লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে উত্তাল জনতা: টানা তৃতীয় দিনেও সহিংস বিক্ষোভ
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে টানা তৃতীয় দিনের মতো চলেছে উত্তেজনাপূর্ণ বিক্ষোভ। গত শুক্রবার শুরু হওয়া এই আন্দোলন এখন রূপ নিয়েছে সহিংস সংঘাতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট এবং ন্যাশনাল গার্ডের সহায়তা নিচ্ছে।
অভিযানের সূত্রপাত ও প্রতিবাদের জন্ম
শুক্রবার (৬ জুন) ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিযান চালিয়ে অন্তত ৪৪ জন অভিবাসীকে গ্রেফতার করে। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে শহরজুড়ে রাতেই শুরু হয় বিক্ষোভ, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায়।
সহিংসতার ক্রমবর্ধমান বিস্তার
শনিবার (৭ জুন) প্যারামাউন্ট এলাকায় বিক্ষোভ তীব্রতর রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা পাথর, বোতল ও আতশবাজি ছুড়লে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে।
রোববার (৮ জুন) তৃতীয় দিনেও বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে। শতাধিক বিক্ষোভকারী লস অ্যাঞ্জেলেস ডাউনটাউনে জড়ো হয়ে ১০১ ফ্রিওয়ে বন্ধ করে দেয় এবং কয়েকটি স্বয়ংক্রিয় গাড়ি (Waymo) আগুনে পুড়িয়ে দেয়। পুলিশ ও ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা ফ্ল্যাশ-ব্যাং গ্রেনেড ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার রাতে ২,০০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েনের নির্দেশ দেন, যা ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসমের পূর্বানুমতি ছাড়াই কার্যকর হয়। গভর্নর নিউসম একে "উসকানিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত" আখ্যা দিয়ে হুঁশিয়ারি দেন যে, তিনি এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেবেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের সীমান্ত উপদেষ্টা টম হোমান জানিয়েছেন, পরিস্থিতি আরও অবনতি হলে সক্রিয় সামরিক বাহিনী মোতায়েনের কথাও বিবেচনাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে ক্যাম্প পেন্ডলটনের মেরিন সেনাদের সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।
স্থানীয় নেতৃত্বের কণ্ঠ
লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস বলেছেন,
"এই ধরণের অভিযান ও সামরিক হস্তক্ষেপ আমাদের শহরের নিরাপত্তা ও সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।"
গভর্নর নিউসম বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন,
"রিপাবলিকানদের এই নাটককে আকর্ষণীয় করে তুলতে দেবেন না।"
হোয়াইট হাউসের অবস্থান
হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বিক্ষোভকারীদের “সহিংস জনতা” হিসেবে চিহ্নিত করে জানিয়েছে, তারা আইসিই কর্মকর্তাদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে। প্রশাসনের দাবি, ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্ব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় ফেডারেল সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি ও নজরদারি
রোববার রাত পর্যন্ত পুলিশের তথ্যমতে, সহিংসতায় জড়িত অভিযোগে অন্তত ৪৪ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শহরের কয়েকটি অঞ্চলে কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা কৌশলগত অবস্থানে অবস্থান করছে।
সামগ্রিক মূল্যায়ন
এই ঘটনা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী গভীর রাজনৈতিক বিভাজন। ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতির বিপরীতে লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো অভিবাসীবহুল শহরগুলো দিন দিন প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠছে।