ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধে বড় ধাক্কা: আদালতের রায়ে স্থগিত বিশ্বব্যাপী শুল্ক আরোপ
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশ্বব্যাপী শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে তা স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে। গত ২৮ মে নিউইয়র্কের আদালতের এই রায় ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ অর্থনৈতিক নীতির ওপর একটি বড় আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে ।
সাংবিধানিক সীমালঙ্ঘন:তিন বিচারকের প্যানেল রায়ে উল্লেখ করেন, সংবিধান অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে, প্রেসিডেন্টের নয়। জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে ১৯৭৭ সালের ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ারস অ্যাক্ট (IEEPA)-এর অপব্যবহার করা হয়েছে । অবৈধ শুল্কের পরিধি: আদালতের মতে, ট্রাম্প কর্তৃক ঘোষিত বিশ্বব্যাপী ও প্রতিশোধমূলক শুল্ক প্রেসিডেন্টের এখতিয়ারের বাইরে, যা আদেশে উল্লিখিত হুমকির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় ।
প্রভাবিত শুল্ক: চীন, মেক্সিকো ও কানাডার ওপর আরোপিত পৃথক শুল্কও এই রায়ের আওতায় স্থগিত হবে ।
ট্রাম্প প্রশাসন
হোয়াইট হাউস তাৎক্ষণিক আপিল করেছে এবং ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি কুশ দেশাই বিবৃতিতে বলেন, জাতীয় জরুরি অবস্থা মোকাবেলার পদ্ধতি নির্ধারণ অনির্বাচিত বিচারকদের কাজ নয়। ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ‘ঈশ্বরের অভিযানে’ থাকার ইঙ্গিত দিয়ে মিম পোস্ট করে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান ।
২ এপ্রিল ঘোষণা: ট্রাম্প চীন, কানাডা, মেক্সিকোসহ ৬০টি দেশের পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেন, যার মধ্যে চীনের বিরুদ্ধে শুল্ক ১৪৫%-এ উন্নীত হয় । অর্থনৈতিক অস্থিরতা: ঘোষণার পর বৈশ্বিক বাজারে ধস নামে, ফলে ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করা হয় ।
মন্দার আশঙ্কা: গোল্ডম্যান স্যাকস ও জেপি মর্গান পূর্বাভাস দিয়েছে, ট্রাম্পের নীতির কারণে ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র মন্দায় প্রবেশ করতে পারে ।
ঐতিহাসিক সমান্তরাল: ১৯৩০-এর স্মুট-হলি ট্যারিফ অ্যাক্ট-এর মতো এই শুল্কও বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ ও মহামন্দার সূত্রপাত করতে পারে বলে সতর্ক করেন বিশেষজ্ঞরা ।
বাজার ও আইনি
শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন: আদালতের রায়ের পর এশিয়ার বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে—জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ১.৫% এবং অস্ট্রেলিয়ার এএসএক্স ২০০ সূচকও ঊর্ধ্বমুখী হয় । মামলার ধারা: লিবার্টি জাস্টিস সেন্টারের নেতৃত্বে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এবং ১৩টি অঙ্গরাজ্য এই শুল্কের বিরুদ্ধে মামলা করে 6।
আপিলের প্রক্রিয়া: ট্রাম্প প্রশাসনের আপিল দ্রুত নিষ্পত্তির সম্ভাবনা কম, যা শুল্ক স্থগিতাদেশকে দীর্ঘায়িত করতে পারে। বাণিজ্য চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন: রায় ডব্লিউটিওর মতো বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা পুনরুজ্জীবিত করতে পারে, যা ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে দুর্বল হয়েছিল ।
বিশ্লেষণ: আদালতের এই রায় কেবল একটি আইনি বাধাই নয়, বরং বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থার প্রতি সমর্থনের সংকেত। ট্রাম্পের একতরফা নীতির বিপরীতে এটি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি রেফারেন্স পয়েন্ট হয়ে থাকবে ।
ট্রাম্পপ্রশাসনইতোমধ্যেইএইরায়কে "বড়ধাক্কা" (ফ্রাঙ্কল্যাভিন) বলেউল্লেখকরলেও, বৈশ্বিকঅর্থনীতিরস্থিতিশীলতাফিরিয়েআনতেআদালতেরএইসিদ্ধান্ততাৎপর্যপূর্ণ।