সর্বশেষ আন্তর্জাতিক রাজনীতি অর্থনীতি দেশ ভিডিওচিত্র ২

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সপ্তম দিনে এসে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। শুক্রবার ভোর থেকে ইরান একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে ইসরায়েলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে। প্রতিেপক্রিয়ায় ইসরায়েলও তেহরানসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে পাল্টা বিমান হামলা চালিয়েছে।

ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বর্তমান চিত্র

বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ইরান টানা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে এবং প্রায় ৮–৯টি ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই আটকানো সম্ভব হয়েছে। তবে বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।

ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তেহরান ও আশপাশের এলাকায় পাল্টা বিমান হামলা চালানো হলেও সেসব হামলার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

মানবিক ক্ষয়ক্ষতি

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৩৯ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ২৬৩ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১৫৪ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি ও কৌশল

সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ইরান এবার যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে তা পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি গতিশীল ও প্রযুক্তিনির্ভর। কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক:

  • দ্রুতগামী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র: ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের একটি অংশ মাত্র ১২ থেকে ১৫ মিনিটে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে পৌঁছাতে সক্ষম।

  • হাইপারসনিক প্রযুক্তি: ফাত্তাহ-১ সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্র ম্যাক ১৫ গতিতে ছুটতে পারে, যা শব্দের চেয়ে ১৫ গুণ দ্রুত। এই ক্ষেপণাস্ত্র মাত্র ৮ মিনিটেই ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আঘাত হানতে সক্ষম।

  • দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র: সেজিল-২ নামের কঠিন জ্বালানির ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রায় ২,০০০ কিমি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা ইসরায়েলের গভীর অঞ্চলকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।

লক্ষ্যবস্তু ও ভৌগলিক প্রভাব

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে:

  • বিরসেবা শহর: ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় এই শহরে হামলার কারণে রেলস্টেশন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হয়েছে।

  • তেল আবিব ও হাইফা: রামাত গান ও হাইফা বন্দরে ইরানের হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। হাইফায় আহতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।

  • মেরন বিমানঘাঁটি: ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত এই সামরিক ঘাঁটিও ইরানের এক হামলায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।

কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

  • জাতিসংঘের বৈঠক: ইরানের অনুরোধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ শুক্রবার একটি জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে।

  • ইউরোপীয় তৎপরতা: জার্মানি, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জেনেভায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন, যেখানে মূল আলোচ্য হবে পারমাণবিক চুক্তি ও যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা।

  • মার্কিন অবস্থান: প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান ইস্যুতে সরাসরি হস্তক্ষেপের আগেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য আরও দুই সপ্তাহ সময় চেয়েছেন।

সামরিক বিশ্লেষণ ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ

সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কমে আসার পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে:

  1. ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ স্থাপনার বড় একটি অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে।

  2. দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইরান তাদের অস্ত্রভাণ্ডার সাশ্রয়ীভাবে ব্যবহার করছে।

এদিকে ইসরায়েলের আয়রন ডোম, ডেভিড স্লিং ও অ্যারো সিরিজ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে পারলেও ইরানের নতুন প্রজন্মের মিসাইল প্রযুক্তির সামনে কিছু দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

উপসংহার

এই সংঘাত শুধু ইরান ও ইসরায়েলকেই নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে একটি অনিশ্চয়তা ও বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে এবং দ্রুত কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জোরালো হচ্ছে। পরিস্থিতির আরও অবনতি রোধে প্রয়োজন তাৎক্ষণিক ও কার্যকর আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ।

আরও পড়ুন...

জনপ্রিয়

সর্বশেষ খবর