পুরান ঢাকার সিঁড়িতে ফের রক্তের দাগ: কলেজছাত্র সজিবকে জিআই তারে পেঁচিয়ে নৃশংস হত্যা
ঢাকা, ২৫ অক্টোবর (শনিবার): পুরান ঢাকায় আবারও এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড, যা গোটা এলাকায় গভীর শোক ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। শনিবার বিকালে বংশালের আগামাসি লেনের একটি বাসার চারতলার সিঁড়ি থেকে সজিব নামে এক কলেজছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত সজিবের গলায় জিআই (গ্যালভানাইজড আয়রন) তার পেঁচানো ছিল।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে একই এলাকায় পরপর দুই তরুণের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে পুরান ঢাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।
রহস্যময় সিঁড়ি, তালাবদ্ধ ফ্ল্যাট
স্থানীয় বংশাল আহমেদ বাউনিয়া স্কুল ও কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলেন সজিব। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বংশাল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. দুলাল হক জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
"চারতলার সিঁড়িতে লাশটি উপুড় হয়ে পড়ে ছিল, এবং তার গলায় জিআই তার শক্তভাবে পেঁচানো ছিল। এটি স্পষ্টতই শ্বাসরোধ করে হত্যার একটি প্রাথমিক আলামত।" — এসআই মো. দুলাল হক, বংশাল থানা
পুলিশ নিশ্চিত করেছে, যে ভবনে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে, সেটি মূলত গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চারতলায় একটিমাত্র পরিবার থাকত, কিন্তু ঘটনার সময় ফ্ল্যাটটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল—যা এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য আরও ঘনীভূত করেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
প্রেম, বিচ্ছেদ ও মামাদের প্রতি অভিযোগ
ঢামেক হাসপাতালে উপস্থিত সজিবের পরিবার এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে প্রেমঘটিত বিরোধের ইঙ্গিত দিয়েছে।
শেষ সাক্ষাৎ: নিহতের চাচাতো ভাই মো. ইসলাম জানান, সজিব কিছুদিন আগে তাবলীগের সফর শেষে শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বাসায় ফেরেন। শনিবার বিকাল ৩টার দিকে একটি ফোন পেয়ে সে বাসা থেকে বের হয় এবং বিকালেই তার মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
৬ বছরের সম্পর্ক: ইসলাম অভিযোগ করেন, যে ফ্ল্যাট থেকে সজিবের লাশ উদ্ধার হয়েছে, সেখানেই তার প্রেমিকার পরিবার থাকত। ছয় বছর ধরে তাদের সম্পর্ক চললেও, মেয়েটির দুই মামা—ইকবাল ও কামাল—এই সম্পর্ক একেবারেই মেনে নিতে পারছিলেন না।
হত্যার অভিযোগ: সজিবের পরিবারের অভিযোগের তীর সরাসরি ওই দুই মামার দিকে। তাদের দাবি, ইকবাল ও কামাল পরিকল্পিতভাবে সজিবকে ডেকে নিয়ে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ঘটনার পর থেকে প্রেমিকার পরিবারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
পুনরাবৃত্তির আতঙ্ক
এর মাত্র ছয় দিন আগে, গত ১৯ অক্টোবর, পুরান ঢাকার আরেকটি বাসার সিঁড়ি থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসাইনের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। এই দুটি ঘটনার মধ্যে ভৌগোলিক নৈকট্য এবং হত্যার ধরন (সিঁড়িতে লাশ) স্থানীয়দের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা দুটি ঘটনাই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।
