উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে সমালোচনা: প্রেক্ষাপট, প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক
সাম্প্রতিক সময়গুলোতে বিভিন্ন সরকারি সিদ্ধান্তকে ঘিরে আইন উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা সংশ্লিষ্ট একটি ভুল সংবাদের সূত্র ধরে সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে কটূক্তির শিকার হতে হয়েছে। তিনি দাবি করেন, সংশ্লিষ্ট আইনটি প্রণয়ন করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, তবে তা জারি হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে—এবং এই কারণেই অন্যের কাজের জন্য তাঁকে দায়ী করা হচ্ছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের প্রকৃত দায়িত্ব নিয়ে ব্যাখ্যা
এক ফেসবুক পোস্টে আসিফ নজরুল স্পষ্ট করে বলেন:
“আইন মন্ত্রণালয়ের মূল কাজ হলো অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ বা আইন প্রণয়নের রূপ দিয়ে জারি করা, নিজে থেকে আইন তৈরি করা নয়।”
তিনি উদাহরণ দেন, যেমন—জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) সংক্রান্ত অধ্যাদেশ অর্থ মন্ত্রণালয় প্রস্তুত করলেও তা জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়।
এছাড়া সাম্প্রতিক সরকারি চাকরি (সংশোধনী) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর ক্ষেত্রেও তিনি উল্লেখ করেন, এটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব, অথচ আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জারি হওয়ায় এর দায়ভারও তাঁর উপর চাপানো হচ্ছে।
প্রশংসা ও সমালোচনার ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন
তিনি ব্যঙ্গাত্মকভাবে প্রশ্ন তোলেন:
“সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনের দায় যদি আমাকে দেওয়া হয়, তাহলে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার কৃতিত্বও আমাকে দেওয়া হোক।”
তিনি আবেদন জানান, যেন শুধু তাঁর মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত বিষয়েই তাঁকে দায়ী করা হয়—অন্যদের কাজের জন্য নয়।
সাম্প্রতিক বিতর্ক ও পদক্ষেপ
ক) সরকারি চাকরি সংশোধনী অধ্যাদেশ বিতর্ক
এই অধ্যাদেশ নিয়ে নানা মহলে উদ্বেগ দেখা দিলে আসিফ নজরুল স্বীকার করেন—
“এতে কিছু অপপ্রয়োগের সুযোগ রয়েছে।”
তিনি জানান, বিষয়টি পুনঃমূল্যায়নের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
খ) সেনানিবাসে বৈঠকের অভিযোগ
তাঁর বিরুদ্ধে একটি ভিত্তিহীন অভিযোগ ছড়ানো হয় যে, তিনি “আগস্টের ৩-৪ তারিখে সেনানিবাসে ভারতীয় গোয়েন্দাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।”
এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্য—
“এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার, যার কোনো সত্যতা নেই।”
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
ক) রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন:
“উপদেষ্টাদের দায়িত্ব এড়ানোর মানসিকতা গ্রহণযোগ্য নয়।”
আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের ব্যালান্সড অবস্থান নিয়ে বলেন:
“দায়িত্ব বণ্টনের নিয়ম মেনে সমালোচনা করা উচিত।”
খ) সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে #দায়িত্ব_বণ্টন হ্যাশট্যাগে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই প্রশাসনিক দায়বদ্ধতা ও সমালোচনার ন্যায্যতা নিয়ে বিতর্ক করছেন। কেউ কেউ বলছেন—সঠিক তথ্য যাচাই না করে সমালোচনা করা, একজন ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে।
ধর্মীয় ও নৈতিক আবেদন
সবশেষে অধ্যাপক আসিফ নজরুল একটি মানবিক ও নৈতিক বার্তা দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন:
“যারা নিন্দা করেন, তাদের বলি—কারও মুখ ম্লান করার আগে ভাবুন। আল্লাহ আছেন, সবাইকে জবাব দিতে হবে।”
এই বিতর্ক কেবল একটি অধ্যাদেশকে ঘিরে নয়, বরং এটি প্রশাসনিক জবাবদিহিতা, দফতরভিত্তিক দায়িত্ববণ্টন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারের ব্যাপারে একটি গভীর প্রশ্ন তোলে। সরকারের আইন ও সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও দায়ভার নির্ধারণের প্রশ্নও এই প্রসঙ্গে আলোচনায় এসেছে।