ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে নতুন হুমকি: ইরানি অস্ত্র ও রুশ কৌশলিক জোট
ইউক্রেন যুদ্ধ দ্বিতীয় বর্ষে প্রবেশের পর ইরানের সরবরাহকৃত মারণাস্ত্র এবং রাশিয়ার সঙ্গে তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব সংঘাতের গতিপথকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও কূটনৈতিক বিশ্লেষণে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই জোট শুধু ইউক্রেন নয়, গোটা ইউরোপীয় নিরাপত্তাব্যবস্থার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
Fath-360 ক্ষেপণাস্ত্র: ইউক্রেনের জন্য ইরানি হুমকি
রাশিয়ার হাতে ইরানের Fath-360 স্বল্প-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পৌঁছানোর তথ্য ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় ১২০ কিলোমিটার এবং এটি শব্দের চেয়ে চারগুণ গতিতে লক্ষ্যভেদে সক্ষম।
সূত্র জানিয়েছে, ইরান ইতোমধ্যে রাশিয়াকে ৪০০টিরও বেশি Fath-360 সরবরাহ করেছে। যদিও ইরান সরাসরি লঞ্চার না পাঠালেও, রাশিয়া নিজস্ব সামরিক যান ব্যবহার করে এই ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করছে। ইউক্রেনের অবকাঠামো—বিশেষ করে বিদ্যুৎ গ্রিড, সেতু এবং জল ও জ্বালানিবাহী লাইন—এই হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু, যার ফলে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা হ্রাস: ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ছে
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মারাত্মক চাপের মুখে রয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সহায়তা হ্রাস পাওয়ায় রুশ আক্রমণের পূর্বাভাস পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে ইউক্রেনের প্যাট্রিয়ট মিসাইল সিস্টেম ও হিমার্স লঞ্চার এর মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে, এবং প্রশিক্ষণের ঘাটতির কারণে এসব প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহারেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবেলায় পশ্চিমা সহায়তা ছাড়া ইউক্রেনের পক্ষে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে।
কৌশলগত জোট: অস্ত্র, বাণিজ্য ও ভূরাজনৈতিক প্রভাব
রাশিয়া ও ইরান সম্প্রতি আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ করিডোর (INSTC) চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, যা কাস্পিয়ান অঞ্চল হয়ে ইরান, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যে রুশ পণ্যের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই করিডোরকে অস্ত্র পরিবহনের পথ হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে।
রাশিয়া ইতোমধ্যে ইরানকে এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যুদ্ধবিমান, এবং কৃত্রিম উপগ্রহ প্রযুক্তি সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা ইরানের পরমাণু
স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করতে পারে।
পরমাণু আলোচনা ও কূটনৈতিক জটিলতা
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে চলমান আলোচনা ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। মস্কোর সমর্থনে ইরান এখন উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রপ্তানির পরিকল্পনা করছে—যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা কাঠামোর জন্য নতুন সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
ইরান-রাশিয়ার মধ্যে চলমান অস্ত্র বিনিময় ইউক্রেন যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছে এবং পশ্চিমা জোটের সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
ইউক্রেনের সম্ভাব্য বিপর্যয়: কী ঘটতে পারে সামনে?
অবকাঠামোর ধ্বংস: রুশ মিসাইল হামলায় বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সেতুগুলোর ওপর সরাসরি আঘাত আসছে।
প্রযুক্তির সহজলভ্যতা: কম প্রশিক্ষিত সেনারাও Fath-360 ক্ষেপণাস্ত্র সহজে পরিচালনা করতে পারছে, যা ইরান-রাশিয়ার কৌশলগত সুবিধা বাড়াচ্ছে।
দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত: ২০২৪ সালে রাশিয়ার সামরিক ব্যয় ৩০ শতাংশ বেড়েছে, যা যুদ্ধের স্থায়িত্ব নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
উপসংহার: আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া জরুরি
ইরান-রাশিয়ার সামরিক সহযোগিতা শুধু ইউক্রেন নয়, গোটা ইউরেশীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট সমাধানে কূটনৈতিক সংলাপ, আন্তর্জাতিক চাপ এবং সমন্বিত সামরিক প্রস্তুতি ছাড়া টেকসই সমাধান সম্ভব নয়।