বাংলাদেশে গ্যাস সংকট: শিল্প ও বাসাবাড়িতে বিপর্যয়
দেশে গ্যাস উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার ফলে এক অভূতপূর্ব জ্বালানি সংকট তৈরি হয়েছে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়িয়েও পরিস্থিতি সামলানো যাচ্ছে না। প্রতিদিনের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট হলেও সরবরাহ গড়ে ২৭০ কোটি ঘনফুটে নেমে এসেছে। ফলে শিল্প ও গৃহস্থালি উভয় খাতেই গ্যাস সংকট চরমে পৌঁছেছে।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে উৎপাদন কমে বর্তমানে দৈনিক ১৮৫ কোটি ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে, যেখানে একসময় তা ছিল ২৭০ কোটি ঘনফুট। বাকি সরবরাহ নির্ভর করছে আমদানি করা এলএনজির ওপর। সম্প্রতি আবহাওয়াজনিত কারণে এলএনজি জাহাজ থেকে গ্যাস খালাসে বিলম্ব হয়েছে, ফলে সরবরাহ আরও কমেছে।
এ সংকটের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে শিল্প খাতে। আশুলিয়ার লিটল স্টার স্পিনিং মিল, নান্নু স্পিনিং, এনজেড টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন কারখানায় চাপ কমে গেছে ১–২ পিএসআই-এ, যেখানে প্রয়োজন ছিল ১০ পিএসআই। এতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। শিল্পপতিরা বলছেন, বিনিয়োগ করে কারখানা সম্প্রসারণ করলেও গ্যাসের অভাবে উৎপাদন ক্ষমতার বড় অংশ বসিয়ে রাখতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ খাতেও সংকট তীব্র। গ্যাসের অভাবে কম খরচের গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রেখে, বেশি খরচের তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে হচ্ছে। এতে সরকারের ভর্তুকি বেড়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে শিল্প খাতে সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করা হলেও তা যথেষ্ট নয়।
গৃহস্থালি খাতের পরিস্থিতিও নাজুক। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, ভোর ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কিছু সময় গ্যাস পাওয়া গেলেও বাকি সময়ে চুলা জ্বালানো যাচ্ছে না। একাধিকবার তিতাস গ্যাসে অভিযোগ জানিয়েও কোনো সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, দেশীয় উৎপাদন কমায় চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। অতিরিক্ত এলএনজি আমদানি করা হলেও তা যথাসময়ে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব-এর জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, সরকারের জ্বালানি নিরাপত্তা কৌশলে কোনো পরিবর্তন আসেনি। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সংকট থাকবে।
দেশের অর্থনৈতিক উৎপাদন, রপ্তানি এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা এই সংকটে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ও অবকাঠামোগত বিনিয়োগ ছাড়া এই পরিস্থিতির সমাধান সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।