সংসারকথা-০২

অসময়ে সজিবের ঘুম এখন সবার চোখে পড়ার মতো তীব্র আকার নিয়েছে। দুচোখ টকটকে লাল, চাহনিতে অবসাদ। তার পুরো শরীর যেন ঝিমিয়ে আছে। আগের মতো তার গল্পে প্রাণ নেই, আড্ডায় মন বসে না। মনের সুখে গানও আর ধরে না। তার সকালগুলো এখন সন্ধ্যার মতো ফ্যাকাসে।

কয়েক মাস আগে সজিবের বিয়ে হয়েছে। তবে সেটা পারিবারিক বিয়ে নয়। সজিব মূলত আপাদমস্তক একজন সুফি মনের মানুষ। পড়াশোনায় যেমন কিংবদন্তি, তেমনি আদব-লেহাজেও অতুলনীয়। পারিবারিকভাবেই ধর্মচর্চায় তাদের অগ্রগতি ছিল। সজিবের ভয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভদ্র ছেলে-মেয়েরাও প্রেম লুকিয়ে রাখত। তার উপস্থিতিতে কেউ প্রেম, ভালোবাসা বা মেয়েদের নিয়ে রসিকতা করতে সাহস পেত না।

একদিন দেখা গেল, ফুলকি তার বারো নম্বর প্রেমিককে বিদায় দিতে গিয়ে সজিবের সামনে পড়ে গেল। সজিবকে দেখে সে একেবারে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে, লজ্জায় বড় বড় পা ফেলে তাড়াতাড়ি সরে যায়। দোতলা থেকে সজিবের বন্ধুরা দৃশ্যটা লক্ষ করছিল। কিন্তু সজিবের ব্যক্তিত্বের সামনে এসব ঘটনাই ছিল তুচ্ছ ব্যাপার।

ইদানীং হরিদাস স্যারকে প্রায়ই ইসলামের নবী ও কুরআনের কথা বলতে শোনা যায়। স্যার অত্যন্ত জ্ঞানী ও অমায়িক মানুষ। তাঁর ছেলে সঞ্জয় কুমারও তাই। সঞ্জয় মাঝে মাঝে সজিবের সাথে গল্প করতে করতে মসজিদ পর্যন্ত হেঁটে যায়। দু’জনেই ত্রিপলির একই ব্যাচের ছাত্র। শুরুতে সম্পর্কটা খুব গভীর ছিল না, কিন্তু দিন দিন সঞ্জয়ের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা সজিবের প্রতি বেড়েই চলেছে।

হরিদাস স্যার ত্রিপলির ডিপার্টমেন্টাল হেড। তাঁর কাছে সজিব এক আদর্শবান ছাত্র। তিনি প্রায়ই ছেলেকে বলেন সজিবের আদব ও চরিত্রের কথা। সঞ্জয়ও ঢাকার এক নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে সৈয়দপুরে এসেছে। আসলে সজিবের মতো ব্যাচমেট পাওয়াই তার বড় প্রেরণা ছিল। অবশ্য, বর্তমান সময়ে কিছু শিক্ষার্থীর অশালীনতা, অভদ্রতা ইত্যাদি গৌণ কারণও ছিল এ সিদ্ধান্তের পেছনে।

হরিদাস স্যার প্রায়ই বাসায় সজিবের প্রশংসা করেন। তাঁর স্ত্রী ঐন্দ্রিলা কাকিও মাঝে মাঝে সজিবের জন্য প্রসাদ পাঠান। আদব-লেহাজে যেমন নিখুঁত, তেমনি মেধায়ও অনন্য। চতুর্মুখী প্রতিভার এক উজ্জ্বল প্রতীক সজিব। বাবা-মায়ের প্রতি ভক্তি তাঁর চরিত্রে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

সঞ্জয় মনে মনে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে— এমন একজন মানুষের ব্যাচমেট হওয়া সহজ নয়। তার নিজের ফলও ভালো— সিজিপিএ থাকে ৩.৮ থেকে ৩.৯-এর মধ্যে। আসলে সহজেই ৪.০০ হতো, কিন্তু ত্রিপলিতে এমন নম্বর পেলে অন্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারত। খাতা দেখে তার নম্বর কাটা প্রায় অসম্ভব; কেবল ফর্মালিটির খাতিরে সামান্য কমানো হয়।

তবে এসব বিষয়ে সজিবের কোনো মাথাব্যথা নেই। তার চিন্তা একটাই— সিনিয়র, জুনিয়র কিংবা অন্য ডিপার্টমেন্ট— সবার সমস্যা সমাধান করা। মাঝে মাঝে কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্রদের প্রজেক্ট তৈরি করতে করতে রাত কেটে যায়। অথচ সকালে নিজের পরীক্ষার চিন্তাও তাঁর মাথায় আসে না।

আরও পড়ুন...

0 মন্তব্য রয়েছে

একটি মন্তব্য করুন

চিন্তা করবেন না! আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না।

জনপ্রিয় ব্লগ

বিভাগ

সর্বশেষ ব্লগ