বান জানিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “এখন না মানলে ভবিষ্যতের হামলা আরও ভয়াবহ হবে।” তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইরান এই হামলার পাল্টা জবাব দিতে পারে, যার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরও বাড়বে।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূমিকা নতুন করে আলোচনায় এসেছে। একইসঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও কৌশল নিয়েও বিশ্বব্যাপী প্রশ্ন উঠেছে।