ফরিদপুরের সড়কে ঝরে গেল এক উজ্জ্বল নক্ষত্র: এজিপি অ্যাডভোকেট মোসাদ্দেক বশিরের রহস্যজনক মৃত্যু।
ফরিদপুর জেলা আইনাঙ্গনের এক উদীয়মান প্রতিভা, অ্যাসিস্ট্যান্ট গভর্নমেন্ট প্রসিকিউটর (এজিপি) অ্যাডভোকেট মোসাদ্দেক আহমেদ বশির, এক মর্মস্পর্শী সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে প্রয়াত হয়েছেন। গত রোববার (২৬ অক্টোবর, ২০২৫) সন্ধ্যায় ফরিদপুর শহরের অদূরে বদরপুর এলাকায়, যা স্থানীয়ভাবে মন্ত্রীর বাড়ির কাছে হিসেবে পরিচিত, এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। তাঁর এই আকস্মিক বিদায়ে আইনী ও সামাজিক পরিমণ্ডলে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার।
এক নিভৃত যাত্রা, এক নিষ্ঠুর পরিণতি
জানা যায়, মোসাদ্দেক আহমেদ বশির, যিনি একইসাথে ফরিদপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর যুব বিভাগের সভাপতির গুরু দায়িত্ব পালন করছিলেন, কানাইপুরে দলীয় একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে নিজ গন্তব্যে ফিরছিলেন। পেছনে আরেকজন আইনজীবী মজিবর রহমান ছিলেন তাঁর সহযাত্রী।
সন্ধ্যার আবছা আলোয় সড়কে যখন জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ, তখনই নেমে আসে বিপর্যয়। প্রত্যক্ষদর্শী এক অটোরিকশা চালকের ভাষ্যমতে, তাঁর সামনে দিয়েই যাচ্ছিল মোসাদ্দেক বশিরের মোটরসাইকেলটি। হঠাৎ করেই পেছন থেকে আসা একটি অজানা ট্রাক বেপরোয়া গতিতে এসে অটোরিকশাটিকে পাশ কাটিয়ে মোটরসাইকেলটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। সেই ধাক্কায় মোসাদ্দেক বশির ছিটকে পড়েন এবং ট্রাকের চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই চিরদিনের জন্য স্তব্ধ হয়ে যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তবে আশ্চর্যের বিষয়, তাঁর সহযাত্রী মজিবর রহমান কেবল সামান্য আঘাত নিয়ে প্রাণে রক্ষা পান।
যে জনপ্রিয়তা নিয়ে তৈরি হয়েছিল সন্দেহের মেঘ
সরকারি এই আইন কর্মকর্তার অস্বাভাবিক মৃত্যু তাই কেবল দুর্ঘটনা নয়, বরং এক গভীর রহস্যের জন্ম দিয়েছে। নিহতের স্বজনরা এই ঘটনাকে সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না। তাঁদের ভাষ্যমতে, অল্প সময়েই মোসাদ্দেক বশির শুধু দক্ষ আইনজীবী হিসেবেই নয়, একজন জনপ্রিয় মানুষ হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তাঁর এই দ্রুত উত্থান ও জনপ্রিয়তা অনেকেই ভালো চোখে দেখেননি, যা তিনি প্রায়শই ঘনিষ্ঠজনদের কাছে প্রকাশ করতেন। স্বজনদের এই মন্তব্য দুর্ঘটনার পেছনে কোনো গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিলাপের সাগরে ডুবেছে হাসপাতাল
মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফরিদপুরের ৫০০ শয্যা হাসপাতালে নেমে আসে শোকের স্রোত। আইনজীবী সমিতির সহকর্মীরা, জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী এবং মোসাদ্দেক বশিরের অসংখ্য স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা শোকে বিহ্বল হয়ে ভিড় করেন। তাঁদের কান্না ও বিলাপ সেখানে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি করে।
আইনাঙ্গন এবং রাজনৈতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন, এই ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা হতে পারে না। এই তরুণ আইনজীবীর মৃত্যুরহস্য ভেদ করতে তাঁরা অবিলম্বে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের জোর দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, সত্য উদ্ঘাটিত হোক এবং দোষীরা যেন আইনের আওতায় আসে।
