আকাঙ্ক্ষার কোটা অপূর্ণ: হজ নিবন্ধনে নজিরবিহীন স্থবিরতা ও গভীর আস্থার সংকট
পবিত্র মক্কা পানে উড়ে যাওয়ার হাজারো আকাঙ্ক্ষা এবার অপূর্ণই রয়ে গেল। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় হজ নিবন্ধনের চিত্র এবার সবচেয়ে বেশি হতাশাজনক। সৌদি আরবের সাথে চুক্তিকৃত মোট কোটার প্রায় অর্ধেক পূরণ না হওয়ায় এই স্থবিরতা দেশের হজ ব্যবস্থাপনার ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় রচনা করল।
পরিসংখ্যানের নীরব বেদনা:
আগামী বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন ধর্মপ্রাণ মুসলমানের হজে যাওয়ার কথা। অথচ, গত ২৭ জুলাই থেকে শুরু হওয়া নিবন্ধন কার্যক্রমে প্রায় তিন মাসে সরকারি ও বেসরকারি—দুই ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধিত হয়েছেন মাত্র ৭৩ হাজার ৪১৬ জন হজযাত্রী।
ঘাটতি: এর ফলে, দেশের মোট কোটার প্রায় ৪৩ শতাংশ, অর্থাৎ ৫৩ হাজার ৭৮২টি আসন খালি রয়ে গেছে।
সরকারি ব্যর্থতা: বিশেষত, মোট হজযাত্রীর জন্য বরাদ্দকৃত স্বল্প সরকারি কোটাটিও এবার পূরণ করা সম্ভব হয়নি, যা সরকারি ব্যবস্থাপনার প্রতি জনগণের আস্থাহীনতাকেই স্পষ্ট করে তোলে।
নিয়ত ভঙ্গের কারণ: আর্থিক চাপ ও প্রশাসনিক শৈথিল্য
ধর্ম মন্ত্রণালয় ১৬ অক্টোবর নিবন্ধনের শেষ সময় বেঁধে দেওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি। এই নজিরবিহীন ব্যর্থতার মূল কারণগুলি বিশ্লেষণ করলে দুটি প্রধান বিষয় সামনে আসে:
১. অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা: অর্থনৈতিক সংকটের এই সময়ে, হজে যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত বিমান ভাড়া এবং নিবন্ধনের বাড়তি আর্থিক চাপ অসংখ্য ইচ্ছুক মুসলমানের জন্য এক দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিয়ত করেও বহু মানুষ আর্থিক সক্ষমতার অভাবে পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ২. আস্থার অভাব: গুরুতর অভিযোগ উঠেছে যে, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তার যোগসাজশে সরকারি হজ ব্যবস্থাপনাকে বারবার বিতর্কিত করা হয়েছে। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার এই অভাব সরকারি ব্যবস্থার উপর সাধারণ হজযাত্রীদের আস্থা দিন দিন কমিয়ে দিয়েছে।
