ইরানের সর্বোচ্চ নেতার উত্তরসূরি নির্বাচন: খামেনি তিনজনের নাম ঘোষণা করেছেন
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি নিজের মৃত্যুর পর ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টিকে সুশৃঙ্খল ও দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তিনজন সম্ভাব্য উত্তরসূরির নাম ঘোষণা করেছেন। নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এই তথ্য জানিয়েছে। খামেনির এমন পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে একটি কৌশলগত ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এবং খামেনির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ইসরায়েলের হুমকি তার এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছিলেন, “খামেনিকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।” এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও খামেনিকে ‘সহজ লক্ষ্য’ হিসেবে আখ্যা দেন। এসব হুমকির প্রেক্ষাপটে, খামেনি চান তার অনুপস্থিতিতে যেন ইরানের শাসনব্যবস্থায় কোনো শূন্যতা তৈরি না হয় এবং দ্রুত উত্তরসূরি নির্বাচন সম্ভব হয়।
ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, সর্বোচ্চ নেতার মৃত্যু হলে ৮৮ সদস্যবিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ পরিষদ (Assembly of Experts) নতুন সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচন করে। ১৯৮৯ সালে এই পদ্ধতিতে আয়াতুল্লাহ খামেনি নির্বাচিত হন। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। খামেনি নিজেই তিনজন সম্ভাব্য উত্তরসূরির নাম গোপনে চিহ্নিত করে রেখেছেন, যাদের মধ্য থেকে যেকোনো একজনকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যদিও তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি, ধারণা করা হচ্ছে তারা সবাই জ্যেষ্ঠ ধর্মীয় নেতা এবং ইরানের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবশালী ব্যক্তি।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। রাশিয়া সরাসরি ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছে, খামেনিকে হত্যার যেকোনো প্রচেষ্টা এই অঞ্চলে মারাত্মক অস্থিতিশীলতা ডেকে আনবে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “এই ধরনের পদক্ষেপ শুধু ইরান নয়, গোটা অঞ্চলকে অগ্নিগর্ভ করে তুলবে এবং চরমপন্থী শক্তিগুলোকে উস্কে দেবে।”
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ইরানে সম্ভাব্য সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এই পরিকল্পনায় নীতিগত অনুমোদনও দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, খামেনির হত্যার কোনো প্রচেষ্টা বাস্তবায়িত হলে তা চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন ধরনের ভূরাজনৈতিক সংঘাতের সূচনা করতে পারে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এই পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ইসরায়েল যদি আগ্রাসন বন্ধ করে, তবেই সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ উন্মুক্ত হবে।”
ইউরোপীয় ইউনিয়নও এই উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সত্যিই কি কোনো টেকসই কূটনৈতিক সমাধান সম্ভব?
সর্বোপরি, খামেনির এই পদক্ষেপ শুধু একটি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং তা একটি আঞ্চলিক উত্তেজনার কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে ইরানের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিশ্চিত করার একটি দূরদর্শী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এতে বোঝা যায়, ইরান চায় যে কোনো পরিস্থিতিতে তার রাজনৈতিক কাঠামো অটুট থাকুক এবং কোনোভাবেই নেতৃত্বের শূন্যতা সৃষ্টি না হোক।