শাহবাজ শরিফের দাবি: যুদ্ধবিরতিই পাকিস্তানের "ঐতিহাসিক বিজয়"
শাহবাজ শরিফের দাবি: যুদ্ধবিরতিই পাকিস্তানের "ঐতিহাসিক বিজয়"ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের জেরে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে শান্তির বার্তা
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ শনিবার (১১ মে ২০২৫) রাষ্ট্রীয় ভাষণে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি ঘোষিত যুদ্ধবিরতিকে "পাকিস্তানের ঐতিহাসিক বিজয়" হিসেবে অভিহিত করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় এই সমঝোতা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানান, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সৌদি আরব, তুরস্ক ও যুক্তরাজ্যের ভূমিকার প্রশংসা করেন ।
যুদ্ধবিরতির প্রেক্ষাপট ও শরিফের বক্তব্যের মূল
১. "বিজয়" দাবির যুক্তি: শরিফের মতে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ভারতের আগ্রাসনকে সফলভাবে মোকাবিলা করেছে। তিনি সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আসিম মুনির, নৌ ও বিমানবাহিনীর নেতৃত্বকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দেন এবং বলেন, "শত্রুর অস্ত্র নীরব করে দেওয়া হয়েছে" ।
২. আন্তর্জাতিক ভূমিকা: ট্রাম্পের মধ্যস্থতাকে "অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ" আখ্যা দিয়ে শরিফ বলেন, চীন পাকিস্তানের "বিশ্বস্ত ও অত্যন্ত কাছের বন্ধু" হিসেবে সংকটকালে পাশে দাঁড়িয়েছে ।
৩. ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ: শরিফ দাবি করেন, ভারত ড্রোন হামলা চালিয়ে পাকিস্তানের মসজিদ ও বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে এবং নিরীহ নাগরিক হত্যার অভিযোগ তুলে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান ।
৪. ভারতের পাল্টা অভিযোগ: যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, পাকিস্তান "বারে বারে সমঝোতা ভেঙেছে" এবং ভারতীয় সেনা "যথোচিত জবাব" দিচ্ছে । তবে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আত্তাউল্লাহ তারার এসব অভিযোগকে "ভিত্তিহীন" বলে খারিজ করেন ।
সংঘাতের ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ আলোচনার ইঙ্গিত
কাশ্মীর ও পানিবণ্টন ইস্যু: শরিফ আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের আশা প্রকাশ করেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় ভারতকে বৈঠকে বসার আহ্বান জানান ।
যুদ্ধের পরিণতি সতর্কতা: তিনি বলেন, "পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের যুদ্ধে কেউ বেঁচে থাকবে না। আমাদের সম্পদ যুদ্ধে নয়, জনগণের উন্নয়নে ব্যয় করা উচিত" ।
প্রতিক্রিয়া ও পরিস্থিতির গতিপথ
বাংলাদেশের অবস্থান: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস দুই দেশের যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানান।
আন্তর্জাতিক চাপ: যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয় পক্ষকে সংযমের পরামর্শ দিলেও উত্তেজনা প্রশমনে ড্রোন যুদ্ধের মতো নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার চলমান থাকায় পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে ।
শাহবাজ শরিফের ভাষণে যুদ্ধবিরতিকে "বিজয়" হিসেবে প্রচার করলেও বাস্তবতা এখনো অনিশ্চিত। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে অভিযোগ ও পাল্টা-অভিযোগের চক্র এবং কাশ্মীর ইস্যুতে দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থা শান্তি প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতা ও উভয় দেশের নেতৃত্বের রাজনৈতিক সদিচ্ছাই কেবল স্থায়ী সমাধানের পথ দেখাতে পারে।