আরেক জুলাই অভ্যুত্থানের সাক্ষী হলো নেপাল
নেপালের আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনায় বসার আহ্বান দেশের প্রেসিডেন্টের
নেপালে তরুণদের টানা ২ দিনের বিক্ষোভ আন্দোলনের ফলে রাজপথে সংঘাত ও রক্তপাতের পর থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। এরপরই নিরাপত্তার দায়িত্ব কাঁদে পড়ে সেনাবাহিনীর উপর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য মাঠে নামেন সেনাবাহিনী।
চলমান সংকট সমাধানে লক্ষ্যে বিক্ষোভকারীদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন নেপালের সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও শেয়ারের মধ্য দিয়ে এই আহ্বান জানান।
জাতীয় ঐক্য ও ভৌগোলিক অখন্ডতা রক্ষায় সেনাবাহিনী সবসময় নিযুক্ত বলে জানান সেনাপ্রধান। এই আন্দোলনের ফলে দেশের সম্পদের পাশাপাশি ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান করেছেন অশোক রাজ সিগদেল।
গতকাল বিকালে কে পি শর্মা অলির পদত্যাগ ঘোষণার পর নেপালের প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের গুজব ছড়িয়ে ছিলো বলে কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ পেয়েছিলো।
এ পর্যায়ে মিথ্যা গুজব ছড়ানোর জন্য নেপালের ২৬ টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু টিকটক ও ভাইবারসহ ৫ টি অ্যাপ সরকারের শর্ত মানলেও অন্য অ্যাপ গুলো সেটি করেনি। এতে ফেসবুক, এক্স,ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবের মতো লিংকডইনে অ্যাপ গুলোই নেপাল থেকে চালু হচ্ছিলো না।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারনে নেপালি তরুণদের মধ্যে আরো ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ফলে সরকারে আরো অর্থনৈতিক বৈষম্য ও লাগামহীন দূর্নীতির বিষয়গুলো সামনে চলে আসে।
অনলাইনে এই ক্ষোভ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। গত সোমবার নেপালের রাজধানীর কাঠমুন্ডুসহ নেপালের আরো সাতটি শহরে হাজার হাজার তরুণ বিক্ষোভ শুরু করে। জেন-জি প্রদেশের তরুণদের এই বিক্ষোভ সেদিন নিহত হন ১৯জন এবং
আহত হন কয়েকশত।
এমন পরিস্থিতিতে চাপে পড়ে যায় সরকার। বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
এ পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের থামাতে কারফিউ জারি করা হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা কারফিউ উপেক্ষা করে সরকারি ভবনের পাশাপাশি মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করেন।
গতকাল দুই বিক্ষোভকারী নিহত হন। এ নিয়ে অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন প্রায় চারশতাধিক বিক্ষোভকারী। এ সংক্রান্ত তথ্য দেন কাঠমুন্ডুর সিভিল সার্ভিস হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক মোহন রেগমি।
গতকাল বিকালে পদত্যাগ ঘোষণা করেন দেশটির প্রধান মন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট পাওদেল তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। পার্লামেন্টকে নতুন সরকার গঠনে আহ্বান জানান তিনি। তবে নেপালের সংসদে এখন কোন দলের স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্টতা নেই। তাই আইনপ্রণেতারা হয়তো একটা অনিদিষ্ট সময়ের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করবে।