যারা গজওয়াতুল হিন্দের অপেক্ষায় আছে তারা কি ইতিহাসজ্ঞানহীন
গজওয়াতুল হিন্দ: অতীতের অমোঘ সত্য ও ভবিষ্যতের মিথ্যা কল্পনা
ইতিহাসের পাতায় কিছু শব্দ যেন কালের গর্ভে হারিয়ে যায়, আবার কিছু শব্দ রাজনীতি কিংবা কুসংস্কারের আড়ালে নতুন অর্থ খুঁজে পায়। "গজওয়াতুল হিন্দ" এমনই এক শব্দবন্ধ—যার প্রকৃত ইতিহাসকে ঢেকে ফেলা হয়েছে ভবিষ্যতের রহস্যময়তার চাদরে। কেউ কেউ একে কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ের যুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করেন, কিন্তু সত্যের আলোকে এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা—যা ৮ম শতাব্দীতেই মুহাম্মদ বিন কাসিমের বিজয়মুখর তরবারির ঝনঝনানিতে সম্পন্ন হয়েছে। আর এর পেছনে লুকিয়ে আছে রাজনৈতিক স্বার্থ ও হাদিসের অপব্যাখ্যা।
রাসূল (সা.)-এর নামে প্রচারিত একটি হাদিসে বলা হয়: "যারা গজওয়াতুল হিন্দে অংশ নেবে, আল্লাহ তাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন।"
"হিন্দ" শব্দের ঐতিহাসিক পরিচয়: সিন্ধুই হিন্দ
আরব ভূগোলবিদ ও ঐতিহাসিকরা "হিন্দ" বলতে মূলত সিন্ধু নদীর তীরবর্তী অঞ্চলকে বুঝিয়েছেন। বিখ্যাত মুসলিম পর্যটক আল-বেরুনি তাঁর গ্রন্থ "কিতাবুল হিন্দ"-এ লিখেছেন: "আরবরা সিন্ধু অঞ্চলকেই হিন্দ নামে ডাকে।"
৯৫ হিজরি (৭১২ খ্রিস্টাব্দ) সালে উমাইয়া সেনাপতি মুহাম্মদ বিন কাসিম সিন্ধু জয় করেন। এই অভিযানই ইসলামের ইতিহাসে প্রথম গজওয়াতুল হিন্দ।
হাদিসে উল্লিখিত "বিজয় ও শাসন" এর প্রতিফলন দেখা যায় পরবর্তী ৩০০ বছর ধরে সিন্ধুতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠায়। হিন্দ যদি সিন্ধু হয়, এবং সিন্ধু যদি ৮ম শতাব্দীতেই বিজিত হয়—তাহলে ভবিষ্যতের যুদ্ধের দাবি কীসের ভিত্তিতে ?
মুঘলরা ভারত শাসন করলেও ইসলাম প্রচারে তাদের ভূমিকা ছিল নিষ্প্রাণ। আকবরের "দীন-ই-ইলাহী" বা ঔরঙ্গজেবের রক্তক্ষয়ী নীতির পরও ইসলামের আলো ছড়িয়েছে না রাজপ্রাসাদ থেকে, বরং ছড়িয়েছে দরবেশদের খানকাহ থেকে।
শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবী (রহ.) তিনি কুরআনের তাফসির রচনা করে ইসলামী জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালিয়েছেন।
খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রহ.)তাঁর মাজার আজও ঐক্য ও মানবতার প্রতীক।
যদি গজওয়াতুল হিন্দের উদ্দেশ্যই ইসলামের বিজয় হয়—তাহলে সুফিরা তো সেটি অস্ত্র ছাড়াই করে গেছেন!
ইতিহাসের চাকা পেছনে ঘোরে না। মুহাম্মদ বিন কাসিমের তরবারি ইতিমধ্যেই রচনা করে গেছে গজওয়াতুল হিন্দের ইতিহাস। আর যারা ভবিষ্যতের যুদ্ধের গল্পে মোহগ্রস্ত,তারা যেন ভুলে যায় ইসলামের প্রকৃত বিজয় আসে জ্ঞানের আলো ও মানবতার সেবায়, রক্তপাত দিয়ে নয়। শাহ ওয়ালিউল্লাহর মত মনীষীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করাই হোক আমাদের গজওয়াতুল হিন্দ।
সেই যুদ্ধই সার্থক,যা মানুষের হৃদয় জয় করে।