সর্বশেষ আন্তর্জাতিক রাজনীতি অর্থনীতি দেশ ভিডিওচিত্র ২

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাণবন্ত নগরী। এটি কেবল প্রশাসনিক কেন্দ্রই নয়, বরং অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতির মূল চালিকাশক্তি। প্রাচীন ইতিহাস থেকে শুরু করে আধুনিক নগরায়ণ পর্যন্ত, ঢাকা একটি বৈচিত্র্যময় নগরী হিসেবে গড়ে উঠেছে—যেখানে ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য, লোকজ সংস্কৃতি, আধুনিক প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি একসূত্রে মিশে গেছে।


ঢাকার ইতিহাস

ঢাকার ইতিহাস বহু পুরোনো ও সমৃদ্ধ। একাধিক ঐতিহাসিক সূত্র মতে, প্রায় এক হাজার বছর ধরে এ অঞ্চলটি জনবসতিপূর্ণ। ১৬০৮ সালে মোগল শাসক ইসলাম খান চিশতী ঢাকাকে বাংলার রাজধানী ঘোষণা করেন। তখন থেকেই এটি সমৃদ্ধ নগরী হিসেবে বিকাশ লাভ করে এবং বিশ্ববিখ্যাত মসলিন শিল্পের কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
ব্রিটিশ আমলেও ঢাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক শহর ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর এটি পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান নগরী হয় এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে।


ঢাকার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য

ঢাকা বাংলাদেশের সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু। এখানে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন, যেমন—লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, সাত গম্বুজ মসজিদ ও হোসেনী দালান ইত্যাদি।
ব্রিটিশ শাসনামলের কার্জন হল এবং পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাড়িগুলোও ঐতিহ্যের স্মারক।
ঢাকায় নববর্ষ, একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস নানা ধর্মীয় উৎসব যেমন ঈদ, শবে বরাত পূজা ও বড়দিন উদযাপিত হয় উৎসাহ-উদ্দীপনায়।


ঢাকার অর্থনীতি ও বাণিজ্য

ঢাকা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। প্রধান ব্যাংক, বীমা কোম্পানি, টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং তৈরি পোশাক শিল্প (RMG – Ready Made Garments) এর প্রধান কার্যালয়গুলো এখানেই অবস্থিত।
গুলশান, বনানী, মতিঝিল ও উত্তরা দেশের শীর্ষ বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত।


ঢাকার শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত

ঢাকায় অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান শিক্ষার মানকে সমৃদ্ধ করেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রযুক্তির বিকাশের ফলে স্টার্টআপ সংস্কৃতি এবং ডিজিটাল ইকোনমিও এখানে বিস্তার লাভ করেছে। বেশ কিছু সফটওয়্যার কোম্পানি ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ঢাকাকেন্দ্রিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে।


ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নগরায়ণ

ঢাকার জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরায়ণের চাপও বেড়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে্, বেশ কিছু ফ্লাইওভার এবং নতুন সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
যানজট ঢাকা শহরের অন্যতম বড় সমস্যা হলেও মেট্রোরেলের মাধ্যমে এর কিছুটা সমাধান আশা করা হচ্ছে। শহরের চলাচলের সাধারণ বাহনগুলোর মধ্যে রয়েছে বাস, রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি।


ঢাকার চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

যদিও ঢাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর, তবে এটি একাধিক সমস্যায় জর্জরিত। যানজট, জলাবদ্ধতা, বায়ু দূষণ, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ শহরটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
তবে ইতিমধ্যে আধুনিক নগরপরিকল্পনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, ইলেকট্রিক যানবাহনের প্রচলন, পরিবেশবান্ধব প্রকল্প গ্রহণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে নানা কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক সংস্থা, সাধারণ জনগন ও বাংলাদেশ সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঢাকা একটি উন্নত ও স্মার্ট নগরীতে রূপান্তরের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।


উপসংহার

ঢাকা কেবল বাংলাদেশের রাজধানী নয়—এটি দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং সম্ভাবনার প্রতিচ্ছবি। সুনির্বাচিত পরিকল্পনা, প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার ও টেকসই উন্নয়ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে ঢাকা একদিন সত্যিকারের বিশ্বমানের নগরীতে পরিণত হতে পারে। এটি এখন সময়ের দাবি।

আরও পড়ুন...

জনপ্রিয়

সর্বশেষ খবর