কোরবানির চামড়ার বাজারে আবারও হতাশা, দাম কম
কোরবানির ঈদে পশুর চামড়ার কেনাবেচা শুরু হলেও সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রি হচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ঢাকার সায়েন্সল্যাব, মোহাম্মদপুর ও পুরান ঢাকার পোস্তা ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল শনিবার বড় ও মাঝারি গরুর লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়া ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং ছোট ও নিম্নমানের চামড়া ৬০০-৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী এই চামড়ার মূল্য হওয়া উচিত ছিল ১,৫০০ টাকার উপরে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবার প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম ঢাকায় ৬০-৬৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫৫-৬০ টাকা নির্ধারণ করে, যা গতবারের চেয়ে ৫ টাকা বেশি। কিন্তু বাস্তবে এ দামে চামড়া বিক্রি হচ্ছে না। ছাগলের চামড়ার প্রতি ব্যবসায়ীদের আগ্রহ নেই বললেই চলে—বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে তা বিক্রি হচ্ছে।
পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকার আড়তদাররা জানিয়েছেন, ট্যানারি মালিকরা আড়ত থেকে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনবেন ঠিকই, কিন্তু তাঁরা চামড়া কেনার সময় ২০-৩০ শতাংশ বাদ দিয়ে হিসাব করেন। ২০ বর্গফুটের কম চামড়া অনেক সময় নিচ্ছেন না।
মৌসুমি ব্যবসায়ীদের লোকসান
সায়েন্সল্যাব এলাকায় মৌসুমি ব্যবসায়ী কাউছার আহমেদ জানান, তিনি গরুর প্রতিটি চামড়া ৬০০-৭০০ টাকায় কিনে ১,২০০ টাকা করে বিক্রির চেষ্টা করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিক্রি করতে বাধ্য হন মাত্র ৭৫০ টাকায়। তাঁর মতে, চামড়াগুলোর ন্যায্য মূল্য ৮৫০-৯০০ টাকা হওয়া উচিত ছিল।
ট্যানারির পক্ষের যুক্তি
কালাম ব্রাদার্স ট্যানারির পরিচালক সাজেদুল খায়ের বলেন, তাঁরা এবার ১.৫ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ করবেন এবং গতবারের চেয়ে ৩০-৫০ টাকা বেশি দামে কিনেছেন। তবে চামড়া প্রক্রিয়াজাতে লবণ ও শ্রমিক খরচ বাবদ প্রতিটি চামড়ার পেছনে ৩৫০-৪০০ টাকা খরচ হচ্ছে, বাজার দুর্বল হওয়ায় তাঁরা কম দামে কিনছেন।
ঢাকার বাইরেও একই অবস্থা
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ বেলাল জানান, তিনি গড়ে ৪৫০ টাকায় চামড়া কিনেছেন, কিন্তু আড়তদারেরা প্রতিটি চামড়া ৩০০-৩৫০ টাকায় কিনতে চাইছেন। তবে চট্টগ্রামে কিছু কিছু এলাকায় ৬০০-৭০০ টাকা দাম উঠেছে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা।
বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে কোরবানির চামড়ার দরপতন চলছে। ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ ৮৫-৯০ টাকা বর্গফুট দর থাকলেও ২০১৯ সালে দরপতনের চূড়ান্ত রূপ দেখা যায়। সেবার ন্যূনতম দাম না পেয়ে বহু জায়গায় চামড়া ফেলে দেওয়া হয় বা পুঁতে ফেলা হয়।
চামড়াশিল্পের দূষণ সমস্যাও এই খাতকে আন্তর্জাতিক বাজারে পিছিয়ে দিচ্ছে। হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তরের পরও হেমায়েতপুর চামড়াশিল্প নগরের সিইটিপি পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। এর ফলে ইউরোপ-আমেরিকার ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশি চামড়া কিনছে না। চীনের মতো কিছু ক্রেতা দেশ দাম কমিয়ে নিচ্ছে।
রপ্তানির ইতিবাচক প্রবণতা
এদিকে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাংলাদেশ থেকে ১০৬ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় সাড়ে ১২ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াত উল্লাহ মনে করেন, রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা বাড়া উচিত ছিল।