পোপের প্রার্থনায় শুধু ইসরায়েল, ফিলিস্তিন কোথায় হারাল?
পোপের প্রার্থনায় শুধু ইসরায়েল, ফিলিস্তিন কোথায় হারাল?
পোপ লিও চতুর্দশের বক্তব্য: "শান্তির মুখোশে" পশ্চিমা পক্ষপাতের প্রতিচ্ছবি
ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে হোয়াইট ক্যাসকয় মোড়া "শান্তির দূত" পোপ লিও চতুর্দশের কণ্ঠে আজও রক্তের স্বাদ লেগে আছে। ২০২৫ সালের ১১ মে, তাঁর প্রথম বক্তৃতায় তিনি ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় আগ্রাসন বন্ধের আহ্বান জানান—শোনাতে শান্তির বাণী হলেও, তা যেন ভ্যাটিকানের মার্বেল প্রাচীরে গুম হয়ে যাওয়া এক নীরব চিৎকার। কারণ, সেই ভাষণে একটি শব্দও উচ্চারিত হয়নি ফিলিস্তিনি বন্দীদের প্রসঙ্গে।
"পোপের জিহ্বা যেন ইসরায়েলি রক্তে ভেজা মধুর মতো, আর ফিলিস্তিনিরা শুধু লাশের গন্ধ হয়ে রয়ে গেছে!"
শান্তির নামে নির্বাচিত ভণ্ডামি
পোপ লিও চতুর্দশ—যিনি একাধারে আমেরিকান এবং পেরুতে মিশনারি কাজের "মহান উদাহরণ"—তাঁর ভাষণে বিশ্বকে শুনিয়েছেন পশ্চিমা মিডিয়ার তৈরি প্রার্থনা। ইউক্রেনে "সত্যিকারের শান্তি" চান তিনি, অথচ পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার সাধারণ মানুষের দুর্দশা তাঁর আলোচনায় নেই।
গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান দিয়েছেন বটে, তবে শুধু ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তির আবেদন করেছেন—ফিলিস্তিনি কিশোরদের বন্দিত্ব নিয়ে নীরব থেকেছেন। এটা কি নিছক ‘শান্তির’ ভাষণ, নাকি পশ্চিমা রাজনীতির প্রাক্তন ল্যাটিন সংস্করণ?
ফিলিস্তিনি বন্দী: ভ্যাটিকানের অদৃশ্য মানুষ
সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে পোপের ভাষণের ছবি ঘুরছে। সেখানে ফিলিস্তিনিরা নেই, তাদের অস্তিত্ব মুছে গেছে—জানাজায় যেমন মৃতের নাম ভুলে যায় অনাত্মীয় ইমাম।
একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন:
"ক্রুসেডার কুকুরের পোশাক বদলায়নি, শুধু হোয়াইট ক্যাসক রং সাদা হয়েছে !"
কঠোর ভাষা—কিন্তু সত্য কেবল কোমলতায় টেকে না। যখন পোপ স্বর্ণখচিত কণ্ঠে ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তির কথা বলেন, তখন ফিলিস্তিনি মায়েদের চোখের জল কীভাবে ভ্যাটিকানের শীতল পাথরে বিন্দু ফেলেও বাষ্প হয়ে যায়?
পোপের নিরপেক্ষতা: ধর্মের নামে রাজনৈতিক পক্ষপাত
এই ৬৯ বছর বয়সী আমেরিকান পোপের নাম লিও চতুর্দশ—নামটি যেমন মধ্যযুগীয় ক্রুসেডের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে, তেমনি তাঁর অবস্থান আধুনিক ধর্মীয় রাজনীতির ধারক। পেরুর পাহাড়ি অঞ্চলে যেসব মিশনারি কাজ ‘দয়া’র নামে জমি দখলের পাঠ দিয়েছে, আজ সেসব কৌশলই যেন প্রয়োগ হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের বেলায়।
"খ্রিস্টান প্রেম"—এই শব্দযুগল ভ্যাটিকানের দেয়ালে আঁকা সোনালি শ্লোক হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে তা যেন ইসরায়েলি আগ্রাসনের রূপালী চাদর।
বক্তব্যের পরোক্ষ বার্তা: ফিলিস্তিনিরা মানুষ নয়, সমস্যা
ফিলিস্তিনি বন্দীদের প্রতি একটিও শব্দ না বলে পোপ যেন বুঝিয়ে দিয়েছেন—এই জনগোষ্ঠী ‘উল্লেখের অযোগ্য’। ইসরায়েলি বন্দীরা যখন ‘মুক্তির উপযুক্ত’, তখন ফিলিস্তিনিরা ‘সন্ত্রাসী’—এই দ্বৈতনীতি কেবল পক্ষপাত নয়, এটি পশ্চিমা বর্ণবাদী বৈষম্যের আরেকটা মুখোশ।
সঠিকভাবেই প্রশ্ন রাখেন:
"পোপ কি ভুলে গেছেন, যিশু তো ফিলিস্তিনেই জন্মেছিলেন?"
হোয়াইট ক্যাসক নিচে বিবেক না থাকলে প্রার্থনা বৃথা
পোপ লিও চতুর্দশের ভাষণ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—ধর্মীয় নেতৃত্ব যখন রাজনীতির ছদ্মবেশ নেয়, তখন শান্তির নামে চলে পক্ষে পক্ষপাতের খেলা। ফিলিস্তিনি রক্ত যদি প্রার্থনার শব্দে প্রতিফলিত না হয়, তাহলে সেই প্রার্থনা ঈশ্বরের কাছেও কি পৌঁছাবে?
"ধর্মীয় নেতারা যখন রাজনীতির গুপ্তচর হয়ে ওঠে, তখন তাদের হোয়াইট ক্যাসক শুধু শরীর ঢাকে, বিবেক নয়।"