নিঝুম জোয়ারে ভেসে বেড়ায় হরিণ, দ্বীপজুড়ে মানুষের দুর্ভোগ
জোয়ারের পানিতে রাস্তা-ঘাট সব ঢেকে গেছে, সেই পানির মধ্যেই নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি চিত্রল হরিণ। নিঝুম দ্বীপের এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের ভিডিও বৃহস্পতিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই তা জন্ম দেয় বিস্ময়ের। প্রশ্ন জাগে—কীভাবে এলো এই হরিণ? তার ভবিষ্যৎ কী হবে বাড়তে থাকা পানির তোড়ে?
ঘটনাটি ঘটেছে নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে। দ্বীপের এক বাসিন্দা সকালে ভিডিওটি ধারণ করে অনলাইনে প্রকাশ করেন। জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপের কারণে জোয়ারের পানি দ্বীপের ভেতরে প্রবেশ করেছে এবং নামার বাজার এলাকার অনেক সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। এই পানিতেই দেখা যায় হরিণটিকে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে।
স্থানীয় বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হরিণটি দীর্ঘদিন ধরে বন বিভাগের পরিচর্যায় রয়েছে। দ্বীপের বন বিভাগ কার্যালয়ের নিচেই তার অবস্থান। পর্যটকদের আকর্ষণ হিসেবেও পরিচিত এ প্রাণীটির সঙ্গে অনেকেই ছবি তুলেছেন।
নিঝুম দ্বীপের বন কর্মকর্তা মো. সোহাগ জানান, এই হরিণ জোয়ার-ভাটার সঙ্গে পরিচিত। পানি বাড়লে নিজে থেকেই উঁচু স্থানে চলে যায়, আবার পানি নামলে ফিরে আসে। আলাদা করে সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বুধবার রাত থেকে নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় টানা বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বইছে। স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট উঁচু জোয়ারের পানিতে জেলার উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নামার বাজার, বন্দরটিলা ও আশপাশের অনেক বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে।
দ্বীপবাসী মো. জামসেদ জানান, দুপুরে জোয়ারের পানিতে দ্বীপের বেশির ভাগ অংশই তলিয়ে গেছে। বাজার ও ঘরবাড়ি পানির নিচে। মানুষের ভোগান্তির সীমা নেই।
এদিকে হাতিয়ার নলচিরা ঘাট এলাকাও ডুবে গেছে জোয়ারে। স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ঘাট এলাকা এখন পানিতে ডুবে আছে, তবে এখনো বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
নৌ যোগাযোগ বন্ধ
উত্তাল সমুদ্রের কারণে গত দুই দিন ধরে হাতিয়ার সঙ্গে দেশের নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। চেয়ারম্যানঘাটে আটকে আছেন শতাধিক যাত্রী। বুড়িরচর এলাকার বাসিন্দা মো. খায়ের উদ্দিন জানান, জেলা শহর থেকে ঘাটে এসে দেখি কোনো ট্রলার ছাড়ছে না। বাধ্য হয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে রাত কাটিয়ে আবার এসেছি, কিন্তু একই অবস্থা।
হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলা উদ্দিন বলেন, আজ দুপুরে বাতাসের গতি বেড়েছে, থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। নিঝুম দ্বীপ, চর ঘাসিয়া ও মূল ভূখণ্ডের অনেক অংশ পানিতে ডুবে আছে। তবে কোথাও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।
মাইজদীতেও জলাবদ্ধতা
টানা বৃষ্টির কারণে জেলা শহর মাইজদীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ফ্ল্যাট রোড, হাকিম কোয়ার্টার, শিল্পকলা একাডেমির আশপাশের সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। শহরের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়েছে।
জেলা আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার বিকেল ৩টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত) ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। গভীর নিম্নচাপের কারণে বৃষ্টিপাত আরও বাড়তে পারে