সর্বশেষ আন্তর্জাতিক রাজনীতি অর্থনীতি দেশ ভিডিওচিত্র ২

১৩ বছরের কারাবন্দী জীবনের অবসান ঘটিয়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফিরে এসেছেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম। সদ্য মুক্ত এই নেতা রাজধানীর মগবাজারে দলীয় দপ্তরে একটি পৃথক কক্ষে অবস্থান করছেন। যদিও দলীয় কোনো পদ বা দায়িত্ব এখনো তাঁর কাছে ন্যস্ত করা হয়নি।

২০১১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া আজহারুল ইসলাম চলতি বছরের ২৮ মে সুপ্রিম কোর্টের এক ঐতিহাসিক রায়ে খালাস পান। তার পরদিন তিনি মুক্তি লাভ করেন। তবে জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, কারাবন্দী অবস্থাতেই তিনি নিয়মিতভাবে দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন।

আমির হবেন

আজহারের মুক্তির পরপরই সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে তাঁর জামায়াতের শীর্ষ পদে আসীন হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়। অনেকে ধারণা করছেন, তিনি দলের পরবর্তী আমির হতে পারেন।

তবে জামায়াতের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনব্যবস্থার কথা তুলে ধরে দলটির একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা জানিয়েছেন, বর্তমানে এই সম্ভাবনা নেই। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, আমির নির্বাচিত হন রুকনদের সরাসরি ভোটে। বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান ২০২৩-২০২৫ মেয়াদে নির্বাচিত। তাঁর মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর। এরপর নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তিনজন সম্ভাব্য প্রার্থীকে মনোনীত করা হয় মজলিসে শূরার গোপন ভোটে। তাঁদের নাম রুকনদের কাছে পাঠানো হয়, এবং গোপন ব্যালটে রুকনরা একজনকে আমির হিসেবে বেছে নেন। আজহারুল ইসলাম যদি আমির হতে চান, তাঁকেও এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই আসতে হবে।

সম্ভাব্য পদ: নায়েবে আমির

দলীয় ঘরানা থেকে জানা গেছে, আজহারুল ইসলামের জন্য আপাতত কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির পদটি বিবেচনায় রয়েছে। বর্তমানে এ পদে রয়েছেন মুজিবুর রহমান, সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও আ ন ম শামছুল ইসলাম। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এই পদে সদস্যসংখ্যা সীমাবদ্ধ নয়— ‘প্রয়োজনীয় সংখ্যক’ উল্লেখ রয়েছে।

কারাগারে যাওয়ার আগে আজহার জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। তিনি কিছু সময়ের জন্য ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

  • শূরার সদস্য নির্বাচন: কারাগারেও প্রভাবশালী

আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি প্রশ্ন কারাগারে থেকেও কিভাবে তিনি বারবার মজলিসে শূরার সদস্য নির্বাচিত হন?

জামায়াতের সাংগঠনিক নেতারা জানান,গঠনতন্ত্র অনুযায়ী,প্রতিটি জেলার রুকনরা ভোটের মাধ্যমে শূরার সদস্য নির্বাচিত করেন। কোনো কোনো জেলায় সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী একাধিক প্রতিনিধি নির্বাচিত হন।

বর্তমানে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩০০। এর মধ্যে প্রথম ধাপে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন দুই শতাধিক সদস্য। এরপর ওই নির্বাচিত সদস্যদের গোপন ব্যালটে আরও ৩০ জন নেতা মনোনীত হন— যাঁরা কেন্দ্রীয় স্তরে দায়িত্ব পালন করেন। এ টি এম আজহারুল ইসলাম এই ৩০ জনের মধ্যেই নির্বাচিত হয়ে এসেছেন।

তৃতীয় ধাপে দলের আমির নিজের ক্ষমতাবলে পাঁচ ভাগের এক ভাগ নীতি অনুসরণ করে আরও কিছু সদস্য যুক্ত করেন শূরায়। এসব সদস্যের মধ্যে থাকেন পেশাজীবী ও বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন নেতারা, যাঁরা কখনো কখনো সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন না।

শপথ ও পরবর্তী পদক্ষেপ

দলের শূরার সদস্যদের শপথ নেওয়া বাধ্যতামূলক। কারাগারে থাকার কারণে আজহারুল ইসলাম এখনো শপথ নেননি। শপথ শেষে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পদে দায়িত্ব পেতে পারেন।

দলটির একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, আমির যদি চান, তাহলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ বা কর্মপরিষদের সঙ্গে পরামর্শ করে আজহারকে পদায়ন করতে পারেন। এর জন্য শূরার পূর্ণাঙ্গ সভার প্রয়োজন পড়বে না।

বর্তমানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ১৯ জন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ৫৫ জন এবং মজলিসে শূরার সদস্য সংখ্যা তিন শতাধিক।

দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেছেন, তিনি (আজহার) সদ্য মুক্তি পেয়েছেন। এখন চিকিৎসা ও বিশ্রামের বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তীতে আমিরে জামায়াত পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত নেবেন।

আরও পড়ুন...

জনপ্রিয়

সর্বশেষ খবর