গাজায় মানবিক সংকট: ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ১৪ হাজার শিশুর মৃত্যুর আশংকা
জাতিসংঘের জরুরি সতর্কতা
জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রম বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল টম ফ্লেচার সতর্ক করেছেন, গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ না পৌঁছালে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ১৪ হাজার শিশুর মৃত্যু হতে পারে। বিবিসির নিউজ টুডে প্রোগ্রামে তিনি বলেন,
“আমি যতটা পারি, এই ১৪ হাজার শিশুকে রক্ষা করতে চাই।”
এই সংখ্যাটি জাতিসংঘের মাঠপর্যায়ের কর্মীদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে। ফ্লেচার ব্যাখ্যা করেন,
“সেখানে আমাদের শক্তিশালী টিম আছে—যাদের অনেকেই নিহত হয়েছেন। তারপরও এখনো অনেকে সেখানেই আছেন। তারা চিকিৎসাকেন্দ্র ও স্কুলে অবস্থান করছেন এবং পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছেন।”
ত্রাণ প্রবেশের বর্তমান অবস্থা
ইসরায়েল ১১ সপ্তাহের অবরোধ কিছুটা শিথিল করলেও ত্রাণ প্রবেশের পরিমাণ এখনও চরমভাবে অপ্রতুল:
রবিবার মাত্র ৫টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে
সোমবার ৯টি ট্রাক কেরেম শালম ক্রসিং দিয়ে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে
ফ্লেচারের ভাষায়, এটি “সাগরে এক বিন্দু পানির মতো”
জাতিসংঘের লক্ষ্য মঙ্গলবারের মধ্যে অন্তত ১০০ ট্রাক প্রবেশ করানো
ফ্লেচার জোর দিয়ে বলেন,
“আমাদের গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তার বন্যা বইয়ে দিতে হবে।”
তিনি লুটপাট ঠেকাতে নিয়মিত ত্রাণ প্রবাহ নিশ্চিত করার, মানবিক কর্মীদের একাধিক রুট ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার এবং বাণিজ্যিক পণ্যসামগ্রীর প্রবেশাধিকার প্রদানের আহ্বান জানান।
গাজায় মানবিক সংকটের চিত্র
গাজাবাসীদের বর্ণনায় ভয়াবহ বাস্তবতা ফুটে উঠছে:
“বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য একটা রুটির টুকরো পর্যন্ত পাচ্ছি না।” — একজন গাজাবাসী
“ক্ষুধা ও খাদ্যের অভাবে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে।”
ডাল, চাল, ময়দা, তেল, চিনি ও গ্যাসের চরম অভাব
মানুষ এসবের জন্য “পাগলপ্রায়” হয়ে উঠছে
জাতিসংঘ জানায়, গাজার ২৩ লাখ মানুষই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত ৩১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বড় অংশ নারী ও শিশু। হাজার হাজার শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগছে, যাদের "কান্না করার মতো শক্তিও নেই।"
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা যৌথভাবে ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছে:
গাজায় সামরিক অভিযান আরও না বাড়ানোর আহ্বান
ত্রাণ প্রবাহ বাড়ানোর পরামর্শ
ফ্লেচারের মতে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি, তবে “জাতিসংঘের জন্য সত্যিকারের পরীক্ষা হবে আরও সহায়তা আদায় করা সম্ভব হয় কি না।”
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস গাজায় “বিপুল পরিমাণ মানবিক ত্রাণ সরবরাহের” আহ্বান জানিয়েছেন এবং ইসরায়েলকে এতে বাধা না দিতে অনুরোধ করেছেন।
ইসরায়েলের অবস্থান
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন:
“ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের চাপের কারণে” ন্যূনতম পরিমাণ ত্রাণ পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে
“বাস্তব ও কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দুর্ভিক্ষের দিকে যাওয়া যাবে না”
অবরোধের উদ্দেশ্য ছিল হামাসের ওপর চাপ প্রয়োগ
হামাসের হাতে এখনও ৫৮ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৩ জন জীবিত বলে ধারণা
ইসরায়েলের অভিযোগ, হামাস ত্রাণ চুরি ও অপব্যবহার করছে
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ফ্লেচার আশা প্রকাশ করেছেন, দ্রুত ত্রাণ প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব হবে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন,
“এটা হতাশাজনক হবে। আমরা বাধাগ্রস্ত হব এবং বিশাল ঝুঁকির সম্মুখীন হব। কিন্তু আমি এই শিশুদের খাবার ভেতরে পাঠানোর চেয়ে ভালো কোনো পথ দেখছি না।”
জাতিসংঘের মতে, গাজায় টেকসই শান্তি ও স্থায়ী সমাধানের জন্য দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান অপরিহার্য। তবে বর্তমান জরুরি পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা এবং শিশুদের জীবন রক্ষা করা।