ক্রিপ্টো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পতনের জন্য দায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প
ঐতিহাসিক ভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সির ভাষায় অক্টোবর মাসকে বলা আপটোবার মাস অর্থাৎ ১২ মাসে ক্রিপ্টোকারেন্সি উত্থান-পতন হলেও অক্টোবর মাসে ক্রিপ্টোকারেন্সি দাম বাড়বে বলে প্রত্যাশা করেন সকল ক্রিপ্টো ব্যবহারকারীরা। এটা যে শুধু কথার কথা বিষয়টা মোটেও এমন নয়, বরং এর বাস্তব অনেক উদাহরণ রয়েছে। আমরা যদি ২০১২ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ক্রিপ্টো কারেন্সি আপ-ডাউন চার্ট দেখি তাহলে দেখবো:
২০১২ সালে অক্টোবর মাসে ডাউন (Down)
২০১৩ সালে অক্টোবর মাসে আপ (Up)
২০১৪ সালে অক্টোবর মাসে ডাউন (Down)
২০১৫ সালে অক্টোবর মাসে আপ (Up)
২০১৬ সালে অক্টোবর মাসে আপ (Up)
২০১৭ সালে অক্টোবর মাসে আপ (Up)
২০১৮ সালে অক্টোবর মাসে ডাউন (Down)
২০১৯ সালে অক্টোবর মাসে আপ (Up)
২০২০ সালে অক্টোবর মাসে আপ (Up)
২০২১ সালে অক্টোবর মাসে আপ (Up)
২০২২ সালে অক্টোবর মাসে আপ (Up)
২০২৩ সালে অক্টোবর মাসে আপ (Up)
২০২৪ সালে অক্টোবর মাসে আপ (Up)-ইতিবাচক ভাবে
আমরা যদি উপরিউক্ত তথ্য গুলো দেখি, ২০১২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তাহলে ১৩ বছরে ক্রিপ্টোতে ১০ বার আপ (Up) ট্রেন্ডে মার্কেট উত্থান হয়েছে এবং অপর দিকে ৩ বার ডাউন (Down) ট্রেন্ডে মার্কেট ডাউন হয়েছে। অর্থাৎ আমরা যদি এ বছর(২০২৫) সালের ক্রিপ্টো মার্কেট দেখি, তাহলে দেখবো অক্টোবর মাসে আপ (Up) নয় বরং ডাউন ট্রেন্ড চলছে। তবে এ কোন সাধারন ডাউন নয় কেননা গত ১৪ বছরেরও এমন ডাউন হয়নি যা ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে হয়েছে। তবে এর আসল কারন কি? ক্রিপ্টো কারেন্সিতে এই ধসের রহস্য কোথায়? এমন হাজারো প্রশ্ন রয়েছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নেটিজেনদের।
অন্য দিকে ১০ অক্টোবর শুক্রবার নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণার পর থেকেই ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে তীব্র অস্থিরতা দেখা দিয়েছে এর ফলে বিটকয়েন, ইথেরিয়ামের মতো প্রধান মুদ্রাগুলোর পাশাপাশি Toncoin (TON), Solana (SOL), এবং IoTeX (IOTX)-এর মতো বড় অল্টকয়েনগুলোর ব্যাপক দরপতন ঘটেছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেক ক্রিপ্টো ব্যবহারকারী দাবি করছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কার না পাওয়ার হতাশা থেকে বাজারে এই ধস নেমেছে।
গত ২৪ ঘন্টায় ক্রিপ্টো বাজার দাম অনেকটায় কমে গেছে। Solana (SOL)- এর দাম প্রায় ৭-৮% কমে $২০৫ ডলারে নেমে আসে, যা অক্টোবরের সর্বনিম্ন। অন্যদিকে Toncoin (TON) আরও বড় ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছে, এর দাম একদিনেই প্রায় ২৬% পর্যন্ত পতন হতে দেখা গেছে।
এছাড়াও গত ২৪ ঘন্টায়:
TUT- 62.11%
SOLV- 49.44%
HEI- 47.95%
KAVA- 47.43%
IOTX- 45.81%
HOOK- 40.18% আরও অনেক মুদ্রায় দাম কমেছে। যা কিনা গত ১৪ বছরের ইতিহাসে অক্টোবরে ক্যালেন্ডারে সর্বোচ্চ পতন। সার্বিকভাবে পুরো ক্রিপ্টো বাজার থেকে বিলিয়ন ডলারের মার্কেট ক্যাপ মুছে গেছে।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য একজন আলোচিত ব্যক্তি ছিলেন এবং তাঁর সমর্থকরা এ নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলেন। পুরস্কার ঘোষণার সময় কাছাকাছি আসতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জল্পনা-কল্পনা তুঙ্গে ওঠে। যখন নিশ্চিত হয় যে তিনি পুরস্কার পাচ্ছেন না, তখন থেকেই কিছু ক্রিপ্টো ব্যবহারকারী বাজারের পতনকে এর সাথে যুক্ত করতে শুরু করেন। তাদের মতে, ট্রাম্পের অনেক সমর্থক ক্রিপ্টো বিনিয়োগকারীরা এবং এই খবরটি বাজারে একটি নেতিবাচক চেতনা তৈরি করেছে, যার ফলে তারা বিনিয়োগ তুলে নিতে শুরু করেন।
তবে এদিকে বিশ্লেষকদের মতে, এই বিশাল পতনের পেছনে ভূ-রাজনৈতিক এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক কারণগুলোই প্রধান ভূমিকা পালন করেছে বলে জানান তারা।
আবার ১০ অক্টোবর শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে বড় আকারের শুল্ক আরোপের একটি ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার পরেই বিশ্ব শেয়ার বাজারের পাশাপাশি ক্রিপ্টো বাজারেও তীব্র শেয়ার বিক্রির চাপ শুরু হয়। বাণিজ্য যুদ্ধের এই নতুন উত্তেজনা বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ, ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে নিয়ে রাখছেেন।
JUST IN: Crypto market records largest single-day liquidation event in history.
জাস্ট ইন এর সূত্র অনুযায়ী, ক্রিপ্টো মার্কেটের ইতিহাসে একক দিনে সর্বোচ্চ বেশি দাম কমেছে এই দিনে। এবং বলা হয়েছে ১৯ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে এবং ১.৬৬ মিলিয়ন ট্রেডার লিকুয়েডেট হয়েছে। অর্থাৎ ১৯ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে এবং ১.৬৬ মিলিয়ন ট্রেডার ফান্ড শূন্য হয়েছে।
এদিকে ক্রিপ্টো ব্যবহারকারীরা অক্টোবর মাসকে কেন্দ্র করে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে তারা বিনিয়োগ বাড়িয়েছে যার ফলে তাদের প্রত্যাশা ছিল এবারের অক্টোবর মাসের আপ(UP) কে কাজে লাগানো। কিন্তু এবারের এই অক্টোবরের পতনের জন্য “আপটোবার”এর আশাভঙ্গ হয়েছে। অক্টোবর মাসকে ঐতিহাসিকভাবে ক্রিপ্টোর জন্য ভালো হলেও, এ বছর সেই ধারা শেষ পর্যন্ত বজায় থাকেনি।
এদিকে বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে যেমন (Telegram) এ ট্রাম্পকে কেন্দ্র করে অনেক ধরনের মন্তব্য করছে। কেননা ডোনাল্ড ট্রাম্পের নোবেল পুরস্কার না পাওয়ার বিষয়টি ক্রিপ্টো কমিউনিটির মধ্যে একটি মুখরোচক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাদের ভাষ্যমতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প নোবেল পুরস্কার না পাওয়ায় আপটোবার মাস আশাভঙ্গ হয়ে রেড অক্টোবর এর পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলে মনে করছেন তারা।
