সর্বোচ্চ বৃষ্টিতে প্লাবিত শহর ও উপকূল, আরও ক'দিন চলবে ঝরাপাত
সাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই বৃষ্টিপাত আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এরই মধ্যে শুক্রবার ঢাকায় মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে ১৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে, যা চলতি বর্ষা মৌসুমে সর্বোচ্চ। শুধু রাজধানী নয়, দেশের আরও বিভিন্ন অঞ্চলেও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে নোয়াখালীর মাইজদীকোর্টে—২৮৫ মিলিমিটার।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মাইজদীতে ১৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল,যা তখন পর্যন্ত ছিল সর্বোচ্চ।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক ও মো. শাহিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, নিম্নচাপের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে আরও কয়েকদিন বৃষ্টি চলবে। সমুদ্রবন্দরগুলোতে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল রয়েছে।
কোথায় কত বৃষ্টি
আবহাওয়া অফিসের তথ্যে জানা গেছে, একদিনে চাঁদপুরে বৃষ্টি হয়েছে ২৪২ মিলিমিটার, কুমিল্লায় ১৭৯, ফরিদপুরে ১৭১, চট্টগ্রামে ১৬৪, নারায়ণগঞ্জে ১৬১, মাদারীপুর, ফেনী ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ১৬০, বরিশালে ১৪১, রাঙামাটিতে ১৪০,কিশোরগঞ্জের নিকলিতে ১৩১,মানিকগঞ্জের আরিচায় ১১৯,বান্দরবানে ১১৩,বগুড়ায় ১১২ এবং নেত্রকোণায় ১০৪ মিলিমিটার। এছাড়াও দেশের আরও অনেক স্থানে কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাতকে “অতি ভারী” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেই হিসেবে দেশের অনেক এলাকাতেই অতি ভারী বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ বৃহস্পতিবার রাতেই বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে স্থলভাগে প্রবেশ করে। প্রথমে সাতক্ষীরা অঞ্চলে অবস্থান করে, পরে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে এটি টাঙ্গাইল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় পৌঁছায়। এর ফলে প্রবল বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার পাশাপাশি নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানিয়েছেন,নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। কারণ ২৪ মে থেকে প্রবেশ করা মৌসুমি বায়ু এতটাই সক্রিয় যে সেটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সুযোগ দেয়নি।
শুক্রবার:
ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ এলাকায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টিও হতে পারে।
শনিবার:
রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ স্থানে এবং অন্যান্য বিভাগে অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে।
রোববার:
চট্টগ্রাম ও সিলেটের অনেক জায়গায় এবং অন্যান্য বিভাগে কিছু কিছু জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে।
নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলায় দেখা দিয়েছে ব্যাপক জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের পানি। মঙ্গলবার সৃষ্ট লঘুচাপটি বৃহস্পতিবার গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। ভোর থেকে ভারী বৃষ্টির পাশাপাশি ঝোড়ো হাওয়ায় উত্তাল হয়ে ওঠে সাগর।
ফলে উপকূলের চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার বহু এলাকা ১ থেকে ৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়।