ভাবনার ব্যবচ্ছেদ

হারীর নাবহান

১.

আলিশান রাজদরবার। সর্বত্র কর্মচারীদের ব্যস্ত পদচারণা। এমন সময় খুলে গেল শাহী মহলের মূল ফটক। নিয়ে আসা হলো পায়ে ডান্ডাবেরি পরিহিত এক কয়েদিকে। সুঠামদেহী, কেতাদুরস্ত—তাঁর বদন থেকে যেন নূরের দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ছে।

২.

খলিফা ওয়াসিক বিল্লাহ সিংহাসনে অস্থির চিত্তে বসে আছেন। এতদিন কি তিনি এত বড় ভুলের ওপর ছিলেন? খলকে কুরআন—এই বিশ্বাস কি তাহলে তার এতদিনের ভ্রম ছিল?

অল্পক্ষণ আগে আনা সেই কয়েদি শায়খের সঙ্গে খলিফার প্রধান উজির, কট্টর মুতাযিলা মতবাদের অনুসারী কাজী ইবনু আবিদ দুআদের বাহাসে ইবনু আবিদ দুআদের পরাজয়—খলিফার মনে গভীর তোলপাড় সৃষ্টি করল।

শায়খ বাহাসের আগে দুই রাকাত নামাজ পড়লেন। এরপর তিনি উজিরকে প্রশ্ন করলেন—

—আপনারা যে খলকে কুরআন (কুরআন সৃষ্টি—এই বিশ্বাস) প্রচার করছেন, তা কি নবী করিম ﷺ দিয়েছেন?

—না, উত্তর দিলেন উজির।

—এরপর আবু বকর (রা.)?

—না।

—ওমর (রা.)?

—না।

—উসমান (রা.)?

—না।

—আলী (রা.)?

—না।

—তাহলে তারা কি এ বিষয়ে জানতেন না?

—জানতেন, কিন্তু তারা চুপ ছিলেন।

শায়খ বললেন—

> তাহলে যে বিষয়টি তারা জানার পরও চুপ ছিলেন, তা কি আপনাদের কাছে এতটাই আবশ্যক হয়ে গেল যে এর জন্য ওলামাদের অকথ্য নির্যাতন, কারাগারে নিক্ষেপ, এমনকি হত্যা পর্যন্ত করতে আপনাদের দ্বিধা হয় না?

উজির নিশ্চুপ।

শায়খ আবার বললেন—

> আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

﴿ٱلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ﴾

(আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম)।

> কিন্তু কুরআনে তো কোথাও খলকে কুরআন এর দাওয়াত নেই। তাহলে কি এটি দ্বীনের অংশ নয়? নাকি দ্বীন অপূর্ণ রয়ে গেছে? আর আল্লাহ কি মিথ্যা বলেছেন?

উজির হতভম্ব হয়ে গেলেন, কোনো উত্তর দিতে পারলেন না।

শায়খ আবার বললেন—

> আল্লাহ তাআলা বলেন:

﴿يَـٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغْ مَآ أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُۥ﴾

(হে রাসুল! আপনার প্রভুর পক্ষ থেকে যা নাজিল হয়েছে, তা পৌঁছে দিন; যদি না দেন, তবে আপনি তাঁর রিসালাত পৌঁছে দেননি)।

> কিন্তু রাসুলুল্লাহ ﷺ কখনো খলকে কুরআন এর দাওয়াত দেননি—তাহলে কি তিনি তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব পূর্ণ করেননি?

উজির লজ্জায় লাল হয়ে গেলেন।

শায়খ এবার খলিফার দিকে তাকালেন। খলিফার অন্তরে উথালপাতাল ঢেউ; ললাটে চিন্তার গভীর রেখা। তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পারলেন—তাঁর ভাবনার ব্যবচ্ছেদ হলো।

৩.

শায়খের পায়ের বেড়ি খুলে দেওয়ার আদেশ হলো। এক সিপাহী এগিয়ে এসে বেড়ি খুলতে গেল। কিন্তু শায়খ বেড়ি নিজের দিকে টেনে নিলেন।

বললেন—

> “মৃত্যুর পর এই বেড়ি আমার

-যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

আরও পড়ুন...

0 মন্তব্য রয়েছে

একটি মন্তব্য করুন

চিন্তা করবেন না! আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না।

জনপ্রিয় ব্লগ

বিভাগ

সর্বশেষ ব্লগ