সর্বশেষ আন্তর্জাতিক রাজনীতি অর্থনীতি দেশ ভিডিওচিত্র ২

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাত এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে প্রতিটি মুহূর্তে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে—কখনো পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের, কখনো আলোচনার। এই সংকটের কেন্দ্রে আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যার সিদ্ধান্ত এ মুহূর্তে শুধু ওয়াশিংটন নয়, প্রভাব ফেলছে তেহরান, তেলআবিব এবং গোটা বিশ্বের রাজনীতিতে।

ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অবস্থান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিনি একদিকে ইসরাইলের প্রতি স্পষ্ট সমর্থন জানিয়ে আসছেন, আবার অন্যদিকে যুদ্ধ এড়ানোর বার্তাও দিয়ে চলেছেন। এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব আন্তর্জাতিক মহলে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। বাস্তবতা হলো, ট্রাম্পের সামনে এখন তিনটি মূল কৌশলগত বিকল্প খোলা রয়েছে।

প্রথমত, তিনি চাইলে ইসরাইলের চাপের মুখে সরাসরি সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রকে সম্পৃক্ত করতে পারেন। এরই ইঙ্গিত আমরা পেয়েছি ১৩ জুন, যখন ইসরাইল তেহরানে বোমাবর্ষণ করে, আর ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দেন—ইরান যদি চুক্তিতে না আসে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের বোমা ব্যবহৃত হবে। ইরান যেন কখনোই পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে না পারে, সে বিষয়ে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু উভয়ই একমত। এই পথে হাঁটলে সংঘাত তীব্র হবে, তবে ট্রাম্পের ‘চুক্তিবাজ’ পরিচয়ের সঙ্গে তা সাংঘর্ষিক হতে পারে।

দ্বিতীয় বিকল্পটি হলো সীমিত সহায়তা এবং কৌশলগত দূরত্ব বজায় রেখে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। এখন পর্যন্ত ট্রাম্প বলছেন, ইসরাইলের সামরিক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত নয়। যদিও বাস্তবে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও নৌবাহিনীর জাহাজ ইতিমধ্যে ইসরাইলকে প্রতিরক্ষা সহায়তা দিচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একাংশ ট্রাম্পকে সতর্ক করেছেন—যেকোনো অতিরিক্ত পদক্ষেপ সংঘাত আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনির ওপর হামলার প্রস্তাবেও ট্রাম্প সায় দেননি বলে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

তৃতীয় পথ হলো পুরোপুরি পিছু হটা এবং ইসরাইলকে নিরপেক্ষভাবে সামলানো। এই পথে হাঁটলে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতি দৃঢ়তা প্রমাণিত হয়, বিশেষ করে যখন MAGA আন্দোলনের অনেক অনুসারীই প্রশ্ন তুলছেন—কেন আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে বারবার জড়িয়ে পড়ে। তারা বলছেন, দেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তা আগে। সাংবাদিক টাকার কার্লসন এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “এ যুদ্ধ মানে আমেরিকাবাসীর বিশ্বাসঘাতকতা।”

এই তিনটি পথের মধ্যে কোনটি ট্রাম্প বেছে নেবেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়। কিন্তু কিছু সাম্প্রতিক ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে, বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে। যেমন ১৭ জুন, ট্রাম্প জি-৭ সম্মেলন ত্যাগ করে আকস্মিকভাবে ওয়াশিংটনে ফিরে আসেন। ট্রুথ সোশ্যালে তিনি তেহরানের জনগণকে শহর ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান, যদিও এ নিয়ে তিনি বলেন, “এটা যুদ্ধবিরতির জন্য নয়, এর চেয়েও বড় কিছু।”

ফেরার পরপরই ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকেন, যেখানে পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠকে হয়তো চূড়ান্ত কোনো কৌশল নির্ধারণ করা হবে—যা শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নয়, ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্যও নির্ধারক হতে পারে।

ট্রাম্পের এই দ্বিধার পেছনে রয়েছে কিছু গভীর কারণ। একদিকে তিনি চান, তাঁর প্রশাসন ‘শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী’ হিসেবে স্মরণীয় হোক, যা তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের দিকে এগিয়ে নিতে পারে। অন্যদিকে রিপাবলিকান দলের অভ্যন্তরে ইসরাইলপন্থী এবং 'আমেরিকা ফার্স্ট' দুটি বিপরীতমুখী চাপ একসাথে কাজ করছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে কৌশলগত বিবেচনা—ইরানকে আলোচনায় আনতে চাপ তৈরি করা, আবার এমন কিছু না করা যাতে পুরো অঞ্চল জ্বলে ওঠে।

সবশেষে, এই পরিস্থিতি শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক অবস্থান এবং ট্রাম্পের নেতৃত্বের ধারাকেও নির্ধারণ করবে। আগামী দিনগুলোতেই হয়তো জানা যাবে, ট্রাম্প কোন পথ বেছে নিচ্ছেন—যুদ্ধ, চুক্তি না কি নিরপেক্ষ পিছু হটা।

আরও পড়ুন...

জনপ্রিয়

সর্বশেষ খবর