সর্বশেষ আন্তর্জাতিক রাজনীতি অর্থনীতি দেশ ভিডিওচিত্র ২

আজ ভোরে ইসরায়েল ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে। ইরানের স্থানীয় সময় ভোর ৪টার দিকে তেহরানে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ হামলার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেন।

এই হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো।


হামলার লক্ষ্য ও প্রভাব

ইসরায়েল জানিয়েছে, এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও সামরিক স্থাপনাগুলো। যেসব স্থানে আঘাত হানা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • নাতাঞ্জের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র

  • তেহরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড (আইআরজিসি) সদর দপ্তর

  • ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র

নিহত ও ক্ষয়ক্ষতি

হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন:

  • মেজর জেনারেল মোহাম্মদ হোসেন বাকেরি (ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান)

  • মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি (আইআরজিসি কমান্ডার)

  • পারমাণবিক বিজ্ঞানী ফেরেইদুন আব্বাসি সহ কমপক্ষে ৬ জন বিজ্ঞানী

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, হামলায় আবাসিক এলাকাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সেখানে শিশু ও বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।


ইসরায়েলের অবস্থান

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেন্জামিন নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় বলেন,
“এই অভিযানের লক্ষ্য ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ধ্বংস করা।”

এই অভিযানের নামকরণ করা হয়েছে "অপারেশন রাইজিং লায়ন"। নেতানিয়াহুর দাবি, ইরান যেকোনো মুহূর্তে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ জানান, এই হামলা ছিল একটি প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ। তার মতে, ইরান থেকে শিগগিরই ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার আশঙ্কা ছিল। এর প্রেক্ষিতে ইসরায়েলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে এবং সাময়িকভাবে বিমান চলাচল স্থগিত রাখা হয়েছে।


ইরানের প্রতিক্রিয়া

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেই বলেছেন, “ইসরায়েলকে এর চরম মূল্য দিতে হবে।”
ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র আবুলফজল শেখারচি জানান, “ইসরায়েল তিক্ত ও বেদনাদায়ক পরিণতি ভোগ করবে।”

ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী, ইরান থেকে পাল্টা হিসেবে প্রায় ১০০টি ড্রোন ছোড়া হয়েছে। এসব ড্রোনের একটি বড় অংশ জর্ডানের আকাশসীমায় বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে।


আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্র এই হামলায় তাদের সংশ্লিষ্টতা নাকচ করে দিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন,
“ইসরায়েল আজ একতরফাভাবে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নিয়েছে।”

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামলার সম্ভাবনা আগে থেকেই আঁচ করেছিলেন এবং তিনি কোনো বড় সংঘাত এড়াতে আগ্রহী বলে জানান।

আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে, হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বাড়েনি। তবে নাতাঞ্জের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সংস্থাটি নিশ্চিত করেছে।


ভবিষ্যতের আশঙ্কা

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে বড় সংঘাতের সূচনা করতে পারে। ইরান ইতোমধ্যেই প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছে এবং ইসরায়েলও পাল্টা পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এছাড়া, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার চলমান পারমাণবিক আলোচনা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে। উল্লেখ্য, হামলার আগে ইরান জানিয়েছিল যে তারা উন্নতমানের সেন্ট্রিফিউজ স্থাপন এবং তৃতীয় একটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা নির্মাণ করবে।

আরও পড়ুন...

জনপ্রিয়

সর্বশেষ খবর