ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি: সত্যিই শান্তিচুক্তি নাকি আরও বড় সংঘাতের প্রস্তুতি
প্রায় দুই সপ্তাহ সময় যুদ্ধের পর অবশেষে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে তারা সম্মত হয়েছে। বিশ্বজনতা এতে স্বস্তি প্রকাশ করলেও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা একে “ভঙ্গুর” ও “সাময়িক” বা অস্থায়ী চুক্তি বলে ধারণা করছেন। যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলেও বাস্তবত এখনও অস্থিরতা রয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, “ইসরায়েল যদি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন না করে, ইরানও করবে না।” মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ২৪ জুন থেকে ধাপে ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। প্রথম ১২ ঘণ্টায় ইরান এবং পরের ১২ ঘণ্টায় ইসরায়েল তাদের সামরিক তৎপরতা স্থগিত ঘোষণা করে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে প্রতিশোধমূলক হামলার নির্দেশ দেন। ইরান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তেহরানেও একটি বিস্ফোরণের খবরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ইসরায়েলের দাবি, এটি একটি রাডার স্থাপনায় তাদের প্রতিশোধমূলক হামলা।
যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুরুতে ইসরায়েলকে যুদ্ধ স্থগিত করতে বলেন, পরে উভয় পক্ষকেই যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আহ্বান জানান। যুদ্ধবিরতির পরও নেতানিয়াহু হামলা করায় ইসরায়েলের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস মধ্যপ্রাচ্যের “চরম অস্থিতিশীলতা” নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিশ্লেষকরা এই যুদ্ধবিরতিকে টেকসই নয় বলে ধারণা করছেন। কারণ ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ও ইসরায়েলের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত উদ্বেগ এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। অন্যদিকে, হিজবুল্লাহ, হামাস ও ইয়েমেনের হুথিদের মতো ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে চলমান প্রক্সি যুদ্ধ পরিস্থিতিও আশঙ্কাজনক ।
যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতাকারী ট্রাম্প নিজেও একদিকে ইরানে “সরকার পরিবর্তন” এর ইঙ্গিত দিচ্ছেন, অন্যদিকে আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছেন—যা তাঁর কূটনৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই দোদুল্যমানতা ইরানকে আলোচনার পথে না এনে বরং তাদের প্রতিশোধের মনোভাব জাগিয়ে তুলতে পারে।
তথ্যসূত্রঃ আল জাযিরা