ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ও ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি: মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার বিস্তারিত বিশ্লেষণ
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান সংঘাতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুঁশিয়ারিতে। সাম্প্রতিক হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইরানে সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত নয়। তবে ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়, তাহলে "অভূতপূর্ব শক্তি" দিয়ে জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম Truth Social-এ বলেন,
“ইরান যদি আমাদের ওপর হামলা চালায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী এমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে—যা ইতিহাসে কখনো দেখা যায়নি।”
তবে তিনি সম্ভাব্য কূটনৈতিক সমাধানের ইঙ্গিতও দিয়েছেন।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: পটভূমি
গত ১৪ জুন ভোরে ইসরায়েল ইরানের একাধিক পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় নজিরবিহীন হামলা চালায়।
‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে পরিচিত এই অভিযানে ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী ও শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা ছিলেন প্রধান লক্ষ্যবস্তু।
জবাবে, ইরান শক্তিশালী পাল্টা হামলা চালায়। ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, তারা ইরানের অন্তত ২০ জন সামরিক কমান্ডারকে হত্যা করেছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সতর্ক করেছেন, “ইসরায়েল হামলা বন্ধ না করলে এর চেয়েও কঠোর প্রতিশোধ নেওয়া হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের গোপন ভূমিকা ও আলোচনার প্রস্তাব
যদিও ট্রাম্প প্রকাশ্যে ইসরায়েলি হামলায় মার্কিন সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন, মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে—হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই অবগত ছিল।
এছাড়া, ইরান থেকে ছোড়া কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতেও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে।
ট্রাম্প কূটনৈতিক সমাধানের কথা বললেও ইরানকে সতর্ক করে দিয়েছেন,
“যদি তারা চুক্তিতে না আসে, তাহলে হামলা আরও ভয়ংকর হবে।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কথোপকথন হয়েছে বলে জানা গেছে। ট্রাম্প জানান,
“আমি ও পুতিন উভয়েই মনে করি—এই যুদ্ধ বন্ধ হওয়া উচিত।”
অন্যদিকে, ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বনির্ধারিত পারমাণবিক আলোচনা বাতিল হয়েছে। ওমান জানিয়েছে, ইরান এই আলোচনাকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে এতে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
সম্ভাব্য পরিণতি
বিশ্লেষকদের মতে, চলমান সংঘাত একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
ইসরায়েল ক্রমেই আন্তর্জাতিক মহলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা পুরো অঞ্চলে একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা জাগাচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা শান্তি স্থাপন ও কূটনৈতিক আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।