থাই রাজকীয় ঐক্যের প্রতীক: রানি মা সিরিকিতের চিরবিদায়
থাইল্যান্ডের মুকুট থেকে খসে পড়ল এক উজ্জ্বল রত্ন। যিনি ছিলেন রাজকীয় সৌন্দর্য, দৃঢ়তা এবং অফুরন্ত মমতার প্রতিচ্ছবি—সেই শ্রদ্ধেয় রানি মা সিরিকিত ৯৩ বছর বয়সে চিরবিদায় নিয়েছেন। থাই রয়্যাল প্যালেসের ঘোষণা অনুসারে, শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) দিবাগত রাতে রাজধানী ব্যাংককের একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন, রেখে গেলেন থাই জনগণের জন্য এক বিশাল শূন্যতা।
ঐতিহ্যের ধারক, সৌন্দর্যের দেবী:
রানি সিরিকিত ছিলেন থাইল্যান্ডের ইতিহাসে দীর্ঘতম শাসনকারী সম্রাট, প্রয়াত রাজা ভূমিবল আদুল্যাদেজের রাজমহিষী। সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি রাজার পাশে থেকেছেন, বিশ্ব মঞ্চে থাইল্যান্ডের সংস্কৃতি ও আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর ব্যক্তিত্বে মিশে ছিল ঐতিহ্য আর আধুনিকতার এক বিরল সমন্বয়, যা তাঁকে কেবল একজন রানী নয়, একজন আন্তর্জাতিক 'স্টাইল আইকন'-এর মর্যাদা দিয়েছিল।
জনতার রানি, সবুজ মাতা:
সিংহাসনের আভিজাত্য তাঁকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দূরে সরায়নি। বরং, তিনি নিজে হাতে অসংখ্য রাজকীয় প্রকল্প শুরু করেছিলেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল গ্রামীণ দরিদ্রদের জীবনযাত্রার উন্নতি।
'SUPPORT' নামক তাঁর মহৎ উদ্যোগটি গ্রাম বাংলার নারীদের হাতে তৈরি হস্তশিল্পকে বৈশ্বিক পরিচিতি এনে দেয়, যার মাধ্যমে হাজারো পরিবারের জীবিকা সুরক্ষিত হয়।
পরিবেশ সুরক্ষায় তাঁর নিবেদিত ভূমিকার জন্য তিনি সস্নেহে 'দ্য গ্রিন কুইন' নামে পরিচিত ছিলেন, যিনি প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করেছিলেন।
তাঁর ১২ আগস্টের জন্মদিনটি থাইল্যান্ডে জাতীয় মা দিবস হিসেবে পালিত হয়—যা থাই জাতির কাছে তাঁর মাতৃতুল্য আসনটিকেই নিশ্চিত করে।
রাজকীয় সম্মান ও দীর্ঘ শোক:
রানি মায়ের মহাপ্রয়াণে থাইল্যান্ড গভীর শোকে আচ্ছন্ন। রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের নির্দেশে ব্যাংককের গ্র্যান্ড প্যালেসে তাঁকে পূর্ণ রাজকীয় মর্যাদায় শেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে। রাজপরিবারের সদস্যরা এক বছরব্যাপী রাষ্ট্রীয় শোক পালন করবেন। গভীর শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ থাই প্রধানমন্ত্রী আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর সফর বাতিল করেছেন।
রানি মা সিরিকিত কেবল একজন রাজপরিবারের সদস্য ছিলেন না; তিনি ছিলেন ঐক্যের বাঁধন, দেশের আত্মার প্রতিধ্বনি। তাঁর উত্তরাধিকার অমর হয়ে থাকবে থাইল্যান্ডের মাটি ও মানুষের হৃদয়ে।
