সর্বশেষ আন্তর্জাতিক রাজনীতি অর্থনীতি দেশ ভিডিওচিত্র ২

গিলান, ইরান থেকে

ইরানে যুদ্ধ এখন আর কোনো কল্পনা নয়তা রূপ নিয়েছে ভয়াবহ বাস্তবতায়। গত এক সপ্তাহে দেশজুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহর থেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে মানুষ। তাদেরই একজন এই প্রতিবেদক নিজে।

১৩ জুন, ভোর রাত ৩টা পেরোনোর পরপরই তেহরান কেঁপে ওঠে একাধিক প্রচণ্ড বিস্ফোরণে। ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ড্রোন একযোগে চালায় আকাশপথে হামলা। পাল্টা জবাব দিতে ইরানও অভ্যন্তরীণভাবে ছোড়ে গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরক-ভর্তি ড্রোন।

তেহরানে বহু আবাসিক ভবন ধসে পড়ে। টার্গেট করা হয় সামরিক ঘাঁটি, বিমান প্রতিরক্ষা কেন্দ্র এবং ইস্পাহানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো। এসব হামলায় প্রাণ হারান অনেক বেসামরিক নাগরিক, সামরিক কর্মকর্তা এবং পারমাণবিক গবেষক।

শুক্রবার সকালে তেহরান যেন স্তব্ধ। আতঙ্কিত মানুষ, বিভ্রান্ত প্রশাসন। রাস্তাঘাট ছিল শুনসান, কেবলমাত্র জরুরি যানবাহন উদ্ধারকারী দল চলাফেরা করছিল। শহরের প্রায় প্রতিটি পেট্রল পাম্পে দেখা দেয় গাড়ির দীর্ঘ সারি।

পশ্চিম তেহরানের কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্যাট্রিস লুমুম্বা এলাকায় একাধিক বাড়ি সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে গেছে। সাদাত আবাদে ১৫ তলা একটি ভবনের একাধিক তলায় ধস। মার্জদারানে একটি ভবনের উপরের দুই তলা ধ্বংস। এসব স্থানে মূলত পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা বসবাস করতেন। হামলার ধরনে মনে হয়েছে, এগুলো ছিল পূর্বপরিকল্পিত টার্গেট কিলিং।

সেদিন রাতে তেহরানের আকাশে যেন ভাসছিল বিষাদের ধোঁয়া। পাল্টা জবাবে ইরান শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ড্রোন ছুড়ে দেয় ইসরায়েলের দিকে। এক সপ্তাহে অন্তত ১৬ দফা হামলা চালিয়েছে ইরান। তেহরান হুঁশিয়ার করে বলেছে ইসরায়েল থামলে তবেই থামবে পাল্টা জবাব।


এই যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। অনেকের আশঙ্কা, তিনি হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি সংঘাতে জড়াতে পারেন। যদিও তিনি নিজেই বলেছেন, এখনই কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি।

পরবর্তী কয়েকদিন তেহরানে দিনে দুপুরেও শোনা গেছে বোমার শব্দ। আলজাজিরার তথ্য অনুযায়ী, কোনো বিস্ফোরণ তাদের অফিসের মাত্র দুই কিলোমিটারের মধ্যে ঘটেছে। বিস্ফোরণের শব্দ, ধোঁয়ার কুণ্ডলীসবকিছু যেন বাড়িয়ে তুলেছে মানুষের আতঙ্ক।

ইসরায়েল এবং ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ইরানিদের রাজধানী ছাড়ার আহ্বান জানানোর পর শহরের রাস্তায় শুরু হয় গণপলায়ন। সরকারি মেট্রো স্টেশন মসজিদগুলোকে ঘোষণা করা হয় ২৪ ঘণ্টা খোলা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে। কারণ, ইরানে এখনো কার্যকর কোনো বোমা শেল্টার বা যুদ্ধকালীন জরুরি ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।

১৩ জুন, সোমবার। টানা তিনদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর আমার পরিবারসহ তেহরান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই। বিকেল ৪টার দিকে গিয়েছিলাম আমার প্রেমিকাকে নিতে। তার মাবাবা তখন হাসপাতালের দায়িত্বে ছিলেন, পরে তারাও তেহরান ত্যাগ করেন।

আল জাজিরা

আরও পড়ুন...

জনপ্রিয়

সর্বশেষ খবর