সর্বশেষ আন্তর্জাতিক রাজনীতি অর্থনীতি দেশ ভিডিওচিত্র ২

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে বাড়ছে উদ্বেগ

বাংলাদেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে, বলছেন বিশ্লেষকরা

কাশ্মীরের পেহেলগাঁও কাণ্ডের পর ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব। সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত, বাণিজ্য-জাহাজ চলাচল বন্ধসহ সামরিক প্রস্তুতি বৃদ্ধি পাওয়ার পর সরাসরি হামলা-পাল্টা হামলায় জড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী।
এই সংঘাত যদি আরও বড় আকার ধারণ করে, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গুরুতর প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, এ অবস্থায় বাংলাদেশের উচিত হবে কোনো পক্ষ না নিয়ে কূটনৈতিকভাবে সতর্কতা বজায় রাখা এবং সম্ভাব্য ঝুঁকির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।


বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন,

"ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত যদি কেবল সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে প্রভাব কম হবে। তবে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ হলে বাংলাদেশের সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়ে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হতে পারে।"
তিনি বাংলাদেশের জন্য ‘দিল্লি বা ইসলামাবাদ-পন্থি নয়, বরং বাংলাদেশ-পন্থি’ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণের ওপর জোর দেন।

সিকিউরিটি অ্যানালিস্ট রব মজুমদার বলেন,

"পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে আপনিও নিরাপদ নন। বাংলাদেশকে এখনই মধ্যস্থতার মাধ্যমে উভয় পক্ষকে সংযত করতে ভূমিকা নিতে হবে।"


অর্থনীতির উপর সম্ভাব্য প্রভাব

১. বাণিজ্য ব্যাহত:
ভারতের সাথে বাংলাদেশের বার্ষিক ১৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে। বিশেষ করে পেঁয়াজ, সুতা, তুলা ও ওষুধের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের আমদানি ব্যাহত হতে পারে।

  1. মূল্যস্ফীতি:
    খাদ্য ও জ্বালানির দাম বেড়ে গেলে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে।

  2. পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি:
    আকাশ ও সমুদ্রপথে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাবে, যা ব্যবসায়িক খরচ বাড়াবে।

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন,

আমাদের ‘প্ল্যান বি’ প্রস্তুত রাখা উচিত। ভারতের বিকল্প হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে আমদানির ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।


সুপারিশসমূহ

১. নিরপেক্ষতা বজায় রাখা:
জাতিসংঘ ও আঞ্চলিক ফোরামে শান্তির পক্ষে অবস্থান নেওয়া।

২. জরুরি মজুদ গড়ে তোলা:
খাদ্য ও জ্বালানির সংকট মোকাবিলায় রিজার্ভ বাড়ানো।

৩. বিকল্প বাজার সন্ধান:
চীন, ভিয়েতনাম বা ইন্দোনেশিয়ার সাথে আমদানির চুক্তি সম্প্রসারণ।


ঢাকা চেম্বারের মতামত

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন,

"ভারত-পাকিস্তান সংঘাত দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য পরিবেশকে অস্থির করে তুলতে পারে। আকাশপথ ও স্থলসীমান্তে সরবরাহ ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়তে পারে, যার স্বল্পমেয়াদি প্রভাব বাংলাদেশের বাণিজ্যেও পড়বে। তবে আমাদের বহুমুখী ও স্থিতিশীল বাণিজ্য কাঠামো এ ধরনের ঝুঁকি সামাল দিতে প্রস্তুত।"

তিনি আরও বলেন,

"ভারতের সঙ্গে ১৪ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক বাণিজ্য স্থিতিশীল থাকবে বলেই আমরা আশাবাদী। পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্প্রসারিত বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিকল্প উৎস হিসেবে কার্যকর হতে পারে।"

ডিসিসিআই-এর অবস্থান স্পষ্ট:

“বাংলাদেশ কোনো পক্ষ নয়—আমরা শান্তির পক্ষে। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’—এই নীতিতে বিশ্বাসী। আঞ্চলিক শান্তি ও সংsলাপের মাধ্যমেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। তাই উত্তেজনা প্রশমনে সংযম ও দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন।”


আরও পড়ুন...

জনপ্রিয়

সর্বশেষ খবর