ভারত-পাকিস্তান সংঘাত: রাশিয়া কাকে সমর্থন করবে?
দক্ষিণ এশিয়া যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে: ভারত ও পাকিস্তান রকেট হামলা চালিয়েছে পরস্পরের বিরুদ্ধে। উভয় দেশই রাশিয়ার কৌশলগত অংশীদার। মস্কো কার পক্ষে অবস্থান নেবে এবং এই সংঘাত নিরসনে কী ভূমিকা রাখতে পারে?
কাশ্মীর সংকট ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনার দিকে রাশিয়া সতর্ক দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে। মস্কো দুই দেশকেই সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে, যাতে অঞ্চলের পরিস্থিতির আরও অবনতি এড়ানো যায়।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, “আমরা আশা করি, নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যকার মতপার্থক্য ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি ও ১৯৯৯ সালের লাহোর ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিক উপায়ে দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান হবে।”
ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার। গত বছর ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্যিক লেনদেন রেকর্ড ৭০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর রাশিয়া ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। গত বছর গ্রীষ্মে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্রেমলিনে সাক্ষাৎ করেন।
ওই বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয় এবং ২০৩০ সালের মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সংসদীয় নির্বাচনে জয়লাভের পর এটি ছিল তার দ্বিতীয় বিদেশ সফর।
অন্যদিকে পাকিস্তানও রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। গত বছর দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। রাশিয়ায় নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত মহম্মদ খলিল জামালি বলেছেন, ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে ক্রেমলিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৬৬ সালের দ্বিতীয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর তাসখন্দ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা পালন করেছিল।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভও জানিয়েছেন, ক্রেমলিন দুই দেশের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনায় উদ্বিগ্ন। তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সম্ভাব্য যোগাযোগের বিষয়ে তথ্য প্রদান করা হবে।
রাশিয়ার ফিনান্সিয়াল ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিশ্লেষক ডেনিস ডেনিসভ TRT Russian-এ মন্তব্য করেছেন, এই সংঘাত সমাধানে ক্রেমলিন কী ভূমিকা রাখতে পারে।
— ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে রাশিয়া কাকে সমর্থন করবে?
ডেনিসভ বলেন, “রাশিয়া শান্তভাবে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে এবং কোনো পক্ষ নেয়া থেকে বিরত থাকবে। কারণ, এই সংঘাত বহু পুরোনো ও জটিল। ভারত ও পাকিস্তান— উভয়েই রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার; আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিতেও। সুতরাং, এক পক্ষকে সমর্থন করলে বাড়তি সুবিধা আসবে না, বরং ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি।”
— এই সংঘাত নিরসনে মস্কো কী ভূমিকা রাখতে পারে?
“মধ্যস্থতাকারী, শান্তিরক্ষক এবং আলোচনার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করা—সবকিছুই সম্ভব। ইতিমধ্যে মস্কো এই 'সৎ সেবা' প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে। উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে, মস্কো ঠিক এই ভূমিকাই পালন করবে। এখন দেখা যাক, ভারত ও পাকিস্তান কী সিদ্ধান্ত নেয়।”