সর্বশেষ আন্তর্জাতিক রাজনীতি অর্থনীতি দেশ ভিডিওচিত্র ২

দক্ষিণ এশিয়ার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বেইজিংয়ে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই স্পষ্ট করে বলেছেন—পাকিস্তানের “জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা” রক্ষায় চীন পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাবে। ২০২৫ সালের ২০ মে মঙ্গলবার এই বৈঠকটি হয় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে।

এমন সময় এই বার্তা এসেছে, যখন অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুকধারীর হামলার রেশ এখনো কাটেনি, বেলুচিস্তানে স্কুলবাসে গাড়িবোমা হামলায় প্রাণ হারিয়েছে তিন শিশুসহ পাঁচজন, যার জন্য পাকিস্তান সরাসরি ভারতকে দায়ী করেছে। এ ছাড়া ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সাম্প্রতিক সংঘাতের পর এক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এর মাঝেই চীন-পাকিস্তান কূটনৈতিক বার্তা এক নতুন মাত্রা যোগ করল।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে পাকিস্তানকে “আয়রনক্লাড ফ্রেন্ড”—অর্থাৎ ‘লৌহদৃঢ় বন্ধু’—উপাধিতে ভূষিত করেন। এই শব্দবন্ধটি দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধনের গভীরতা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এবং বর্তমান বাস্তবতায় তা কেবল প্রতীকী নয়, কৌশলগতও।

চীনের অবস্থান

ওয়াং ই বলেন, চীন পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় দৃঢ়ভাবে পাশে থাকবে। পাশাপাশি মতবিরোধগুলো সংলাপের মাধ্যমে সমাধানে পাকিস্তানের ভূমিকাকে সাধুবাদ জানান। তিনি আরও উল্লেখ করেন, চীন ও পাকিস্তান “সর্বকালীন কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব” (all-weather strategic cooperative partnership) আরও গভীর করবে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া

ইসহাক দার চীনের এই প্রকাশ্য সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং দুই দেশের সম্পর্ককে “ভ্রাতৃসুলভ, গভীর ও পারস্পরিক আস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত” বলে অভিহিত করেন। বৈঠকে তাঁরা চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (CPEC)-এর দ্বিতীয় পর্যায় ‘CPEC 2.0’ নিয়ে আলোচনায় মিলিত হন এবং দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক মতবিনিময় করেন।

আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বার্তা

এই সমর্থনের প্রেক্ষিতে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীন দক্ষিণ এশিয়ায় তার প্রভাব আরও জোরদার করছে। এটি একদিকে ভারত-চীন সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে, অন্যদিকে বাংলাদেশ-চীন-পাকিস্তান সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত অবস্থান চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

চীন-পাকিস্তান এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নতুন নয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চীন পাকিস্তানের অখণ্ডতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। বর্তমান সময়ে চীন যে অবস্থান নিয়েছে, তা সেই ঐতিহাসিক সম্পর্কেরই নবায়ন।

ভবিষ্যতের দিকে তাকালে দেখা যায়, চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক আরও বহুমাত্রিক হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে সামরিক সহযোগিতার প্রসার, অর্থনৈতিক একীভূতকরণ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একে অপরকে আরও কৌশলগতভাবে সমর্থন দেওয়া। CPEC 2.0-এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে নতুন মাত্রা দেওয়ার পাশাপাশি বেলুচিস্তানসহ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চীনের আরও সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশিত।

সব মিলিয়ে, চীন-পাকিস্তান এই জোট কেবল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয় নয়—এটি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক সমীকরণে এক বড় পরিবর্তনের বার্তা বহন করছে।

আরও পড়ুন...

জনপ্রিয়

সর্বশেষ খবর