সর্বশেষ আন্তর্জাতিক রাজনীতি অর্থনীতি দেশ ভিডিওচিত্র ২

বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও বায়ুমানের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক ৬৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৭,৮২২ কোটি টাকা) সহায়তা অনুমোদন করেছে। এই অর্থ দুটি পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, উৎপাদনশীলতা এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

  • মোট অর্থায়ন: ৬৪০ মিলিয়ন ডলার

  • প্রথম প্রকল্প: জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার প্রকল্প – ৩৫০ মিলিয়ন ডলার

  • দ্বিতীয় প্রকল্প: বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প – ২৯০ মিলিয়ন ডলার

  • অনুমোদনের তারিখ: ১৯ জুন ২০২৫


১. জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার প্রকল্প (৩৫০ মিলিয়ন ডলার)

এই প্রকল্পের লক্ষ্য তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থার নিরাপত্তা জোরদার করা।

মূল কার্যক্রম:

  • পেট্রোবাংলার জন্য অর্থায়ন: সাশ্রয়ী শর্তে অর্থায়ন নিশ্চিত

  • বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ: আইডিএ গ্যারান্টি ব্যবহার করে ৭ বছরে ২.১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আহরণ

  • এলএনজি আমদানি বৃদ্ধি: বর্তমানে দেশের মোট গ্যাসের ২৫% এলএনজির মাধ্যমে পূরণ হয়, যার ৪২% ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎখাতে

  • দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি: স্পট মার্কেটের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দীর্ঘমেয়াদি আমদানি চুক্তি

প্রত্যাশিত সুফল:

  • বিদ্যুৎ খাতে নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী গ্যাস সরবরাহ

  • শিল্প ও গৃহস্থালিতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ

  • অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা

বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ওলায়িংকা বিসিরিয়ু এডেবিরি বলেন,

"এই প্রকল্পটি বাংলাদেশকে সাশ্রয়ী উপায়ে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে, যা শিল্প ও গার্হস্থ্য খাতে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।"


২. বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প (২৯০ মিলিয়ন ডলার)

বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহর ঢাকা—সহ দেশের অন্যান্য শহরে বায়ুদূষণ কমাতে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রধান উদ্যোগসমূহ:

  • পরিবেশ অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধি: আধুনিক মনিটরিং স্টেশন স্থাপন

  • রিয়েল-টাইম নিরীক্ষণ: শিল্পকারখানার নির্গমন সরাসরি পর্যবেক্ষণ

  • যানবাহন নির্গমন নিয়ন্ত্রণ:

    • ৪০০টি পুরনো ডিজেল বাসের পরিবর্তে বৈদ্যুতিক বাস চালু

    • ৫টি নতুন যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র নির্মাণ

    • ২০টি মোবাইল নির্গমন পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন

  • ই-বাস অবকাঠামো উন্নয়ন: চার্জিং স্টেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ ডিপো নির্মাণ

বাস্তব প্রেক্ষাপট:

  • ২০১৯ সালে বায়ুদূষণে বাংলাদেশে অকালমৃত্যু: ১,৫৯,০০০

  • স্বাস্থ্য খাতে ক্ষতি: জিডিপির ৮.৩%

  • ঢাকায় PM2.5 এর পরিমাণ WHO মানমাত্রার ১৮ গুণ

প্রত্যাশিত ফলাফল:

  • বার্ষিক ২,৭৩৪ মেট্রিক টন PM2.5 নির্গমন হ্রাস

  • জনস্বাস্থ্য ও বায়ুমানের উন্নয়ন

  • আঞ্চলিক পর্যায়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ

বিশ্বব্যাংকের প্রধান পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আনা লুইসা গোমেস লিমা বলেন,

"বায়ু কোনো সীমানা মানে না। এ প্রকল্প আঞ্চলিক পর্যায়ে সংলাপ ও তথ্যবিনিময়কে উৎসাহিত করবে, যা দূষণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ।"


অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ নির্দেশনা

বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন,

"বাংলাদেশের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা ও বায়ুমানের উন্নয়ন অর্থনৈতিক ও মানবিক অগ্রাধিকারের বিষয়। এই প্রকল্প দুটি গ্যাস সংকট ও বায়ুদূষণের মূল কারণ চিহ্নিত করে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান দিতে সহায়ক হবে।"

অতীত অভিজ্ঞতা:

বিশ্বব্যাংক ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান ও স্বল্পসুদে ঋণ প্রদান করেছে।


অন্যান্য সংশ্লিষ্ট উদ্যোগ

বাংলাদেশের পরিবেশ ও জ্বালানি খাতে চলমান উল্লেখযোগ্য প্রকল্পসমূহ:

  • নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে ২,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা

  • এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ১৩০ কোটি ডলারের সহায়তা, যার বড় অংশ পরিবেশ ও জলবায়ু সহনশীল প্রকল্পে বিনিয়োগযোগ্য

এই প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন যাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইলেকট্রিক যানবাহন ও আধুনিক বায়ু পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার প্রবর্তন শহরগুলোকে আরও বাসযোগ্য করে তুলবে।

আরও পড়ুন...

জনপ্রিয়

সর্বশেষ খবর