ইরান-তুরস্ক-সৌদি-পাকিস্তানকে নিয়ে 'ইসলামিক আর্মি' গঠনের প্রস্তাব: নতুন সামরিক জোটের আভাস
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে একটি সামরিক প্রস্তাব। ইরানের পক্ষ থেকে সৌদি আরব, তুরস্ক ও পাকিস্তানকে নিয়ে একটি যৌথ ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এ প্রস্তাব ইরানের সাবেক রেভল্যুশনারি গার্ডস (আইআরজিসি) কমান্ডার মহসেন রেজাই-এর আগের বক্তব্যের ভিত্তিতে নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
প্রস্তাবের পটভূমি ও উদ্দেশ্য
২০২৩ ও ২০২৪ সালে বিভিন্ন বক্তব্যে মহসেন রেজাই মুসলিম দেশগুলোর জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ সামরিক জোট গঠনের আহ্বান জানান। তার মতে:
ফিলিস্তিন ইস্যু: ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গঠনের জন্য এই জোট গুরুত্বপূর্ণ।
পশ্চিমা হস্তক্ষেপ রোধ: যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের অনধিকার চর্চা প্রতিহত করাই এই বাহিনীর অন্যতম লক্ষ্য।
মুসলিম বিশ্বে স্থিতিশীলতা: মুসলিম ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হবে জোটের মূল ভিত্তি।
সম্ভাব্য সদস্য রাষ্ট্র ও অবস্থান
ইরান প্রস্তাবিত সামরিক জোটে অন্তর্ভুক্তির জন্য যেসব দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে:
ইরান: প্রস্তাবদাতা ও সম্ভাব্য নেতৃত্ব প্রদানকারী পক্ষ।
সৌদি আরব: পূর্বে ৩৪ জাতির একটি ইসলামিক সামরিক জোট গঠন করলেও সেখানে ইরান ছিল না।
তুরস্ক: ইতিপূর্বে ফিলিস্তিন ইস্যুতে সক্রিয় অবস্থান নিয়েছে।
পাকিস্তান: প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ইরানের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে মুসলিম ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে এখনো কোনো রাষ্ট্রই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্নি-শিয়া মতাদর্শগত বিভেদ এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বর্তমান প্রেক্ষাপট: ইরান-ইসরায়েল সংঘাত
এই প্রস্তাব এমন সময়ে এসেছে, যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা চরমে:
১৩ জুন: ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়, যাতে ১০৪ জন নিহত হয়।
১৬ জুন: ইরান হাইফা ও তেল আবিবে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এতে ৫ জন নিহত এবং মার্কিন দূতাবাস আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া: প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, মার্কিন স্বার্থে আঘাত এলে "পূর্ণ শক্তি দিয়ে জবাব" দেওয়া হবে।
আঞ্চলিক প্রভাব ও সম্ভাব্য ফলাফল
বিশ্লেষকদের মতে, এই জোট গঠনের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে নিম্নলিখিত প্রভাব পড়তে পারে:
ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য বদল: এই সামরিক গোষ্ঠী গঠিত হলে এটি ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা আরও তীব্র করতে পারে।
সৌদি-ইরান সম্পর্ক: দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়ন নাকি নতুন সংঘর্ষ— তা এখনও অনিশ্চিত।
তুরস্ক ও পাকিস্তানের ভূমিকা: এই দুটি দেশ কীভাবে অবস্থান নেয়, তা জোট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্ধারক ভূমিকা রাখবে।
সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ
ইরানের প্রস্তাবিত ‘ইসলামিক আর্মি’ আপাতত কেবল একটি ধারণা পর্যায়ে রয়েছে। যদিও মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকটে এ ধরনের উদ্যোগ সাময়িক গুরুত্ব পাচ্ছে, বাস্তবায়নের পথে রয়েছে জটিল কূটনৈতিক ও মতাদর্শগত বাধা। তবে মুসলিম বিশ্বে ভবিষ্যতে নতুন এক নিরাপত্তা কাঠামোর ভিত্তি হিসেবে এই আলোচনার গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, ডেইলি মেইল, মিডল ইস্ট মনিটর