বাংলাদেশে প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড: জুনের প্রথম ২১ দিনেই এসেছে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার
বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় বরাবরই একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। চলতি জুন মাসের প্রথম ২১ দিনেই প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে পাঠিয়েছেন ১.৯৯ বিলিয়ন ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ২৪ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকার সমান (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা ধরলে)। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এ আয় প্রায় ৪ শতাংশ বেশি। এই প্রবাহ অর্থনীতির জন্য এক ইতিবাচক বার্তা বয়ে এনেছে।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুন মাসে প্রবাসী আয়ের দৈনিক গড় ছিল ৯.৪৩ কোটি ডলার, যা মে মাসে ছিল ৯.৫৮ কোটি ডলার। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে প্রবাসীরা স্বজনদের কাছে বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন। এর পাশাপাশি সরকারের প্রণোদনা নীতি, অর্থ পাচার প্রতিরোধ এবং বৈধ চ্যানেলের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।
বর্তমান অর্থবছর ২০২৪-২৫–এর শুরু থেকে ২১ জুন পর্যন্ত মোট ২৯.৫ বিলিয়ন (২,৯৫০ কোটি) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬.৭ শতাংশ বেশি।
রেমিট্যান্সের বড় অংশই এসেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে—১৩০.৯৫ কোটি ডলার। এরপর রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক (৪২.৫৪ কোটি), বিশেষায়িত ব্যাংক (২৫.০৫ কোটি) এবং বিদেশি ব্যাংক (০.৩৫ কোটি ডলার)।
সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে—৩৩.৭৪ কোটি ডলার। এরপর রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (২৫.০৫ কোটি), অগ্রণী ব্যাংক (১৭.২৩ কোটি), ব্র্যাক ব্যাংক (১১.৮৬ কোটি) এবং রূপালী ব্যাংক (১০.৮২ কোটি)।
রেমিট্যান্সের এই প্রবাহে ডলার সংকট অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে। বাজারে বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভও বেড়ে এখন ২৪.৯৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্রবাসী আয় দায়মুক্তভাবে দেশে ডলার প্রবাহিত করে, যা অন্য কোনো উৎসে সম্ভব নয়।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স ছিল ২৩.২৯ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছর তা ইতিমধ্যেই ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে মার্চ ২০২৪-এ ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে—যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মাসে সর্বোচ্চ। মে ২০২৪-এ এসেছে ২.৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
যদিও চিত্রটি আশাব্যঞ্জক, তবে হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধ পথে অর্থ প্রেরণের ঝুঁকি এখনো রয়ে গেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব এবং আমদানির খরচ বৃদ্ধি নিয়েও সতর্ক থাকতে হবে।
সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার এবং প্রবাসীবান্ধব নীতিমালার মাধ্যমে এ লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হতে পারে।
জুন মাসের এই রেকর্ড রেমিট্যান্স শুধু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভই বাড়ায়নি, বরং ডলারের বাজারেও স্থিতিশীলতা এনেছে। সরকারের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ, বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যকর মনিটরিং এবং প্রবাসীদের আত্মীয়স্বজনের প্রতি দায়বোধ—সব মিলিয়ে এই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। তবে এই গতি ধরে রাখতে হলে হুন্ডির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং প্রবাসী আয়ের উৎপাদনশীল ব্যবহারে উৎসাহ অব্যাহত রাখতে হবে।