জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা আলোচনার উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা আলোচনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে এই আলোচনা শুরু হয়।
অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দ
দ্বিতীয় দফার আলোচনায় দেশের ৩০টি রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে রয়েছেন:
বিএনপি: স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ ও আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী: নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি): আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার
গণসংহতি আন্দোলন: প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি
এবি পার্টি: নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন আসাদুজ্জামান ফুয়াদ
এছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন,
"এ সুযোগ যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি। একটি চমৎকার 'জুলাই সনদ' তৈরি করা সম্ভব হবে বলে আমি আশাবাদী।"
তিনি আরও বলেন,
"আমরা সবাই আজ এখানে দেশ ও জাতির কল্যাণে একত্রিত হয়েছি। আশা করি, সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছে আমরা একটি অত্যন্ত সুন্দর জুলাই সনদ প্রস্তুত করতে পারবো।"
প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় যেসব বিষয়ে মতানৈক্য রয়ে গেছে, দ্বিতীয় দফায় সেগুলো ঘুচে যাবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আলোচনার লক্ষ্য ও কাঠামো
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মূল লক্ষ্য হলো—সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি সর্বজনগ্রাহ্য ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন করা। আলোচনায় বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে সংবিধান সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত প্রস্তাবসমূহ।
আলোচনা চলবে বিষয়ভিত্তিক পর্যায়ে—পবিত্র ঈদুল আজহার আগে একদিন ও ঈদের পরে ধারাবাহিকভাবে।
কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ জানান,
"কমিশনের মেয়াদ ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত। তার আগেই জুলাই সনদ ঘোষণা করার লক্ষ্যে আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি।"
প্রথম দফার আলোচনার সারসংক্ষেপ
প্রথম ধাপের আলোচনা হয় ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত। এতে ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ৪৫টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঐ দফায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের কাঠামো
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ ও মেয়াদ
জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের পদে থাকার মেয়াদ
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়া
পটভূমি
২০২৪ সালের অক্টোবরে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে ছয়টি সংস্কার কমিশন:
১. সংবিধান সংস্কার কমিশন
২. নির্বাচন কমিশন
৩. জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন
৪. বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন
৫. দুর্নীতি দমন কমিশন
৬. পুলিশ সংস্কার কমিশন
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসব কমিশন তাদের রিপোর্ট জমা দেয়। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের কাজ শুরু করে।
পুলিশ সংস্কার কমিশন বাদে বাকি পাঁচটি কমিশনের মোট ১৬৬টি প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হয়েছে:
সংবিধান: ৭০টি প্রস্তাব
নির্বাচনব্যবস্থা: ২৭টি
বিচার বিভাগ: ২৩টি
জনপ্রশাসন: ২৬টি
দুর্নীতি দমন কমিশন: ২০টি
উপসংহার
দ্বিতীয় দফার এই আলোচনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণে একটি সর্বজনস্বীকৃত জাতীয় সনদ তৈরির প্রত্যাশা নিয়ে দেশবাসীও অপেক্ষায় রয়েছে।